প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১৪ ডিসেম্বর : লক্ষ্যে অবিচল থাকলে সফলতা মিলবেই। এটা যে নিছক কথার কথা নয়,তা বাস্তবে প্রমাণ করে দেখালেন পূর্ব বর্ধমানের আউসগ্রাম থানার পাণ্ডুক গ্রামে বিল্টু মাঝি।একবার ডব্লিউ বি সি এস (WBCS)পরীক্ষায় বসে বিল্টু ৩ নম্বরের জন্য প্রাথমিক স্তরের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেননি।তারপর সরাসরি ইউপিএসসি (UPSC) পরীক্ষায় বসার জন্য মনস্থির করেন। দু- দুবার অল্প নম্বরের জন্য তিনি আটকে গিয়েছিল। হাল ছাড়েননি বিল্টু। তিন বারের চেষ্টায় বিল্টু মাঝি সর্বভারতীয় ইণ্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিক্যাল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন । শুধু উত্তির্ণ হওয়াই নয়, মেধাতালিকায় দ্বিতীয় তিনি স্থান অর্জন করেছেন। প্রত্যন্ত গ্রামের ছেলে বিল্টু মাঝির এই সাফল্যে গর্বিত এলাকাবাসী। তাকে শুভেচ্ছা জানানোর ঝড় বইছে সামাজিক মাধ্যমে।
আউশগ্রামের পাণ্ডুক গ্রামের প্রান্তিক কৃষক জয়দেব মাজি এবং সুমিত্রাদেবীর এক ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে ছোট বিল্টু। পাণ্ডুক প্রাথমিক বিদ্যালয়েই তাঁর পড়াশোনা জীবন শুর হয়। এরপর তিনি পাণ্ডুকের পিপিডি হাইস্কুল থেকে পড়াশোনা করে ২০১৫ সালে মাধ্যমিক পাশ করেন।একাদশ শ্রেণীতে পড়ার জন্য বিশ্বভারতীতে বিল্টু ভর্তি হন সেখান থেকে স্ট্যাটিসটিক্স বিষয়ে অনার্স নিয়ে তিনি বি এস সি (BSC) পাশ করেন। বিল্টু জানিয়েচেন,তাঁর এম এস সি করার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু পারিবারিক পরিস্থিতির কারণে তাঁকে চাকরি খুঁজতে হয়। কারণ তাঁদের মাত্র বিঘা দুয়েক জমির আয়ের উপর ভরসা করেই পরিবার চলতো। বাবাকে ঋণ নিয়ে দিদির বিয়ে দিতে হয়েছিল।ওই ঋণের “সুদ’ মেটানোর পর আর সংসার চালানোর মত সঙ্গতি থাকতো না।
বিল্টু মাঝি কথা অনুযায়ী পরিবারের মুখ চেয়ে ২০২০ সালে বি এসসি (BSC)পাশ করার ওই বছরের শেষের দিকে তিনি গ্রামীণ পোষ্ট অফিসে শাখা পোষ্ট মাষ্টার হিসাবে কাজে যোগ দেন। এখন বীরভূম জেলার রূপপুর গ্রামের পোষ্ট অফিসে কর্মরত রয়েছে।তবে চাকরি করলেও প্রশাসনিক অনান্য পরীক্ষায় বসার জন্য প্রস্তুতিও নেওয়াও তিনি চালিয়ে যান। বিল্টু জানান,২০২১ সালে প্রথম ডব্লিউ বি সি এস পরীক্ষায় বসার পর প্রিলি পরীক্ষায় ৩ নম্বরের জন্য তিনি আটকে যায়। তারপর আর ডব্লিউ বি সি এস পরীক্ষায় বসার চেষ্টা আর করেননি।পরিবর্তে সরাসরি ইউপিএসসি পরীক্ষায় বসার প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেন।২০২২ সালে প্রথম আই এস এস( I S S)পরীক্ষায় বসেন। ওই বছর প্রাথমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও মৌখিক পরীক্ষায় তিনি আটকে যান। স্কোরকার্ড অনুযায়ী তাঁর ১৬ নম্বর কম হয়। ২০২৩ সালে আবার তিনি একই পরীক্ষায় দেন। ওই বছরেও জেনারেল ক্যাটাগরিতে তাঁর ২ নম্বর কম হয় ।
বিল্টুর কথায়,’দ্বিতীয়বার ২ নম্বরের জন্য আটকে যান লিখিত পরীক্ষাতে। এরপর তাঁর জেদ আরও চেপে বসে। তাঁর মাও প্রেরণা জুগিয়ে যান। স্বামী বিবেকানন্দ বলেছিলেন ‘লক্ষ্যে না পৌঁছানো পর্যন্ত হাল ছেড়ো না।’ স্বামীজীর সেই বাণীকে পাথেয় করে সফলতা লাভের প্রচেষ্টা চালিয়ে চান। অবশেষে সফলতা পানও তিনি।।