এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,১৩ ডিসেম্বর : এতদিন পশ্চিমবঙ্গের ভোটার তালিকায় কত বড় জালিয়াতি চলছিল ধরিয়ে দিল স্পেশাল ইনটেন্সিভ রিভিশন (এস আই আর) । কোথাও বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীরা এরাজ্যে বিয়ে করে শ্বশুরকে বাবা বানিয়ে বহাল তবিয়তে সংসার ফেঁদে বসেছিল। কোথাও মায়ের থেকে ছেলে ১৫ বছরের বড় । এই ধরনের জালিয়াতির ভুরি ভুরি প্রমান উঠে এসেছে এস আই আর-এ । ইতিমধ্যেই শেষ হয়েছে গননা ফর্ম বিতরণ, সংগ্রহের পর ডিজিটাজেশনের কাজ । বৃহস্পতিবার রাত ১২ টা পর্যন্ত গননা ফর্ম (এনুমারেশন ফর্ম) জমা করার কাজ শেষ হয়েছে । প্রথম ধাপের কাজের পর ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ যাওয়ার চিত্র কিছুটা হলেও পরিষ্কার হয়েছে । তাতে দেখা গেছে যে ৫৮লক্ষ ১৭ হাজার ৮৫১ জন ভোটার হয় মৃত বা ঠিকানা বদলেছেন বা কোনওভাবে তাঁদের খোঁজ পাননি বিএলও-রা ।
আন-কালেক্টেবল ফর্মের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি রয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় । সংখ্যাটি ৮ লক্ষ ১৬ হাজার ৪৭টি। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা, যেখানে আন-কালেক্টবল ফর্মের সংখ্যা ৭ লক্ষ ৯২ হাজার ৬৪টি। আন-কালেক্টেবল ফর্মের সংখ্যা সবচেয়ে কম জমা পড়েছে কালিম্পং জেলায়- ১৭ হাজার ৩২১টি। এছাড়া,নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে যে আরও ৩০ লক্ষ আন ম্যাপড ফর্ম বা ভোটার (Unmapped Voter West Bengal) রয়েছেন বাংলায়। তাই নাম বাদ যাওয়ার সংখ্যা এক কোটি ছুঁয়ে ফেলবে বলে অনুমান করা হচ্ছে ।
বিশেষ রোল অবজার্ভার সুব্রত গুপ্ত জানিয়েছেন, প্রায় ৫৯ লক্ষ নিঁখোজ ভোটারের পাশাপাশি আরও ৩০ লক্ষ আন ম্যাপড ফর্ম বা ভোটার রয়েছে পশ্চিমবঙ্গে । অর্থাৎ ২০০২ সালের ভোটার তালিকার সঙ্গে এই ৩০ লক্ষ ভোটার কোনও সম্পর্ক দেখাতে পারেননি। তাঁর বাবা, মা, দাদু, দিদিমা, ঠাকুমা-ঠাকুর্দা বা ভাই বোন কারও নাম ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় থাকা উচিত। তিনি এই রাজ্যের ভোটার হলে অবশ্যই তা থাকা উচিত। কিন্তু তাঁরা তা দেখাতে পারেননি । তিনি বলেন,’শুনানিতে ৩০ লক্ষ আন ম্যাপড ভোটাদের মধ্যে কত জন প্রমাণ দাখিল করতে পারবেন, কত জন পারবেন না সেটা বড় বিষয়। সেই সংখ্যাটা শুনানির আগে স্পষ্ট করে বলা সম্ভব নয় ।’
এসআইআর-এর প্রথম পর্বের কাজে এখনো পর্যন্ত ভোটার তালিকায় জালিয়াতি যে প্রমান সামনে এসেছে তা চমকে দেওয়ার মত । বাবা-মায়ের সঙ্গে সন্তানের বয়সের বিস্তর ফারাক দেখা গেছে ১১ লক্ষ ৯৫ হাজার ২৩১ টি ফর্মে । যেটা কমিশনের নজরে অস্বাভাবিক । আরও একটি চমকপ্রদ তথ্য হল, ৮৫,০১,৪৮৬ ফর্ম পাওয়া গিয়েছে যেখানে বাবার নামেই মিল নেই। বাবা-মায়ের সঙ্গে সন্তানের বয়সের ফারাক ৫০ বছর বা তার বেশি। এমন মোট ৮,৭৭,৭৩৬ গুলো ফর্ম জমা পড়েছে। আরও চমকপ্রদ তিথ্য হল, দাদু-ঠাকুমার সঙ্গে নাতি নাতনির বয়সের ফারাক হল মাত্র ৪০ বছর বা তার কম। এমন ফর্ম জমা পড়েছে ৩,২৯,১৫২টি ।৪৫ বছর বা তার বেশি বয়সে প্রথম ভোটার কার্ডে নাম তোলা হয়েছে এমন ফর্ম জমা পড়েছে প্রায় ২০,৭৪,২৫৬ টি। ১৩,৪৬,৯১৮ টি ফর্ম জমা পড়েছে যেখানে পুরুষ না মহিলা সেটা সঠিক বোঝা যাচ্ছে না। এখন এই সমস্ত বিষয়গুলো নিয়ে নির্বাচন কমিশনের জেলাভিত্তিক বিশেষ দল যাচাই করবে। প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে যে বর্তমান ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ যাওয়ার সংখ্যা ৮০ লক্ষ ছাড়িয়ে যেতে পারে ।
আগামী ১৬ ডিসেম্বর খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ হবে। সেই তালিকা সংক্রান্ত যাবতীয় অভিযোগ এবং দাবি কমিশনে জানানো যাবে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত। সে সব অভিযোগ খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করা, বিতর্কের নিষ্পত্তি করা, প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট ভোটারকে শুনানিতে (হিয়ারিং) ডাকা এবং আলোচনার সাপেক্ষে সন্দেহ দূর করার কাজ ইআরও-রা করবেন ১৬ ডিসেম্বর থেকে ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।।

