এইদিন ওয়েবডেস্ক,সিওল,১৪ নভেম্বর : স্বৈরশাসক কিম জং-উন ‘হামাস স্টাইলে’ হামলা করতে পারে বলে আশঙ্কা করছে দক্ষিণ কোরিয়া । আমেরিকার প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন রবিবার দক্ষিণ কোরিয়া সফরে গেলে নিজেদের এমন শঙ্কার কথাই প্রকাশ করেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইয়ুন সুক-ইওল। শুধু তাই নয়, নৈশভোজে আসা মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রীকেও সতর্ক থাকার আহ্বান জানান প্রেসিডেন্ট ইয়ুন ।
প্রসঙ্গত,গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে অতর্কিতে হামলা চালায় ইরান সমর্থিত ফিলিস্থিনি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হামাস । ইসরায়েলের র্যাডারকে ফাঁকি দিতে হাজার খানেক হামাস সন্ত্রাসী প্যারাট্রুপার ব্যবহার করে । এক একটা প্যারাট্রুপারে আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত সজ্জিত দু’জন করে সন্ত্রাসী চেপে দক্ষিণ ইসরায়েলে ঢুকে ব্যাপক নাশকতা চালায় । ১,৪০০ জন ইসরায়েলি শিশু,মহিলা,পুরুষ ও বৃদ্ধবৃদ্ধাকে নির্মমভাবে হত্যা করে । পাশাপাশি আড়াই’শর অধিক জনকে পনবন্দিকে করে ইসরায়েল থেকে ছিনতাই করা গাড়িতে চাপিয়ে গাজার গোপন সুড়ঙ্গে বন্দি করে রাখে ।
মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী অস্টিনকে রবিবার সিউলে নিজের বাড়িতে নৈশভোজের আমন্ত্রণ জানিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইয়ুন সুক-ইওল তাকে জানান যে কিম জং-উন হামাসের কায়দায় দেশে হামলার মতলব কষছে বলে তারা জানতে পেরেছেন । শুধু দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টই নন, অন্যান্য রাজনীতিবিদ, এমনকি প্রতিরক্ষা প্রধানরাও এ ধরনের কথা বলছেন এবং হামাসের সঙ্গে পিয়ংইয়ংকে তুলনা করছেন । দক্ষিণ কোরিয়ার জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের চেয়ারম্যানও সম্প্রতি বলেছেন, পিয়ংইয়ং ভবিষ্যতে হামাসের আক্রমণের মতো করে সিউলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করতে পারে।
দক্ষিণ কোরিয়ার মিলিটারি স্টাডিজ ইনস্টিটিউটের রিসার্চ ফেলো রু সুং ইয়োপ বলেন, হামাসের মতো হাইব্রিড যুদ্ধে জড়ানোর দিক থেকে উত্তর কোরিয়া ঐতিহ্যগতভাবে ভিন্ন কৌশলে রয়েছে। আর ওইরকম যুদ্ধ লাগলে সিউলই ক্ষতিগ্রস্ত হবে বেশি।
যদিও উত্তর কোরিয়ার হামলার হাত থেকে বাঁচতে দক্ষিণ কোরিয়া ইসরায়েলের আয়রন ডোমের মতো নিজস্ব মিসাইল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে নিয়েছে। তবে উত্তর কোরিয়ার সামরিক শক্তি হামাসের চেয়ে হাজার হাজার গুন বেশি । তাই দক্ষিণ কোরীয়ার আক্রমণের ভয় থেকেই যাচ্ছে ।
এই বিষয়ে কোরিয়া ইনস্টিটিউট ফর ন্যাশনাল ইউনিফিকেশনের উত্তর কোরিয়ার গবেষণার পরিচালক হং মিন বলেন, ইসরায়েলে হামলা চালাতে হামাস প্রধানত স্বল্প পাল্লার রকেটের উপর নির্ভরশীল, কিন্তু উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্রের অনেক বড় রেঞ্জ এবং দেশটির হাতে বিভিন্ন ধরনের কামান রয়েছে। এর স্ট্রাইক সক্ষমতা হামাসের চেয়ে বহুগুণ বেশি । তাই হামাসকে তুলনায় আনা বুদ্ধিমানের কাজ নয়।
কিম জং-উনের সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়ার সাপে নেউলে সম্পর্ক । প্রায়ই ব্যালেস্টিক মিশাইল পরীক্ষা করে দক্ষিণ কোরিয়াকে চমকানোর চেষ্টা করে উত্তর কোরিয়া ৷ দক্ষিণ কোরিয়া তো দূরের কথা, আমেরিকাকে পর্যন্ত প্রায়ই পরমানু হামলার হুমকি দেয় কিম জং-উন । ফলে ওই অঞ্চলের বাসিন্দারা যুদ্ধের আশঙ্কায় দিন যাপন করে ৷ উত্তর কোরিয়ার সেনারা সর্বশেষ ১৩ বছর আগে দক্ষিণ কোরিয়ার একটি দ্বীপে গোলাবর্ষণ করেছিল। ওই ঘটনায় দক্ষিণ কোরিয়ার দুই নৌসেনা এবং দু’জন সাধারণ মানুষ নিহত হয়। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, এখন উত্তর কোরিয়া নিজেদের কৌশল পাল্টেছে। তারা এখন আর সীমান্ত সংঘাতেই সীমাবদ্ধ নেই, সরাসরি সিউলকে ধ্বংস করার কৌশল নিয়েছে।।