এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,২৮ মার্চ : মালদহের মোথাবাড়িতে হিন্দুদের উপর আক্রমণের প্রতিবাদে আজ শুক্রবার বিকেলে উত্তর কলকাতার শ্যামবাজারে সভায় “মোথাবাড়িকে ঠান্ডা” করার শপথ করলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । পাশাপাশি তিনি ঘটনার জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে দায়ী করে তুলোধুনো করলেন রাজ্য পুলিশ,সিপিএম ও মিডিয়াকে ৷ শুভেন্দু অধিকারী বলেন,’আমি অনেক পরীক্ষায় পাশ করেছি । ২০২২ সালের কোজাগরী লক্ষ্মীপূজোয় ঘটনায় মমিনপুর ইকবালপুরে এনআইএ করেছিলাম । সেদিনের বিচারপতি আজকের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি জয়মাল্য বাগচি এনআইএ দিয়েছিল । ৩৫ টা জেলে ৩৭ টা ফেরার । ২০২৩ সালের রামনবমীর মিছিলের ঢিল মারলেন… রিষড়া, হাওড়ার শিবপুর, ডালখোলা । মোট গ্রেপ্তার ৮৫ । কিছু বেলে, কিছু জেলে কিছু কন্ডিশনাল বেলে, বাকিরা ফেরার । ঠান্ডা হয়েছে এলাকা । আজকে কথা দিয়ে গেলাম মোথাবাড়িও ঠান্ডা করব ।’
তিনি বলেন,’আমাদের ধর্মাচরণের উপরে, আমাদের আস্থার উপরে, আমাদের দেবী ও মন্দিরের উপরে বারে বারে আক্রমণ হচ্ছে । সব জায়গায় প্যাটার্ন একই। আমি এখান থেকে এই রাজ্যের সরকারকে বলি, যে সরকার লন্ডনে গিয়ে লন্ডভন্ড করে দিয়েছে, তাদের বলি যে তারা যদি মনে করে অন্য ধর্ম সম্প্রদায়ের অসম্মান হচ্ছে তাহলে তাদের থানায় যাওয়া উচিত । তারা বারে বারে নিজেদের হাতে আইন তুলছেন কেন ? আইন হাতে তুলছেন এই কারণে কারণ তারা প্রকাশ্যে বলে এই সরকার আমাদের সরকার । এই সরকারটাকে আমরা রেখেছি তাই আমরা যা খুশি করব । এই সরকারের যারা ট্যাক্সের টাকায় বেতন পায় সেই পুলিশের লোকেরা কিছু করবে না, মডেল একই ।
গত দু-তিন মাসের মধ্যে বেলডাঙ্গা, নওদা, আর কালকে মোথাবাড়ি ।’
বৃহস্পতিবার মোথাবাড়িতে হিন্দুদের উপর হামলা প্রসঙ্গে শুভেন্দু অধিকারী বলেন,’অভিযোগ কি ? তার আগের দিন রামনবমীর কোন প্রস্তুতি যাত্রা ছিল । সেখানে তারা অভিযোগ কিছু করছেন । অভিযোগ করার জায়গাটা হচ্ছে থানা । কিন্তু আপনারা কালকে মাইকিং করে ধর্মীয় পতাকা নিয়ে মোথাবাড়ি বাজারের পঞ্চাশের বেশি হিন্দু দোকান বেছে বেছে সব ভাঙ্গলেন, লুট করলেন । যথারীতি যখন ঘটনা ঘটছে পুলিশ সেখানে ছিল না । অথচ আপনারা অবাক হয়ে যাবেন ঘোষণা দিয়ে এসেছে । ফেসবুক লাইক করে এসেছে যে আমরা কালকে তিনটের সময় মোথাবাড়িতে অভিযান করব ।’
তিনি বলেন,’এ কোন রাজ্যে আপনি বসবাস করেন ? এ কোন পুলিশ ? এ কোন শাসক ? নিরীহ লোকেদের দোকান তছনছ করলেন । রাস্তায় যাওয়া হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে সমস্ত গাড়ি ভেঙে দিলেন । ড্রাইভারদের মারলেন । রাত্রি অব্দি তান্ডব চলল । আমাদের যাদবসমাজ, ঘোষেরা যারা মালদা, মুর্শিদাবাদ প্রভৃতি জায়গায় দুধ এবং ছানা সরবরাহ করেন তাদের গাড়ি থেকে ছানা নামিয়ে ঘোষ বন্ধুদের মেরে রক্তাক্ত করলেন ।’
পুলিশকে নিশানা :
আমি কাল বারুইপুর যাওয়ার সময় এক্স হ্যান্ডেলে দিয়ে ডিজি রাজীব কুমারকে, মালদার পুলিশ সুপার প্রদীপ যাদবকে আমরা অনুরোধ করেছিলাম যে ব্যবস্থা নিন । পুলিশ সুপার সম্ভবতো এখন পরিবর্তন হচ্ছে। তা আমি পোস্ট করার পর দেখলাম পুলিশ এসে এবং দাঙ্গাকারীদের হাত পা ধরছে । আমি আবার রাতে এক্স হ্যান্ডেলে দিলাম । পুলিশ হেলমেট লাগিয়ে, র্যাফের পোশাক পরে, গ্যাস, লাঠি এবং রাবার বুলেটের বন্দুক নিয়ে তাদের হাত পা ধরছে । আর কি বলছে দাঙ্গাকারীরা ? বলছে এরা গুলি করতে পারবে না । কারণ তারা জানে আইনের শাসন নেই । মমতার সরকার আছে, তোষণের সরকার, ভোট ব্যাংকের রাজনীতি সরকার ।
বলছে হিন্দু শূন্য করে দেবো । এটা সংবিধানের ভাষা ? এটা গণতন্ত্রের ভাষা ? এটা কেউ বলতে পারেন ? পারেন না । আজকে আপনি দেখলেন ইন্টারনেট বন্ধ। ১৬৩ ধারা যেটা আগের ১৪৪, সেটা লাগু করে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না । বিজেপির জেলা সভাপতি অজয় গাঙ্গুলী, দুই বিধায়ক গোপাল সাহা এবং চিন্ময় বর্মনরা যখন ঘটনাস্থলের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছে ঠিক চিরাচরিত রীতি অনুযায়ী তাদের ১০ কিলোমিটার আগে আটকে দেওয়া হয় । লোকগুলো কেমন আছে, তাদের দোকান বাড়ি কি অবস্থায় আছে, পালপাড়া ও চৌধুরীপাড়া সনাতনি হিন্দু পাড়া, তারা সেখানে সংখ্যালঘু, তারা কি অবস্থায় আছে তাদের বাড়ির বাচ্চারা ও মহিলারা সুরক্ষিত কিনা জানার অধিকার কারোর নেই । এ কোন রাজ্যে আমরা বসবাস করছি ? একটা সাধারণ ঘটনা ঘটলে ভিডিও ফুটেজ দেখে চিহ্নিত করে ধরা হয় । আমি কাল রাত্রে ডিজি এবং হোম সেক্রেটারির কাছে যাওয়ার জন্য আবেদন করলাম । দুজনেই পালিয়েছে আজ ১১ঃ০০ টার সময় । ডিজি পালিয়েছে হুগলিতে । আর হোম সেক্রেটারি ঢুকে গেছে গর্তে । গোটা নবান্নতে কয়েক হাজার পুলিশ দাঁড় করিয়ে রেখেছে । কথা বলতে দেবে না । প্রতিবাদ করতে দেবেনা । ছাড়বো না ।
মাননীয় রাজীব কুমার এক যাত্রায় পৃথক ফল হতে পারে না । বিজেপি আন্দোলন করলে আপনি সিসিটিভি ফুটেজ দেখে তাকে তুলে আনেন ধরে আনেন । রাজাবাজারের ঘটনায় পাঞ্জাবের জলন্ধর থেকে কুকি সিংহ এবং তার ছেলেকে ধরে আনতে পারেন । যে ঘটনার দিন কলকাতায় ছিল না । যার এডুকেশনাল লাইন একবচন নষ্ট করে দিতে পারেন মনোজ বর্মা । আর মোথাবাড়িতে কুড়িজন গ্রেপ্তার হয়েছে বলে আমাকে একজন আইপিএস এর মাধ্যমে খবর পাঠানো হয়েছে । কিন্তু তারা কারা ? যারা প্রকৃত দুষ্কৃতী, হামলাকারী, লুটেরা, আগুন দেওয়া লোকেরা নয় । তৃণমূলের রহিম বক্স এবং সাবিনা ইয়াসমিনের সঙ্গে পুলিশ যুক্তি করে কিছু গরীব মুসলিমকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে জেল খাটানোর জন্য । আর যারা গুন্ডা, দুষ্কৃতি, লুট করেছে শাসক দলের ভরসায় তাদের একজনারো পেশাগ্রহ স্পর্শ করেনি । এখন পুলিশ ? এই পুলিশকে মমতা ব্যানার্জি হিন্দু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদের ধর্মাচরণ আমাদের বেঁচে থাকার উপর আক্রমণ করাচ্ছেন এর পরিণতি ভালো হতে পারে না ।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে নিশানা :
এখনো যদি ঘরে বসে থাকেন এই বাংলা বাংলাদেশ টু কার্যত হয়ে গেছে । বাকি কিছু নেই । এর জন্য দায়ী তৃণমূল কংগ্রেস এবং প্রধান দায়ী মমতা ব্যানার্জি । যার জন্য এই ঘটনা ঘটেছে ।
সিপিএমকে নিশানা :
সিপিএমকে নিশানা করে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, প্যালেস্টাইনের ইসরাইলে গন্ডগোল হলে সিপিএমকে পাবেন৷ মিছিল করে বলে, ‘গাজায় বোম পরলো কেন জবাব চাই জবাব দাও’ । এখন সিপিএমকে মোথাবাড়ি নিয়ে পাবেন না । এর নাম হলো সেকুলারিজম । সেকুলারিজম মানে হিন্দু দোকান ভাঙ্গো, হিন্দু বাড়ি পোড়াও, হিন্দু মন্দির ভাঙ্গো, হিন্দুদের মারো, হিন্দু মা-বোনের ইজ্জত লোটো, হিন্দুদের খুন করো,হিন্দুদের মিথ্যা মামলায় জেলে নিয়ে যাও এর নাম হল সেকুলারিজম । এই সেকুলারিজমকে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়ার আবেদন নিয়ে মুরলীধর সেন লেনে আমি যাব ।
রাজ্যের প্রথমসারির মিডিয়াকে নিশানা :
মোথাবাড়ির ঘটনার ভিডিও রাজ্যের কোন প্রথম সারির মিডিয়া দেখায়নি৷ ভয় পেয়েছে তারা । আমি পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন দিয়ে বিজেপি এবং আমার ফেসবুক লাইভে দেখাবো । বাংলার মানুষ দেখুন কিভাবে কাল মোথা বাড়িতে করেছে, আপনাদের দেখাবো এবং ঘরে ঘরে পৌঁছে দেব । মেইন স্ট্রিম মিডিয়া পুলিশের ভয়ে যতই আড়াল করুন আপনারা এগুলো লুকিয়ে রাখতে পারবেন না ।
শুভেন্দু অধিকারী জানান, কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন এবং এনআইএ তদন্তের জন্য আজ কলকাতা হাইকোর্টে আবেদন জানিয়েছেন আইনজীবী কৌস্তুভ বাগজি, তরুণজ্যোতি তিওয়ারি এবং সূর্যনীল সাহা । তিনি জানান বিচারপতি মামলা নিয়েছেন এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীকে পুলিশের অধীনে সেখানে মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছেন । মালদার পুলিশ সুপারের ওপর ব্যক্তিগতভাবে দায়িত্ব দিয়েছেন বিচারপতি সৌমেন সেনের বেঞ্জ। তিনি বলেন,’আগামী বৃহস্পতিবার রিপোর্ট ফাইল করতে বলেছে স্টেট পুলিশকে । আমরা ছেড়ে দেবো না । হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট আমরা সব জায়গায় যাব। বিচার পাইয়ে দেব৷ এই জিনিস এই বাংলায় চলতে পারেনা । এ জিনিস বরদাস্ত আমরা করব না । বাড়িতে আর বসে থাকবেন না । ভাগাভাগি করবেন না,রাজনীতির ভিত্তিতে, জাতপাতের ভিত্তিতে ভাগাভাগি হবেন না । সমস্ত রাষ্ট্রবাদী সনাতনীরা পথে নেমে ঐক্যবদ্ধ হন । আমরা চাই না অশান্তি । আমরা স্বামী বিবেকানন্দের আদর্শে বিশ্বাসী । নিজে ধর্মে আস্থা রাখি অপর ধর্মের শ্রদ্ধা রাখি । কিন্তু এই জিনিস আমরা মেনে নেব না । আপনারা রাস্তায় থাকুন । আর আমরা আইনি লড়াই করে মমিনপুর ইকবালপুর, শিবপুর, রিষরার মত মোথাবাড়িকে ঠান্ডা করব । আমাদের আপনার রুখতে পারবেন না । আমরা এর শেষ দিকে ছাড়তে চাই ।’ শুভেন্দু অধিকারী বলেন ‘মোথাবাড়িতে যারা ক্ষতিগ্রস্ত তাদের সবাইকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা । পুরো সেল্টার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’।