এইদিন ওয়েবডেস্ক,বাংলাদেশ,১৭ আগস্ট : ২০১৯ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে বাংলাদেশের কক্সবাজারের উখিয়ার মধ্য রত্নাপালং এলাকায় এক হিন্দু পরিবারের দুই শিশুসহ ৪ জনকে জবাই করে খুন করা হয় । এটি ছিল উখিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে নৃশংস হত্যাকাণ্ড গুলোর মধ্যে একটি । বহু আলোচিত এই হত্যাকাণ্ড ‘ফোর মার্ডার’ নামে পরিচিত । কিন্তু প্রায় ৬ বছর পেরিয়ে গেলেও এ মামলার কোনো অগ্রগতিই হয়নি । ন্যায় বিচার পায়নি পরিবারটি । পরিবারের একমাত্র জীবিত সদস্য রোকেন বড়ুয়া বলেন, ‘আমি নিঃস্ব, আমার সবকিছু হারিয়েছি। সরকারের কাছে শুধু আমার ৩ বছরের সন্তানের হত্যার বিচার চেয়েছিলাম, মায়ের হত্যার বিচার চেয়েছিলাম, স্ত্রীর হত্যার বিচার চেয়েছিলাম, আর আদরের ভাইজির হত্যার বিচার চেয়েছিলাম। কিন্তু প্রায় ৬ বছর পার হয়ে গেলেও এ মামলার চার্জশিট হয়নি, প্রশাসন কোনো হত্যাকারীকেই শনাক্ত করতে পারেনি। আমার সঙ্গে যা ঘটেছে, কক্সবাজার জেলায় এর চেয়ে জঘন্য কোনো ঘটনা হয়েছে কি না, তা আমার জানা নেই।’
জানা গেছে,জীবিকার তাগিদে প্রবাসে থাকতেন রোকেন বড়ুয়া । বাড়িতে থাকতেন রোকেনের স্ত্রী মিলা বড়ুয়া (২৫), তাদের ছোট সন্তান রবিন বড়ুয়া (৫), তার মা সখী বড়ুয়া (৬২) এবং ভাইজি সনি বড়ুয়া (৬)।২০১৯ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর কর্মস্থলে ছিলেন রোকেন । সেই সুযোগে গভীর রাতে জিহাদিরা বাড়িতে ঢুকে দুই শিশুসহ চার সদস্যকে গলা কেটে নির্মমভাবে খুন করে । পরেত দিন সকালে কক্সবাজারের তৎকালীন জেলা প্রশাসক কামাল হোসেন, নির্বাহী কর্মকর্তা, থানার অফিসার্স ইনচার্জসহ জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সর্বোচ্চ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে আসে । তারা নিহতদের পরিবারকে শান্তনা দিয়ে আশ্বাস দিয়েছিলেন যে, এই জঘন্য হত্যাকাণ্ডের পেছনে কারা জড়িত, দ্রুতই তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।পরবর্তীতে মামলার পর সিআইডির উচ্চ পর্যায়ের একটি টিমও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বিভিন্ন ততথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করে । তবে এতসব কিছুর পরেও এযাবৎ এই হত্যাকাণ্ডের কোনো আশানুরূপ অগ্রগতি হয়নি । এই মামলায় একাধিকবার তদন্ত কর্মকর্তার পরিবর্তন হলেও মূল আসামিদের গ্রেপ্তার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা যায়নি। ফলে দীর্ঘ ছয় বছর পার হলেও এ মামলার বিচার কার্যক্রম শুরু হয়নি। চার্জশিটও জমা পড়েনি আদালতে । আইনজীবী মাসুদ বলছেন, ‘এ ধরনের নৃশংস হত্যাকাণ্ডে দীর্ঘসূত্রিতা একদিকে ভুক্তভোগী পরিবারকে হতাশ করছে, অন্যদিকে অপরাধীদেরও সাহসী করে তুলছে। মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে উদ্যোগী হওয়া জরুরি।’
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রোকেন বড়ুয়া ৪৭/২০১৯ নম্বর ফোর মার্ডার মামলাটির তদন্ত এখনো পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কক্সবাজার কর্মকর্তাদের কাছে রয়েছে। আসামি শনাক্ত করে আদালতে তথ্য-উপাত্ত প্রেরণ করলে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হবে। পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ইনস্পেক্টর রাজেশ বলেন, ‘ফোর মার্ডার মামলাটি আগে আরো ৫ জন অফিসার তদন্ত করেছেন। আমি নিয়েছি ৮ মাস হলো। বেশ কয়েকবার ঘটনাস্থল ও পার্শ্ববর্তী লোকজনের সাথে কথা হয়েছে। গোপন এবং প্রকাশ্যে তদন্ত চলমান রেখেছি। নিশ্চয় ভালো কিছু তুলে আনা হবে।’।