এইদিন ওয়েবডেস্ক,ভাতার(পূর্ব বর্ধমান),১৪ ডিসেম্বর : রাজ্যে যখন নেতাদের বাড়ি থেকে দুর্নীতির হাজার হাজার কোটি উদ্ধার হচ্ছে, পাশাপাশি তখন এরাজ্যের কিছু মানুষের দিন কাটছে নিদারুন অভাবের মধ্যে । এমনই এক অভাবের সংসার হল পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাতারের মুরাতিপুর দাসপাড়ার বাসিন্দা পানবতী দাস নামে এক বিধবা মহিলার । ছোট্ট ভাঙাচোরা ছিটেবেরা এক কুঠুরি ঘরের মধ্যে শারিরীক প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে তার বসবাস । দুই বাড়িতে ঠিকাচুক্তিতে পরিচারিকার কাজ করে কোনো রকমে দু’জনের সংসারে অন্নসংস্থান হয় । কোনো নির্বাচন এলে ভোটও দেন । কিন্তু এযাবৎ তার পাশে শাসক- বিরোধী কোনো দলই দাঁড়ায়নি । কেউ তার হয়ে তদ্বির করার জন্য না থাকায় জোটেনি কোনো সরকারি সহায়তাও ।
ফলে ‘বঞ্চিত হওয়া জন্মগত অধিকার’ নিয়েই ছেলেকে নিয়ে অসহায়ভাবে দিন কাটাচ্ছেন পানবতীদেবী । মহিলার ওই অসহায় অবস্থার কথা স্থানীয় যুবক শেখ আমিরের কাছ থেকে জানতে পারেন বর্ধমান শহরের শোলাপুকুর এলাকার বাসিন্দা মহম্মদ মিরাজ আলি নামে এক সমাজকর্মী । শেষ পর্যন্ত তিনিই এগিয়ে আসেন ওই দুঃস্থ মহিলার সাহায্যার্থে । পানবতীর ছেলে সাগরের জন্য একটি ট্রাইসাইকেল ও সংসার খরচের কিছু আর্থিক সহায়তা করে গেলেন মহম্মদ মিরাজ আলি । পাশাপাশি ওই পরিবারটির হাতে কিছু শীতের পোশাক তুলে দেন শেখ আমির নামে মুরাতিপুরের ওই যুবক । এই প্রকার মানবিকতায় আপ্লুত পানবতী দাসের চোখ দিয়ে বেরিয়ে আসে আনন্দাশ্রু ।
জানা গেছে,মুরাতিপুর দাসপাড়ার বাসিন্দা পানবতী দাসের স্বামী পেশায় জনমজুর বিশ্বনাথ দাস বছর দেড়েক আগে মারা গেছেন। তাদের তিন ছেলেমেয়ে । দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে । একমাত্র ছেলে সাগরের দুই পায়ের সমস্যা । অনেক ছোট থেকেই সে হাঁটাচলা করতে পারে না । অর্থাভাবে ছেলের চিকিৎসা করাতে পারেননি পানবতীদেবী । দুই বাড়িতে ঠিকাচুক্তিতে পরিচারিকার কাজ করে করে কোনো রকমে সংসার চালান তিনি। দুই বাড়ি মিলে মোট এই ৫০০ টাকা বেতন আর রেশনের চাল দিয়ে কোনোরকমে মা ও ছেলের পেট চলে । বিধবাভাতার জন্য স্থানীয় পঞ্চায়েতে ও প্রশাসনের কাছে আবেদন জানানো হয়েছিল কিন্তু ‘অফিসের বাবুদের দয়া হয়নি’ বলে জানান অসহায় বৃদ্ধা পানবতী দাস ।
মহম্মদ মিরাজ আলি বলেন,’আমিরে কাছ থেকে যখন ওই মহিলা ও তার ছেলের অসহায় অবস্থার কথা শুনি,তখন মনটা খুব খারাপ হয়ে যায় । তাই আর থাকতে না পেরে আজ ওদের অল্প কিছু সাহায্য করে গেলাম । মহিলার বসবাসের ঘরটা দেখে খুবই খারাপ লেগেছে আমার ।’
জানা গেছে,আজ বৃহস্পতিবার বর্ধমান থেকে একটি নতুন ট্রাইসাইকেল নিয়ে আসেন মিরাজ আলি । মুরাতিপুরে আসার পর আমির কে নিয়ে তিনি সোজা পানবতীদেবীর বাড়ি চলে যান । এদিকে আগে থেকেই মা ও ছেলের জন্য শীতের কিছু পোশাক কিনে রেখেছিলেন শেখ আমির । তারপর দু’জনে যাবতীয় সাহায্য সামগ্রী মহিলার হাতে তুলে দেন । ট্রাই সাইকেলে চড়ে ঘুরতে পেরে সাগরের চোখে মুখে দেখা যায় খুশির ঝিলিক ।
শেখ আমির বলেন,’মুরাতিপুরের ওই মহিলার আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ । এই পরিস্থিতিতে বিধবা ভাতার ব্যবস্থা হলে খুবই উপহার হত ।’ পাশাপাশি তিনি আবাস যোজনার অনুদানে মহিলার জন্য বসবাসের ঘর নির্মান করে দেওয়ায় জন্যও দাবি জানিয়েছেন দুই সমাজসেবী যুবক ।।