পিতাসি লোকস্য চরাচরস্য
ত্বমস্য পূজ্যশ্চ গুরুগরীয়ান্।
ন ত্বৎসমোহস্ত্যভ্যধিকঃ কুতোহন্যো
লোকত্রয়েহপ্যপ্রতিমপ্রভাব ।। ৪৩ ।।
হে অমিত প্রভাব! তুমি এই চরাচর জগতের পিতা, পূজ্য, গুরু ও গুরুশ্রেষ্ঠ। ত্রিভুবনে তোমার সমান আর কেউ নেই, অতএব তোমার থেকে শ্রেষ্ঠ অন্য কে হতে পারে?
তস্মাৎ প্রণম্য প্রণিধায় কায়ং
প্রসাদয়ে ত্বামহমীশমীড্যম্।
পিতেব পুত্রস্য সখেব সখ্যুঃ
প্রিয়ঃ প্রিয়ায়াইসি দেব সোঢ়ুম্ ।। ৪৪ ৷৷
তুমি সমস্ত জীবের পরমপূজ্য পরমেশ্বর ভগবান। তাই, আমি তোমাকে দণ্ডবৎ প্রণাম করে তোমার কৃপাভিক্ষা করছি। হে দেব! পিতা যেমন পুত্রের, সখা যেমন সখার, প্রেমিক যেমন প্রিয়ার অপরাধ ক্ষমা করেন, তুমিও সেভাবেই আমার অপরাধ ক্ষমা করতে সমর্থ।
অদৃষ্টপূর্বং হৃষিতোহস্মি দৃষ্টা
ভয়েন চ প্রব্যথিতং মনো মে।
তদেব মে দর্শয় দেব রূপং
প্রসীদ দেবেশ জগন্নিবাস ।। ৪৫ ।।
তোমার এই বিশ্বরূপ, যা পূর্বে কখনও দেখিনি, তা দর্শন করে আমি আনন্দিত হয়েছি, কিন্তু সেই সঙ্গে আমার মন ভয়ে ব্যথিত হয়েছে। তাই, হে দেবেশ! হে জগন্নিবাস! আমার প্রতি প্রসন্ন হও এবং পুনরায় তোমার সেই রূপই আমাকে দেখাও।
কিরীটিনং গদিনং চক্রহস্তম্
ইচ্ছামি ত্বাং দ্রষ্টুমহং তথৈব।
তেনৈব রূপেণ চতুর্ভুজেন
সহস্রবাহো ভব বিশ্বমূর্তে ।। ৪৬।।
হে বিশ্বমূর্তি! হে সহস্রবাহো! আমি তোমাকে পূর্ববৎ সেই কিরীট, গদা ও চক্রধারীরূপে দেখতে ইচ্ছা করি। এখন তুমি তোমার সেই চতুর্ভুজ রূপ ধারণ কর।
শ্রীভগবানুবাচ
ময়া প্রসন্নেন তবার্জুনেদং
রূপং পরং দর্শিতমাত্মযোগাৎ।
তেজোময়ং বিশ্বমনন্তমাদ্যং
যন্মে ত্বদন্যেন ন দৃষ্টপূর্বম্ ।। ৪৭ ।।
শ্রীভগবান বললেন- হে অর্জুন! আমি প্রসন্ন হয়ে তোমাকে আমার অন্তরঙ্গা শক্তি দ্বারা জড় জগতের অন্তর্গত এই শ্রেষ্ঠ রূপ দেখালাম। তুমি ছাড়া পূর্বে আর কেউই এই অনন্ত, আদি ও তেজোময় রূপ দেখেনি।
ন বেদযজ্ঞাধ্যয়নৈর্ন
দানৈ- ন চ ক্রিয়াভির্ন তপোভিরুগ্রৈঃ।
এবংরূপঃ শক্য অহং নৃলোকে 1186
দ্রষ্টুং ত্বদন্যেন কুরুপ্রবীর ।। ৪৮ ।।
হে কুরুশ্রেষ্ঠ! বেদ অধ্যয়ন, যজ্ঞ, দান, পুণ্যকর্ম ও কঠোর তপস্যার দ্বারা এই জড় জগতে তুমি ছাড়া অন্য কেউ আমার এই বিশ্ব রূপ দর্শন করতে সমর্থ নয়।
মা তে ব্যথা মা চ বিমূঢ়ভাবো
দৃষ্টা রূপং ঘোরমীদৃঙ্ মমেদম্।
ব্যপেতভীঃ প্রীতমনাঃ পুনস্ত্বং
তদেব মে রূপমিদং প্রপশ্য ।। ৪৯ ।।
আমার এই প্রকার ভয়ঙ্কর বিশ্বরূপ দেখে তুমি ব্যথিত ও মোহাচ্ছন্ন হয়ো না। সমস্ত ভয় থেকে মুক্ত হয়ে এবং প্রসন্ন চিত্তে তুমি পুনরায় আমার এই চতুর্ভুজ রূপ দর্শন কর।
সঞ্জয় উবাচ
ইত্যর্জুনং বাসুদেবস্তথোক্ত্বা
স্বকং রূপং দর্শয়ামাস ভূয়ঃ।
আশ্বাসয়ামাস চ ভীতমেনং
ভূত্বা পুনঃ সৌম্যবপূর্মহাত্মা ।। ৫০।।
সঞ্জয় ধৃতরাষ্ট্রকে বললেন মহাত্মা বাসুদেব অর্জুনকে এভাবেই বলে তাঁর চতুর্ভুজ রূপ দেখালেন এবং পুনরায় দ্বিভুজ সৌম্যমূর্তি ধারণ করে ভীত অর্জুনকে আশ্বস্ত করলেন।
অর্জুন উবাচ
দৃষ্টেদং মানুষং রূপং তব সৌম্যং জনার্দন।
ইদানীমস্মি সংবৃত্তঃ সচেতাঃ প্রকৃতিং গতঃ ।। ৫১ ।।
অর্জুন বললেন- হে জনার্দন! তোমার এই সৌম্য মানুষমূর্তি দর্শন করে এখন আমার চিত্ত স্থির হল এবং আমি প্রকৃতিস্থ হলাম।
শ্রীভগবানুবাচ
সুদুর্দর্শমিদং রূপং দৃষ্টবানসি যন্মম।
দেবা অপ্যস্য রূপস্য নিত্যং দর্শনকাঙিক্ষণঃ ।। ৫২ ।।
পরমেশ্বর ভগবান বললেন- তুমি আমার যে রূপ এখন দেখছ তা অত্যন্ত দুর্লভ দর্শন। দেবতারাও এই রূপের সর্বদা দর্শনাকাঙ্ক্ষী।
নাহং বেদৈর্ন তপসা ন দানেন ন চেজ্যয়া।
শক্য এবংবিধো দ্রষ্টুং দৃষ্টবানসি মাং যথা ।। ৫৩ ।।
তুমি তোমার দিব্য চক্ষুর দ্বারা আমার যেরূপ দর্শন করছ, সেই প্রকার আমাকে বেদ অধ্যয়ন, তপস্যা, দান ও পূজার দ্বারা কেউই দর্শন করতে সমর্থ হয় না।
ভক্ত্যা ত্বনন্যয়া শক্য অহমেবংবিধোহর্জুন।
জ্ঞাতুং দ্রষ্টুং চ তত্ত্বেন প্রবেষ্টুং চ পরন্তপ ।। ৫৪ ।।
হে অর্জুন! হে পরন্তপ! অনন্য ভক্তির দ্বারাই কিন্তু এই প্রকার আমাকে তত্ত্বত জানতে, প্রত্যক্ষ করতে এবং আমার চিন্ময় ধামে প্রবেশ করতে সমর্থ হয়।
মৎকর্মকৃন্মৎপরমো মদ্ভক্তঃ সঙ্গবর্জিতঃ।
নির্বৈরঃ সর্বভূতেষু যঃ স মামেতি পাণ্ডব ।। ৫৫ ।।
হে অর্জুন! যিনি আমার অকৈতব সেবা করেন, আমার প্রতি নিষ্ঠাপরায়ণ, আমার ভক্ত, জড় বিষয়ে আসক্তি রহিত এবং সমস্ত প্রাণীর প্রতি শত্রুভাব রহিত, তিনিই আমাকে লাভ করেন।