এইদিন ওয়েবডেস্ক,জাবুল,২২ মে : দেশে চরম খাদ্যসঙ্কট, স্বাস্থ্য পরিষেবা ভেঙে পড়েছে, ধুঁকতে থাকা ব্যাবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলি একের পর এক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে,দ্রুত হারে বাড়ছে বেকারত্ব । বিগত দু’বছর তালিবান জমানায় চরম মানবিক সংকটে ভুগছে আফগান জনতা । অথচ তার মাঝেই তালিবানের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা মহম্মদ ওমর মুজাহিদের কবরের জন্য প্রতি মাসে ৩ মিলিয়ন আফগান বরাদ্দ করেছে ওই সন্ত্রাসবাদী সংগঠনটি । এনিয়ে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে সাধারণ আফগান জনতার মধ্যে ।
আফগানিস্তানের জাবুলে রয়েছে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন তালিবানের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা মহম্মদ ওমর মুজাহিদের কবরটি । তালিবান নেতা মোল্লা হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা তার দলের প্রতিষ্ঠাতার কবরের রক্ষনাবেক্ষণের জন্য বাজাটে মাসে ৩ মিলিয়ন আফগানি বরাদ্দ করেছেন বলে খবর ।
মোল্লা মহম্মাদ উমর মুজাহিদের মৃত্যুর তারিখ এবং স্থানের বিভিন্ন জন বিভিন্ন দাবি করে । তালিবান গত বছর জাবুলের ছায়া জেলায় তার কবরের অস্তিত্ব দাবি করেছিল । তালিবানের সমালোচকদের মতে, মোল্লা ওমর মারা পাকিস্তানে গিয়েছিল এবং তাকে সেখানেই সমাহিত করা হয়েছিল, তবে তার মৃতদেহ পরে জাবুলে স্থানান্তরিত হতেও পারে বলে মন্তব্য করেছেন তারা ।
জাবুলের তালিবানের একটি সূত্র সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছে,মোল্লা ওমরের কবর দেখতে যাওয়া লোকজনদের জন্য দুপুরের খাবার ও প্রাতঃরাশ, প্রতিদিনের চা এবং অন্যান্য সুবিধার ব্যবস্থা করেছে । প্রতি সপ্তাহে ২,০০০ এরও বেশি লোক এই কবরটি দেখতে আসে এবং তালিবানরা তাদের খাতির করে মাংস-ভাত খাওয়ায় । সূত্রটি জানিয়েছে যে মোল্লা ওমরের কবরের খরচ তালিবান সরকারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দেয় । উল্লেখিত মন্ত্রণালয়টি মোল্লা ওমরের ছেলে মহম্মদ ইয়াকুব মুজাহিদের নিয়ন্ত্রণে ।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছে,মূলত অর্থনৈতিক ও মানবিক সংকটে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনই মোল্লা উমরের কবরে যায় । তাদের মূল উদ্দেশ্য লঙ্গর খাওয়া । জাবুলের বাসিন্দারা বলছেন, মোল্লা উমরের কবরের জন্য ব্যয় না করে ওই অর্থ যদি কোনো প্রকল্পে ব্যয় করা হত তাহলে মানুষের কাজের ব্যবস্থা হত । জাবুলের বাসিন্দা সাইয়েদ আল-রহমান বলেছেন,’তালিবানরা প্রজাতন্ত্রী ব্যবস্থাকে অপ্রয়োজনীয় খরচের জন্য অভিযুক্ত করত, কিন্তু অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেও তারাও তাই করছে । মানুষ ক্ষুধায় মারা যাচ্ছে, তাদের কোন কাজ নেই,অথচ তালিবানরা তাদের করের টাকা তাদের নেতার কবরে ব্যয় করছে ।’
জাবুলের আরেক বাসিন্দা দোস্ত মহম্মদ বলেন,’এই অর্থ জাবুলে সরকারি ও নির্মাণ প্রকল্পে ব্যয় করা উচিত । অনেক জেলায় রাস্তা বেহাল, স্কুল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জন্য ভবনের অভাব এবং অন্যান্য সমস্যাও রয়েছে । অথচ সেসবের দিকে নজর না দিয়ে মোল্লা উমরের কবরের লোকদের মনোযোগ আকর্ষণ করার জন্য বিপুল অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে ।’
মোল্লা মোহাম্মদ ওমর ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তানে তালিবান সরকারের কার্যত প্রধান ছিলেন । ২০১৩ সালের ২৩ এপ্রিল তার মৃত্যু হয় । তবে কোথায় তাকে কবরস্থ করা হয়েছিল তা নিয়ে ধন্দ্ব আছে । কয়েকজন তালিবান নেতা দাবি করেছিল যে মোল্লা ওমরকে জাবুলের ছায়া জেলায় সমাহিত করা হয়েছিল । তারা জাবুলের কেন্দ্রস্থল কালাত শহর থেকে ৯৫ কিলোমিটার দূরে একটা কবর দেখিয়ে জানায় সেটাই নাকি মোল্লা ওমরের কবর । তখন তারা বলেছিল যে মানুষের সহজে চলাচলের জন্য এখানে একটি দীর্ঘ রাস্তা তৈরি করা হবে। তালেবান কর্তৃপক্ষ পরে রাস্তাটি নির্মানের কথা ঘোষণা করে । তালিবান তাদের প্রাক্তন নেতা মোল্লা ওমরের কবরের ব্যয় নিয়ে জনসাধারণের ক্ষোভের বিষয়ে কিছু জানায়নি ।।