জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,কলকাতা,০৫ ডিসেম্বর :ওদের কোনো অপরাধ না থাকলেও জন্মগত অঙ্গজনিত ত্রুটি ওদের স্বাভাবিক জীবন যাপনের পথে, চলার পথে বড় বাধার সৃষ্টি করে। সমাজের কাছে অবহেলিত। ওরা বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু। চারদেওয়ালের বাইরে ঘোড়ার পিঠে চেপে ব্যস্ত শহরের বুকে ঘুরে বেড়ানো বা সবার স্বপ্নের ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল দর্শন ওদের কাছে ছিল চরম দুঃস্বপ্নের। ওদের কেউ বধির, দৃষ্টিহীন অথবা বোবা। গত কয়েক বছর ধরে দুঃস্বপ্নের কালোরাত দূর করে ওদের মনে আশার আলো জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করে চলেছে সর্বশিক্ষা মিশন। পাশে এসে দাঁড়িয়েছে ‘হোপ ফাউন্ডেশন’-এর মত স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। সর্বশিক্ষা মিশনের সহযোগিতায় প্রায় কুড়ি বছর ধরে সংস্থাটি কলকাতার বিভিন্ন সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের আশার আলো দেখিয়ে চলেছে।
রবিবার (৩ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবসে ২৫০ জন বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু এবং তাদের অভিভাবক সহ প্রায় ৫০০ জনের জন্য সকাল ১০ টা থেকে বৈকাল ৪ টে পর্যন্ত এক আনন্দমূলক ভ্রমণের অঙ্গ হিসাবে ঘোড়ার পিঠে ঘুরে বেড়ানো, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল দর্শন এবং ম্যাজিকের আয়োজন করে। সেই মুহূর্তে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের বাঁধভাঙা আনন্দ ছিল চোখে পড়ার মত।
আয়োজকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে জনৈক অভিভাবিকা বললেন,’আমি মা। সন্তানের অঙ্গগত ত্রুটি আমার মনে কষ্টের উদ্রেক করে। কয়েক ঘণ্টার জন্যে হলেও সংস্থার সৌজন্যে আমার সন্তানের সঙ্গে সঙ্গে অন্যদের মধ্যে যে আনন্দ দেখলাম তাতে মা হিসাবে আমি খুব খুশি।’
এইসব শিশুদের সঙ্গে ছিলেন শ্রীকান্ত হাজরা, শেফালি মিত্র, বিপ্লব পাল, দেবশ্রী সরকার, মৌমিতা মান্নাদের মত ‘স্পেশাল এডুকেটর’ যারা হিমালয় প্রমাণ ধৈর্য্য ধরে তিল তিল করে এদের গড়ে তোলার চেষ্টা করে যাচ্ছেন এবং তাদের সঙ্গে ছিলেন একঝাঁক শিক্ষক। ছিলেন ‘স্পেশাল এডুকেটর’ শুক্লা চ্যাটার্জ্জী ও লোপামুদ্রা মুখার্জ্জী। সর্বশিক্ষা মিশন দপ্তর ও ‘হোপ ফাউন্ডেশন’-এর উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করে নিউ ব্যারাকপুরের একটি মিশনের স্পেশাল এডুকেটর ছবি নাথ বললেন,’দীর্ঘদিন ধরেই আমি এই ধরনের শিশুদের নিয়ে কাজ করে চলেছি। আমি জানি ওদেরও আর পাঁচজনের মত আনন্দ উপভোগ করার ইচ্ছে হয়। দূরে সরিয়ে না রেখে সমাজ যদি ওদের পাশে দাঁড়ায় ওরাও হয়তো সমস্ত ত্রুটি ভুলতে পারবে। খুশি হবে ওদের অভিভাবকরা।’
সর্বশিক্ষা মিশন দপ্তরের পক্ষ থেকে জনৈক আধিকারিক বললেন,’আমাদের লক্ষ্য এইসব বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের প্রতি মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা, সহমর্মিতার সৃষ্টি করা। আমাদের সৌভাগ্য সবার সহযোগিতায় ধীরে ধীরে লক্ষ্যপূরণের দিকে এগিয়ে চলেছি। ঘৃণা নয় ভালোবাসা নিয়ে তিনি সাধারণ মানুষকে ওদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।’।