এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলম্বো,০২ এপ্রিল : চীনের ঋণের ফাঁদে পড়ে সর্বশান্ত দ্বীপরাষ্ট্রে শ্রীলঙ্কা । অর্থনৈতিক সংকট এতটাই ভয়ঙ্কর হয়ে গেছে যে দিনের ১৩ ঘণ্টাই বিদ্যুৎ থাকছে না । এদিকে কোষাগারে যথেষ্ট বৈদেশিক মূদ্রা নেই । ২০১৯ সালের শেষদিকে বৈদেশিক মুদ্রা সাড়ে ৭ বিলিয়ন ডলারের মতো থাকলেও এখন তা দুই বিলিয়ন ডলারে ঠেকেছে । এর মধ্যে ব্যবহারযোগ্য আছে মাত্র ৩০০ মিলিয়ন ডলার । ফলে আমদানি নির্ভর দেশটির জ্বালানি, খাদ্য ও ওষুধসহ অনান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনার ক্ষমতা নেই । ফলে ক্ষোভে ফুঁসছে গোটা দেশ । জনতার রোষ থেকে বাঁচতে দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাক্ষে । কলম্বোর বড় অংশেও কারফিউ জারি করা হয়েছে ।
২০১৯ সালে বিপুল জনপ্রিয়তা নিয়ে ক্ষমতায় আসা শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাক্ষের বিরুদ্ধে দূর্নীতি ও স্বজনপোষনের অভিযোগ উঠেছে । প্রেসিডেন্টের ভাই ও ভাইপোরা মন্ত্রীসভার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে আছেন । রাজাপাক্ষের বড় ভাই মাহিন্দা রাজাপাক্ষের শ্রীলংকার প্রধানমন্ত্রী। তার ছোট ভাই বাছিল রাজাপাক্ষে অর্থমন্ত্রী। আরেক ভাই চামাল রাজাপাক্ষে কৃষিমন্ত্রী। আর রাজাপাক্ষের ভাইপো নামাল রাজাপাক্ষে ক্রীড়ামন্ত্রী ।তাঁদের বিরুদ্ধে লাগামছাড়া দূর্নীতির অভিযোগ রয়েছে । দেশজুড়ে বিদ্যুৎহীন থাকলেও প্রেসিডেন্ট আর তার মন্ত্রীরা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পরিষেবা পাচ্ছেন । দূর্নীতির পাশাপাশি সরকারের অব্যবস্থাপনা, অদক্ষতাকে দেশের অর্থনীতি তলানিতে ঠেকেছে বলে অভিযোগ তুলে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাক্ষের পদত্যাগ দাবিতে বৃহস্পতিবার রাতে কয়েক’শ মানুষ তার বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ দেখায় ।
পুলিশের মুখপাত্র এসএসপি নিহাল থালদুওয়া জানান, কলম্বোর মিরিথানায় রাজাপাক্ষের বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ চলাকালে কিছু লোক বাসভবনে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করে । বিক্ষোভকারীদের হাতে রড ও ধারালো অস্ত্র ছিল । তারা প্রেসিডেন্টের বাসভবনে আগুন দেওয়ার চেষ্টা করেছিল । প্রেসিডেন্টের বাসভবনের কাছেই দাঁড়িয়ে থাকা সেনাবাহিনীর একটি বাস ও পুলিশের গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। ভাঙা একটি প্রাচীর থেকে ইট খুলে নিয়ে সেনা ও পুলিশ কর্মকর্তাদের দিকে তারা ছুড়তে থাকে । তখন তাদের প্রতিহত করতে নিরাপত্তা বাহিনী গুলি ও কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। এ ঘটনায় ৩১ পুলিশ ও নিরাপত্তাকর্মী আহত হয়েছেন। তাদের কলম্বো ন্যাশনাল হাসপাতাল সিএনএইচ ও সাউথ টিচিং হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে । বিক্ষোভের ঘটনায় তিন সাংবাদিক আহত হয়েছেন । তাদেরও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে ।
জানা যায়,বিক্ষোভের সময় নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়। এতে নিরাপত্তাকর্মী, সাংবাদিক ও বিক্ষোভকারী মিলে অন্তত ৫০ জন আহত হন ।পুলিশ ৪৫ বিক্ষোভকারীকে আটক করেছে । বিক্ষোভের পর রাজধানী কলম্বোয় অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করা হলেও শুক্রবার ভোরে তা তুলে নেওয়া হয়েছে । পরে দেশ জুড়ে জারি করা হয় জরুরি অবস্থা ।
প্রসঙ্গত,স্বাধীনতার পর থেকে শ্রীলঙ্কায় এরকম সংকটজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি কখনও । ২ কোটি ২০ লাখ জনসংখ্যা বিশিষ্ট দেশটিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানিসহ জরুরি পণ্য আমদানি করার মত পর্যাপ্ত অর্থ নেই । ডিজেল না থাকায় কয়েকদিন ধরে দেশ জুড়ে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে । সারা দিনের মধ্যে ১৩ ঘণ্টাই বিদ্যুৎ থাকছে না । শেয়ারবাজারে লেনদেন বন্ধ । এদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর দাম আকাশ ছোঁওয়া হয়ে গেছে । ওষুধের অভাবে সরকারি বেশ কয়েকটি হাসপাতালে অস্ত্রোপচার বন্ধ রাখা হয়েছে । পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে,কাগজ কেনার মত অর্থ নেই সরকারের হাতে । ফলে কাগজের অভাবে স্কুল কলেজের পরীক্ষা বন্ধ হয়ে গেছে । এমনকি দৈনিক পত্রিকার সংস্করণ পর্যন্ত প্রকাশিত হচ্ছে না । এখন এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিশ্বব্যাঙ্কের কাছে আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি ভারত ও চীনের কাছে ঋণ নেওয়ার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছে শ্রীলঙ্কার সরকার ।।