এইদিন ওয়েবডেস্ক,বাংলাদেশ,২৭ ডিসেম্বর : মহম্মদ ইউনূস বাংলাদেশে ক্রমশ তালিবানের মত শাসন ব্যবস্থা লাগু করার দিকে নিয়ে যাচ্ছে । যেখানে কঠোরভাবে লাগু করা হয়েছে ইসলামি শরিয়া শাসন । মেয়েদের স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হয়েছে । বিভিন্ন অপরাধে মাঠ পর্যায়ে শাস্তি চালু করা হয়েছে । গান বাজনাকে “হারাম” ঘোষণা করে নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে । গত ১৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ‘ছায়ানট’ জিহাদি হামলার পর এবার ফরিদপুরে হামলা চালিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ব্যান্ড তারকা জেমসের একটি অনুষ্ঠান ।
ইংরাজি সাপ্তাহিক ব্লিটজ পত্রিকার সম্পাদক সালহা উদ্দিন শোয়েব চৌধুরী হামলার ভিডিও শেয়ার করে লিখেছেন,’মুহাম্মদ ইউনূসের ইসলামপন্থী-জিহাদি চক্র কর্তৃক সঙ্গীতকে হারাম ঘোষণা করার পর, ফরিদপুর জেলায় বিশিষ্ট গায়ক জেমসের একটি কনসার্টে বাংলাদেশের ইসলামপন্থীরা হামলা ও ভাঙচুর চালায়। কিন্তু একই চক্র পাকিস্তানি গায়ক আতিফ আসলামের কনসার্টের অনুমতি দেয়।’
জানা গেছে,ফরিদপুর জেলা স্কুলের ১৮৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে শুক্রবার রাত ৯টার দিকে জেলা স্কুল চত্বরে জেমসের অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল। আয়োজক কমিটির অভিযোগ, ‘বহিরাগতদের’ অনুষ্ঠানস্থলে ঢুকতে না দেওয়ায় তারা ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে, চেয়ার ভাঙচুর করে এবং মঞ্চ দখলের চেষ্টা করে। পরে জেলা স্কুলের শিক্ষার্থীদের প্রতিরোধে তারা সরে যেতে বাধ্য হয়। রাত ১০টার দিকে আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক মুস্তাফিজুর রহমান শামীম বলেন, ‘ফরিদপুর জেলা প্রশাসকের নির্দেশে জেমসের অনুষ্ঠানটি বাতিল করা হলো।’ বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানের প্রচার ও মিডিয়া উপকমিটির আহ্বায়ক রাজীবুল হাসান খান বলেন,’জেমসের অনুষ্ঠানটি সফল করতে আমাদের সব প্রস্তুতি ছিল। কিন্তু কেন, কী কারণে, কারা হামলা করলো, বুঝতে পারলাম না। ইটের আঘাতে আমাদের জেলা স্কুলের কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে।’
“একটা একটা বাউল ধর, ধরে ধরে জবাই কর”
প্রসঙ্গত,সম্প্রতি বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের এই এক জিহাদি আইনজীবীর বক্তব্যের একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয় । ভিডিওতে তাকে বলতে শোনা গেছে,’আমরা প্রতিবাদের জন্যই বলছি, “একটা একটা বাউল ধর, ধরে ধরে জবাই কর” । যারা ইসলামের অপরাধ করে ইসলামি রীতি অনুযায়ী তাদের জবাই করার বিধান রয়েছে । ধর্মত্যাগীদের বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই৷ সেই কারনে আমাদের দাবি যে এই আইনটা পাশ হোক ইসলামিক শাস্তি কি সেটা মানুষের জানা দরকার৷ সেই কারনেই আমরা শ্লোগান তুলেছি, “একটা একটা বাউল ধর, ধরে ধরে জবাই কর”।
ওই জিহাদি আইনজীবীর বক্তব্যের পরেই ১৮ ডিসেম্বর রাতে সংবাদমাধ্যমসহ সাংস্কৃতিক পীঠস্থান ঢাকার ‘ছায়ানট’-এ জিহাদি হামলার ঘটনা ঘটে । সমস্ত বাদ্যযন্ত্র পুড়িয়ে দেওয়া হয় । ১৯ ডিসেম্বর ‘ছায়ানট’-এ তাঁর সরোদ পরিবেশনার কথা ছিল বিশিষ্ট সরোদ বাদক সিরাজ আলি খানের ।কিন্তু ১৮ তারিখের সহিংসতায় পরিস্থিতি এতটাই অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে যে, তিনি দিশেহারা হয়ে পড়েন। সংবাদমাধ্যমকে সিরাজ জানিয়েছেন, তিনি কল্পনাও করতে পারেননি যে একটি সংগীত প্রতিষ্ঠানকে এমনভাবে জ্বালিয়ে দেওয়া হতে পারে। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া ‘ছায়ানট’ দেখে তিনি স্তম্ভিত। পোড়া এবং ভাঙাচোরা বাদ্যযন্ত্র দেখে তাঁর মন ভেঙে যায়, অসাবধানতাবশত একটিতে পা লেগে যাওয়ায় তিনি দেবী সরস্বতীর কাছে ক্ষমা চেয়েছেন।
কিংবদন্তী সরোদবাদক আলাউদ্দিন খানের বংশধর সিরাজ মূলত কলকাতার বাসিন্দা হলেও, বাংলাদেশে তাঁর অনেক আত্মীয় রয়েছেন। তাঁর ভারতীয় পরিচয়পত্র ঢাকার ড্রাইভার কৌশলে লুকিয়ে রেখেছিলেন, যা তাঁকে নিরাপদে বিমানবন্দর পর্যন্ত পৌঁছাতে সাহায্য করে। “খান” পদবি এবং বংশক্রম দেখে অনেকেই তাঁকে বাংলাদেশের বলেই বিশ্বাস করেছেন, যা সেদিনের সন্ত্রাসী হামলার পরিস্থিতিতে তাঁর জন্য একপ্রকার রক্ষাকবচ হয়ে দাঁড়ায়। তবে সিরাজের মা এবং তাঁর একাধিক বাদ্যযন্ত্রী এখনও ওপার বাংলায় রয়েছেন ।।

