এইদিন ওয়েবডেস্ক,মথুরা,০৩ মার্চ : ইসলামি হানাদাররা ৩ বার ভেঙেছিল উত্তর প্রদেশের মথুরার শ্রীকৃষ্ণর জন্মভূমিতে নির্মিত মন্দির । কিন্তু যতবারই ভাঙা হয়, ততবারই পূণঃনির্মিত করা হয় মন্দিরটি । তৎকালীন হিন্দু রাজারা মন্দিরটি ৪ বার নির্মাণ করেছিল । কিন্তু হিন্দুরা সবচেয়ে বিশ্বাসঘাতকতার শিকার হয় স্বাধীন ভারতে কংগ্রেস সরকারের জমানায় ।
গুজরাটের সোমনাথ মন্দিরের মতো শ্রী কৃষ্ণ জন্মভূমি মন্দিরকেও মুসলিম হানাদার মাহমুদ গজনভি লুণ্ঠন ও ধ্বংস করেছিল । মাহমুদ গজনবী ১০১৭ সালে মথুরা আক্রমণ করে এবং ২১ দিন ধরে মথুরায় লুটপাট চালায় । ১০১৭ সালে মাহমুদ গজনভি মথুরার মন্দিরগুলি ভেঙে দেয় । তার প্রায় ১০০ বছর পর ১১৫০ সালে, শ্রী কৃষ্ণের জন্মস্থানে আবার একটি মন্দির নির্মাণ করা হয়েছিল, কিন্তু কুতুবুদ্দিন আইবক এবং ফিরোজ তুঘলকের শাসনকালে এটি আবার ভেঙে ফেলা হয়েছিল ।
আজকের যে স্থানে কৃষ্ণের জন্মস্থান, সেখানে পাঁচ হাজার বছর আগে মল্লপুর এলাকার কাটরা কেশব দেবের রাজা কংসের কারাগার ছিল। এই কারাগারে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্ম হয়েছিল। কাটরা কেশব দেবকে কৃষ্ণের জন্মস্থান বলে মনে করা হয়। ঐতিহাসিকদের মতে, সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত বিক্রমাদিত্য কর্তৃক নির্মিত এই বিশাল মন্দিরটি লুট করার পর ১০১৭ খ্রিস্টাব্দে মাহমুদ গজনভি আক্রমণ করে ধ্বংস করেছিলেন।
কৃষ্ণের প্রপৌত্র বজ্রনাভের সময় প্রথম মন্দির নির্মাণ হয়েছিল :
অল ইন্ডিয়া রেডিও মথুরার প্রাক্তন বর্ষীয়ান ঘোষক পণ্ডিত রাধা বিহারী গোস্বামী জানান, কারাগারের কাছেই ভগবান কৃষ্ণের প্রপৌত্র বজ্রনাভ প্রথম তাঁর পারিবারিক দেবতার স্মরণে একটি মন্দির তৈরি করেছিলেন। এখানকার শিলালিপিগুলো ব্রাহ্মী লিপিতে লেখা বলে লোকে বিশ্বাস করেন । এ থেকে বোঝা যায় যে শোদাসের রাজত্বকালে বাসু নামে এক ব্যক্তি শ্রীকৃষ্ণের জন্মস্থানে একটি মন্দির,খিলান ও বেদিকা নির্মাণ করেছিলেন।
সম্রাট বিক্রমাদিত্যের আমলে নির্মিত হয় দ্বিতীয় মন্দির:
দ্বিতীয় মন্দিরটি ৪০০ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট বিক্রমাদিত্যের শাসনকালে নির্মিত হয়েছিল। এটি একটি বিশাল মন্দির ছিল। সে সময় মথুরা সংস্কৃতি ও শিল্পের প্রধান কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।
বিজয়পাল দেবের আমলে নির্মিত হয় তৃতীয় মন্দির ।
তৃতীয় বড় মন্দির তৈরি হলে সিকান্দার লোদি তা ভেঙে দেন। খননে প্রাপ্ত একটি সংস্কৃত শিলালিপি থেকে জানা যায় যে ১১৫০ খ্রিস্টাব্দে রাজা বিজয়পাল দেবের রাজত্বকালে জজ্জ নামে এক ব্যক্তি শ্রী কৃষ্ণের জন্মস্থানে একটি নতুন মন্দির তৈরি করেছিলেন। তখন তিনি একটি বিশাল মন্দির নির্মাণ করেছিলেন। ১৬ শতকের গোড়ার দিকে সিকান্দার লোদির শাসনকালে এই মন্দিরটি ধ্বংস করে দেওয়া হয় ।
এরপর প্রায় ১২৫ বছর পর জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালে ওড়ছার রাজা বীর সিং দেব বুন্দেলা একই স্থানে চতুর্থবারের মতো মন্দির নির্মাণ করেন। মন্দিরের জাঁকজমক দেখে ঈর্ষান্বিত হয়ে আওরঙ্গজেব ১৬৬৯ খ্রিস্টাব্দে এটি ভেঙে ফেলেন এবং এর একটি অংশে ইদগাহ নির্মাণ করেন। এখানে পাওয়া ধ্বংসাবশেষ থেকে বোঝা যায় যে এই মন্দিরের চারপাশে একটি উঁচু প্রাচীরের দুর্গ ছিল।
জুগলকিশোর বিড়লার উদ্যোগে শ্রী কৃষ্ণ জন্মভূমি ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠা :
১৮১৫ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ শাসনকালে নিলামের সময় বেনারসের রাজা পত্নীমাল এই জায়গাটি কিনে নেন। পন্ডিত মদন মোহন মালব্য যখন ১৯৪০ সালে এখানে এসেছিলেন, তখন তিনি শ্রী কৃষ্ণের জন্মস্থানের দুর্দশা দেখে বেশ হতাশ হয়েছিলেন। তিন বছর পর,১৯৪৩ সালে, শিল্পপতি জুগলকিশোর বিড়লা মথুরায় আসেন এবং তিনিও শ্রীকৃষ্ণের জন্মস্থানের দুর্দশা দেখে খুব দুঃখ পেয়েছিলেন। এই সময়ে মালভিয়া শ্রীকৃষ্ণের জন্মস্থান পুনরুজ্জীবনের বিষয়ে বিড়লাকে একটি চিঠি লেখেন। মালভিয়ার ইচ্ছাকে সম্মান করে, বিড়লা ১৯৪৪ সালের ৭ ফেব্রুয়ারী রাজা পাটনিমালের তৎকালীন উত্তরাধিকারীদের কাছ থেকে কাটরা কেশব দেবকে কিনেছিলেন । বিড়লা ১৯৫১ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী শ্রী কৃষ্ণ জন্মভূমি ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠা করেন।
তবে হিন্দুদের সঙ্গে সব থেকে বড় বিশ্বাসঘাতকতা হয়েছিল ১৯৬৮ সালের স্বাধীন ভারতের কংগ্রেসের রাজত্বকালে । কংগ্রেস এমন একটা চুক্তি করেছিল যে যা নিয়ে হিন্দু ও মুসলিম দু’পক্ষের মধ্যে আজ রবিবার চলছে । ১৯৫৩ সালে, যখন মন্দিরের ট্রাস্ট নির্মাণ শুরু করে, যা ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত অব্যাহত ছিল, ট্রাস্ট দান করা অর্থ দিয়ে এই নির্মাণটি সম্পন্ন করে। এর পরে একটি নতুন জাল সংগঠন তৈরি হয়, যার নাম ছিল ‘শ্রী কৃষ্ণ জন্মস্থান সেবা সংস্থা’। এই ভুয়া সংগঠনটি ১৯৬৮ সালে মুসলিম পক্ষের সাথে একটি চুক্তি করেছিল, যেখানে বলা হয়েছিল যে মন্দির এবং মসজিদ উভয়ই জমিতে থাকবে। এই ভুয়ো সংস্থার জন্মভূমিতে কোনও আইনি দাবি নেই, তাই শ্রী কৃষ্ণ জন্মভূমি ট্রাস্ট চুক্তিটি মানতে অস্বীকার করে।
সম্প্রতি এই মামলায় আদালতের দারস্থ হয় হিন্দুপক্ষ ।
ভগবান শ্রী কৃষ্ণ বিরাজমান এবং আরও সাতজন আইনজীবী হরিশঙ্কর জৈন, বিষ্ণু শঙ্কর জৈন, প্রভাষ পান্ডে এবং দেবকী নন্দনের মাধ্যমে এই আবেদনটি দায়ের করেছিলেন যাতে দাবি করা হয় যে সেই মসজিদের নীচে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মস্থান এবং এই জাতীয় অনেক নিদর্শন রয়েছে। যা প্রমাণ করে মসজিদটি একটি হিন্দু মন্দির। অ্যাডভোকেট বিষ্ণু শঙ্কর জৈনের মতে, এই আবেদনে বলা হয়েছে যে এখানে একটি পদ্ম আকৃতির স্তম্ভ রয়েছে যা হিন্দু মন্দিরগুলির একটি বৈশিষ্ট্য । আবেদনে আরো দাবি করা হয় যে শেশনাগের একটি প্রতিরূপ রয়েছে যিনি হিন্দু দেবতাদের একজন এবং যিনি তাঁর জন্মের রাতে ভগবান কৃষ্ণকে রক্ষা করেছিলেন। পিটিশনে আরও বলা হয়েছে যে মসজিদের স্তম্ভের গোড়ায় হিন্দু ধর্মীয় নিদর্শন রয়েছে এবং এগুলোর খোদাই স্পষ্ট প্রমাণ দেয় ।।