এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,১৩ মার্চ : অভিযোগ উঠেছিল যে হাই কোর্টের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও ওবিসি শংসাপত্র ব্যবহার করে নিয়োগপ্রক্রিয়া চালাচ্ছে রাজ্য সরকার । এনিয়ে মঙ্গলবার রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থকে বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার ডিভিশন বেঞ্চে কড়া প্রশ্নবাণের মুখে পড়তে হয় । মনোজ পন্থ ভুল স্বীকার করতে বাধ্য হন। উল্লেখ্য, গত বছর ২২ মে কলকাতা হাই কোর্ট রাজ্যের প্রায় ১২ লক্ষ ওবিসি সার্টিফিকেট বাতিল করার নির্দেশ দেয়। উচ্চ আদালতের নির্দেশ ছিল, ২০১০ সালের পর থেকে তৈরি সমস্ত ওবিসি সার্টিফিকেট বাতিল করতে হবে। ওই সব সার্টিফিকেট ভবিষ্যতে কোথাও ব্যবহার করা যাবে না। হাই কোর্টের সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যায় রাজ্য। তবে হাই কোর্টের নির্দেশে স্থগিতাদেশ দেয়নি শীর্ষ আদালত। সেখানে রাজ্যের মামলাটি এখন বিচারপতি বিআর গবই এবং বিচারপতি অগাস্টিন জর্জ মসিহের বেঞ্চে বিচারাধীন রয়েছে।
এদিকে ওবিসি শংসাপত্র বাতিল মামলায় কলকাতা হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টে রাজ্য সরকার বিশেষ সুবিধা করতে না পারায় নাম না করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে বিদ্রুপ করলেন শুভেন্দু অধিকারী । আজ মমতা ব্যানার্জির নাচের একটা ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করেছেন বিরোধী দলনেতা । যদিও মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির মুখ আবছা করে দেওয়া হয়েছে৷ ভিডিও-এর ব্যাকগাউন্ডে বাজছে ডালের মেহেন্দির বিখ্যাত ‘বোলো তারা রা’ গান । শুভেন্দু অধিকারী লিখেছেন,’সংবিধান প্রদত্ত প্রকৃত ওবিসিদের বঞ্চিত করে, শুধুমাত্র তোষণের রাজনীতির ফায়দা তুলতে ও নিজের ভোট ব্যাংক’কে তুষ্ট ও মজবুত করার অসৎ উদ্দেশ্যে ভুরি ভুরি ওবিসি সার্টিফিকেট জারি করার পর, মহামান্য কলকাতা হাইকোর্ট তা অবৈধ আখ্যা দিয়ে খারিজ করে দেওয়ায়, কর্মসংস্থানের মরুভূমি পশ্চিমবঙ্গে যোগ্য ও মেধাবী চাকরি প্রার্থীদের নিয়োগের ন্যূনতম সম্ভাবনা পঞ্চত্বপ্রাপ্তি পাওয়ার পর আনন্দ নৃত্য ।’
কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন আইনজীবী প্রসূন মৈত্র বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে ধন্যবাদ জানিয়ে লিখেছেন,’অবশেষে ওবিসি আইনের দোহাই দিয়ে রাজ্য জুড়ে সরকারি চাকরিতে নিয়োগ বন্ধ রেখে হিন্দু যুবসমাজের চুড়ান্ত সর্বনাশ করার রাজ্য সরকারের চক্রান্তের বিরুদ্ধে সরব হলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। এই বিষয়ে আমি যেটা কয়েকমাস ধরে বলে আসছি সেটাই গতকাল আদালতে স্পষ্ট করে দিয়েছেন বিচারপতি মান্থা। রাজ্যের চিফ সেক্রেটারি জেনে বুঝে ন্যাকা সেজে রাজ্যে নিয়োগ বন্ধ রাখার দায় আদালতের উপর চাপাতে চেয়েছিলেন কিন্তু বিচারপতি তার কৌশল ধরে ফেলেন এবং পরিষ্কার জানিয়ে দেন যে নিয়োগ বন্ধ রাখার কোন নির্দেশ আদালত দেননি। অর্থাৎ, আত্মদীপ-এর কারণে সরকারি চাকরিতে মুসলমানদের অবৈধভাবে ঢুকাতে পারছেনা বলেই রাজ্যে নিয়োগ বন্ধ। গতকাল এই বিষয়ে যে পোস্ট করেছিলাম (https://www. facebook.com/share/p/1AFBw5NPek/?mibextid=wwXIfr) সেটা সম্ভবত যায়গামত পৌছে গেছে। এই ষড়যন্ত্রের কথা অবশেষে তুলে ধরার জন্যে বিরোধী দলনেতাকে ধন্যবাদ জানাই।’
প্রসঙ্গত,২০২৪ সালের মে মাসে ২০১০ সাল থেকে পশ্চিমবঙ্গে জারি করা সমস্ত অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণীর (ওবিসি) শংসাপত্র বাতিল করে দেয় কলকাতা হাইকোর্ট । বিচারপতি তপব্রত চক্রবর্তী এবং রাজশেখর মান্থার সমন্বয়ে গঠিত ডিভিশন বেঞ্চের রায়ে স্পষ্ট করে বলা হয়েছিল যে, যারা ইতিমধ্যেই এই সার্টিফিকেট ব্যবহার করে চাকরি পেয়েছেন তারা এই আদেশের দ্বারা প্রভাবিত হবেন না। বলা হচ্ছে যে এই রায় ২০১০ সালের পর জারি করা প্রায় পাঁচ লক্ষ ওবিসি সার্টিফিকেটকে প্রভাবিত করবে। এরপর হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় রাজ্য সরকার । কিন্তু চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে এই মামলার শুনানিতে বিচারপতি বি আর গাভাই এবং বিচারপতি অগাস্টিন জর্জ মসিহের ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, ওবিসি শংসাপত্র বাতিল নিয়ে কলকাতা হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছে, তাতে হস্তক্ষেপ করা হবে না।রাজ্যের দায়ের করা মামলা খারিজ করে দেওয়া হয় ।।