শৌনক উবাচ
গীতায়াশ্চৈব মাহাত্মং যথাবৎ সূত মে বদ ।
পুরা নারায়ণক্ষেত্রে ব্যাসেন মুনিনোদিতম্ ৷৷ ১ ৷৷
শৌনক ঋষি বললেন, হে সূত, পুরাকালে নারায়ণ ক্ষেত্রে মহামুনি ব্যাস-কথিত গীতামাহাত্ম্য আমাকে বলুন।
সূত উবাচ
ভদ্রং ভগবতা পৃষ্টং যদ্ধি গুপ্ততমং পরম্।
শক্যতে কেন তদ্বত্তুং গীতামাহাত্ম্যমুত্তমম্ ৷৷ ২ ৷
সূত গোস্বামী বললেন, হে ভগবন্, আপনি উত্তম জিজ্ঞাসা করেছেন। যা পরম গোপনীয়তম সেই উত্তম গীতামাহাত্ম্য কে বলতে সমর্থ ?
কৃষ্ণো জানাতি বৈ সম্যক্ কিঞ্চিৎ কুন্তীসুতঃ ফলম্।
ব্যাসো বা ব্যাসপুত্রো যা যাজ্ঞবন্ধ্যোঽথমৈথিলঃ ৷৷ ৩
শ্রীকৃষ্ণই তা সম্যকভাবে জানেন। কুন্তীপুত্র অর্জুন তার কিঞ্চিৎ ফল জানেন। আর ব্যাসদেব, শুকদেব, যাজ্ঞবল্ক্য ও রাজর্ষি জনক তাঁরাও কিছু কিছু জ্ঞাত আছেন।
অন্যে শ্রবণতঃ শ্রুত্বা লেশং সঙ্কীর্তয়ন্তি চ।
তস্মাৎ কিঞ্চিদ্বদাম্যত্র ব্যাসস্যাস্যান্ময়া শ্রুতম্ ।। ৪ ॥
এছাড়া অন্যেরা পরম্পরা ধারায় শ্রবণ করে তার লেশমাত্র কীর্তন করে থাকেন। আমি ব্যাসদেবের কাছে যেভাবে শ্রবণ করেছি তারই কিঞ্চিৎ এখানে বলছি।
সর্বোপনিষদো গাবো দোগ্ধা গোপালনন্দনঃ ।
পার্থো বৎসঃ সুধীর্ভোক্তা দুগ্ধং গীতামৃতং মহৎ || ৫ ||
সমস্ত উপনিষদ গাভীর মতো। গোপালনন্দন শ্রীকৃষ্ণ তাদের দোহন কর্তা। পৃথাপুত্ৰ অর্জুন গো বৎসের মতো। এই গীতামৃত পরম উৎকৃষ্ট দুধের মতো এবং সুখী ব্যক্তিরা এর আস্বাদনকারী ।
সারথ্যমর্জুনস্যাদৌ কুর্বন্ গীতামৃতং দদৌ ।
লোকত্রয়োপকারায় তস্মৈ কৃষ্ণাত্মনে নমঃ ৷৷ ৬ ৷৷
যে কৃষ্ণ অর্জুনের সারথ্য স্বীকার করে ত্রিলোকের উপকারের জন্যে এই গীতামৃত প্রদান করেছেন, আমি প্রথমেই সেই শ্রীকৃষ্ণকে প্রণাম জানাই।
সংসারসাগরং ঘোরং ত্যক্ত্বমিচ্ছতি যো নরঃ।
গীতানাবং সমাসাদ্য পারং যাতি সুখেন সঃ । ৭॥
যে ব্যক্তি ঘোর সংসার-সাগর উত্তীর্ণ হতে চান, তিনি গীতারূপ নৌকার আশ্রয়ে সুখেই পার হতে পারেন।
গীতাজ্ঞানং শ্রুতং নৈব সদৈবাভ্যাসযোগতঃ ।
মোক্ষমিচ্ছতি মূঢ়াত্মা যাতি বালকহাস্যতাম্ ৷৷ ৮ ৷৷
গীতাজ্ঞান শ্রবণ না করেই যে মূঢ়াত্মা সর্বদা অভ্যাস যোগে মোক্ষলাভ করতে চায়,তাকে বালকেরাও উপহাস করে।
যে শৃণ্বস্তি পঠন্ত্যেব গীতাশাস্ত্রমহর্নিশম্ ।
ন তে বৈ মানুষা জ্ঞেয়া দেবরূপা ন সংশয়ঃ ।। ৯ ৷৷
যাঁরা অহর্নিশ গীতাশাস্ত্র শ্রবণ বা পাঠ করেন, তাঁরা কখনই সাধারণ মানুষ নন, তাঁরা নিশ্চিত দেবতুল্য, এতে সংশয় নেই।
গীতাজ্ঞানেন সম্বোধং কৃষ্ণঃ প্রাহার্জুনায় বৈ ।
ভক্তিতত্ত্বং পরং তত্র সগুণং বাথ নির্গুণম্ ৷৷ ১০ ৷৷
ভগবান কৃষ্ণচন্দ্র গীতাজ্ঞান দ্বারা অর্জুনের সম্বোধনার্থ সগুণ ও নির্গুণ পরম ভক্তিতত্ত্ব কীর্তন করেছিলেন।
সোপানাষ্টাদশৈরেবং ভুক্তিমুক্তিসমুচ্ছিতৈঃ।
ক্রমশো চিত্তশুদ্ধিঃ স্যাৎ প্রেমভক্ত্যাদি কৰ্মসু ৷৷ ১১ ৷৷
এভাবে ভোগ ও মোক্ষ নিরাকৃত অষ্টাদশ অধ্যায় সোপান বিশিষ্ট গীতাজ্ঞান দ্বারা চিত্ত শুদ্ধ হয় এবং ক্রমশ প্রেমভক্তিতে অধিকার জন্মে।
সাধোগীতাস্তুসি স্নানং সংসারমলনাশনম্।
শ্রদ্ধাহীনস্য তৎকার্যং হস্তিস্নানং বৃথৈব তৎ ৷৷ ১২ ৷৷
এই গীতারূপ সলিলে স্নান করে সাধু ব্যক্তিরা সংসার মল মুক্ত হন । কিন্তু শ্রদ্ধাহীন জনের সেই স্নান হস্তুস্নানের মতো বৃথা হয়ে থাকে ।
★ ভক্তিবেদান্ত বুক ট্রাস্ট,ইসকন মায়াপুর ধাম থেকে মুদ্রিত শ্রীমদ্ভগবদগীতা মাহাত্ম্য পুস্তক থেকে সংগৃহীত ।