জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,গুসকরা(পূর্ব বর্ধমান),১৭ নভেম্বর : আমন ধান উঠতে শুরু করেছে। খামারে ধান ঝাড়ার কাজও চলছে। তারপর দুর্ঘটনা বা পরিবেশের কথা না ভেবে রাস্তার উপর মিলে দেওয়া হচ্ছে ধানের কুটুরি এবং মাঠে পোড়ানো হচ্ছে নাড়া – গত কয়েক বছর ধরে গ্রাম বাংলার প্রায় সর্বত্র এই দৃশ্য খুবই স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে।
গলি থেকে রাজপথ – প্রধান সড়ক থেকে থেকে শুরু করে গ্রামের রাস্তার উপর মিলে দেওয়া হচ্ছে কুটুরি। সমস্যা হচ্ছে পথিকদের। সবচেয়ে বেশি সমস্যা হচ্ছে সাইকেল বা মটরসাইকেলে যারা যাতায়াত করছে তাদের। চেনে জড়িয়ে যাচ্ছে কুটুরি। ফলে যেকোনো মুহূর্তে ঘটে যেতে পারে বড় রকমের দুর্ঘটনা।
অন্যদিকে মাঠে পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে নাড়া। এরফলে পরিবেশ যেমন দূষিত হচ্ছে তেমনি মাটির মধ্যে বসবাসকারী চাষের পক্ষে উপকারী ব্যাকটেরিয়া, কেঁচো, ছত্রাক প্রভৃতি অণুজীবগুলো মারা যাচ্ছে। জমির স্বাভাবিক উর্বরতা শক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আবার উপরের স্তরের মাটি পুড়ে গিয়ে চাষের অনুপযুক্ত হয়ে পড়ছে।
প্রতি বছর ব্লক প্রশাসন ও স্হানীয় প্রশাসন থেকে চাষীদের বারবার সতর্ক করা হলেও পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হচ্ছেনা। সামান্য খরচ বাঁচাতে গিয়ে পরিবেশ ও জমির মারাত্মক ক্ষতি করা হচ্ছে।
কথা হচ্ছিল আমেরিকায় গবেষণারত বাঙালি বিজ্ঞানী ড. বিশ্বরূপ ঘোষের সঙ্গে। তিনি বললেন, ‘এমনিতেই রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহারের ফলে জমির স্বাভাবিক উর্বরতা শক্তি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এবং আমাদের স্বাস্থ্যের ক্ষতি হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে জমিতে নাড়া পোড়ালে সমস্ত অণুজীবগুলো নষ্ট হয়ে যাবে। ফলে সেটা ভবিষ্যতের পক্ষে মারাত্মক হবে।’ তিনি আরও বলেন,’জমি থেকে নাড়াগুলো সরিয়ে দিতে বা জমির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে যা খরচ হবে সেগুলো পুড়িয়ে দিলে তার থেকে বেশি পরিমাণ ক্ষতি হবে ।’
প্রসঙ্গত ডঃ ঘোষ দীর্ঘদিন ধরে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহারের পরিবর্তে জৈব সার ব্যবহার করার জন্য গবেষণা করে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যে তাঁর আবিষ্কৃত জৈব সার হুগলি, বীরভূম প্রভৃতি জেলার অন্তত দশজন চাষী আলু চাষের সময় ব্যবহার করে উপকৃত হয়েছে। তার লক্ষ্য আগামী দিনে আরও বেশি সংখ্যক চাষীর কাছে এই সার পৌঁছে দেওয়া।
মঙ্গলকোটের সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক জগদীশ চন্দ্র বারুই বললেন,’আমাদের কৃষি দপ্তরের পক্ষ থেকে চাষীদের মধ্যে প্রতিবছর সচেতনতা মূলক প্রচার করা হয়। এবারও হবে। পরিবেশের স্বার্থে তিনি সাধারণ মানুষকে সচেতন হওয়ার জন্য আবেদন করেন।’।