এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,০৩ জুন : মমতা ব্যানার্জিকে হারাতে দলীয় কার্যকর্তাদের বেশ কিছু দাওয়াই দিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । তিনি জানান, রোহিঙ্গাসের ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া এবং ৮০ ভাগ হিন্দু ভোটারকে বুথে টানতে পারলেই তৃণমূল কংগ্রেসের সরকার পতন সম্ভব । এজন্য পার্টির বুথগুলিতে ৩০ জন করে ‘যোদ্ধা’কে তৈরি করা এবং ভোটারদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রাখার উপর জোর দেন তিনি । শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন,’বদলা আমাদের নিতে হবে । যদি কালীগঞ্জে ৭৩% হিন্দু বুথে গিয়ে বিজেপিকে ভোট দিতে পারে তাহলে সমগ্র বাংলার ৭০ শতাংশ হিন্দু কেন ভোট দিতে পারবেন না ? আমাদের বাড়ি বাড়ি যেতে হবে । কপালের উপরে নয়, সোশ্যাল মিডিয়ার উপরে নয়, কর্মের উপরে প্রত্যেক বাড়িতে বাড়িতে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে বুথ কে শক্তিশালী করে প্রতি বুথে ৩০ জন করে যোদ্ধা তৈরি করে এই মমতাকে হারাতে হবে । আর ওর ভাইপোকে জেলে পাঠাতে হবে । এটাই হোক শমিক ভট্টাচার্যের সংবর্ধনায় আমাদের শপথ ।’
বিরোধী দলনেতা বলেন,’পার্টির কর্মসূচির ব্যক্তির সব জায়গায় ছড়িয়ে দিতে হবে । পার্টির কর্মসূচিতে এলাকার সংখ্যা ব্যাপকভাবে আনতে হবে । পার্টির সদস্যদের বাইরে জনগণকে যুক্ত করতে হবে । রাষ্ট্রীয় এবং রাজ্যের এই ইস্যু আছে তার পাশাপাশি স্থানীয় ইস্যুতেও ব্যাপক গণআন্দোলন গড়ে তুলতে হবে । ১১ হাজার নির্বাচিত পঞ্চায়েতের সঙ্গেও নিজের সম্পর্ক গড়ে তুলে একসঙ্গে এই তোষণ, দুর্নীতি, পরিবারবাদী পার্টিকে উপড়ে ফেলার জন্য আপনাদেরকে আরও সঙ্গবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে ।’
তিনি বলেন,’আমি মনে করি শক্তিশালী সংগঠন, হিন্দু জনতার সংযুক্তিকরণ এবং ২০২৬ এর সংকল্পপত্রের মাধ্যমে আগামী নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে একটি রাষ্ট্রবাদী সরকার আমরা তৈরি করবো যে সরকার সংকল্প পত্রের প্রত্যেকটা কথা অক্ষরে অক্ষরে পূরণ করবে৷ কারণ বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলি ঘোষিত সংকল্পপত্র অনুযায়ী অক্ষরে অক্ষরে পূরণ করেছেন। তাই শক্তিশালী সংগঠন, হিন্দু জনতার সংযুক্তিকরণ এবং ২০২৬ এর সংকল্পপত্র আমরা জানবো এবং জিতবো ।’
শুভেন্দু অধিকারী বলেন,’আর ৪ থেকে ৫ শতাংশ ভোটের দরকার আছে । গত লোকসভা ভোটে ৬৮ শতাংশ হিন্দু ভোট দিতে গেছে । আপনারা এখন থেকে বুথকে শক্তিশালী করুন । সম্পর্ক তৈরি করুন৷ ভোটারদের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক গড়ুন । ৮০ ভাগ হিন্দু যদি ভোট দিতে যায় তাহলে এই রাজ্যে ২০২৬ সালে এই জালি হিন্দু অত্যাচারী মুসলিম লীগ টু সরকার আছে পিসি ভাইপোর চোরেদের সরকার আছে এই সরকারকে উপরে ফেলে দেওয়ার কাজ বিজেপি করবে ।’
সিপিএমক থেকেও দলের কার্যকর্তাদের সতর্ক করে দিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী । এই বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সাবধান থাকতে হবে সিপিএম থেকে৷ মিছিলে বলে ধর্মনিরপেক্ষতা জিন্দাবাদ । মুসলমানদের মিছিলে হাঁটে আর ভোট কাটে হিন্দুদের । কত লোকসভাতে বিজেপির বারোটা সিট ক্ষতি করেছে । এই মাকুরা, যারা টুকরো টুকরে গ্যাং বলে, কাশ্মীর মাঙ্গে আজাদী বলে, অপারেশন সিঁদুরের বিরোধিতা করে, পাকিস্তানের জল বন্ধ কেন মোদীজি জবাব দাও বলে, এদের থেকেও আমাদের সতর্ক থাকতে হবে৷’
ভোটার তালিকা থেকে রোহিঙ্গা ভোটারদের নাম বাদ দিতে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সহযোগিতা করে চলার জন্য কার্যকর্তাদের পরামর্শ দেন শুভেন্দু অধিকারী । তিনি বলেন,’পহেলা আগস্ট থেকে সম্ভবত ভোটার লিস্টের বিস্তারিত কাজ শুরু হবে । নির্বাচন কমিশনের চেষ্টা করছে৷ কিন্তু আপনি যদি উদ্যোগ না নেন, আপনি যদি বিএলওর কাছে না পৌঁছান, আমি যদি নিজের দিকে জেনে এলাকায় রোহিঙ্গা মুক্ত ভোটার লিস্ট বানাতে না পারেন,তাহলে লড়বেন কি করে ? আশাকরি নির্বাচন কমিশন যেভাবে সংস্কারের পথে এগুচ্ছে এই বাংলায় বিগত দিনে যা হয়েছে আগামী দিনের সেটা হবে না । কিন্তু আমাদের কাজটাও সুন্দর করে গুছিয়ে করতে হবে ।’
আজ বৃহস্পতিবার সায়েন্স সিটি-তে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদের উপস্থিতিতে শমীক ভট্টাচার্যের নাম বঙ্গ বিজেপির পরবর্তী সভাপতি হিসেবে ঘোষণা করা হয়। নব্য রাজ্য সভাপতির সঙ্গে সর্বোতভাবে সহযোগিতা করে চলার শপথ করেন শুভেন্দু অধিকারী । তিনি বলেন,’আজকে আমরা রাজ্য সভাপতি হিসেবে যাকে পেলাম তার কয়েক দশকের বিজেপি, রাষ্ট্রবাদ, বিচারধারা এবং ভারতীয় সংস্কৃতি যার উপরে অত্যন্ত বাগ্মিতা রয়েছে । যার বক্তব্য শোনার জন্য মানুষ অপেক্ষা করে থাকে । যিনি রাজ্যসভায় যাওয়ার পরে বাংলাকে দিল্লিতে পৌঁছে দিয়েছেন । সেই শমীক ভট্টাচার্যকে আমি স্বাগত জানাই । একজন ডিসিপ্লিন্ড পার্টি ওয়ার্কার হিসেবে কথা দিতে পারি যে আপনাকে আমার দুটো হাত থাকলো৷ আই রেন্ডারিং মাই বোথ হ্যান্ডস টু স্ট্রেন্ডেনিং দ্য পার্টি ৷ পাঁচ হাজার বিজেপির কার্যকর্তার সাথে আমি আপনাকে কমিট করছি ।’
রাজ্যে প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়া নিয়ে বিরোধী দলনেতা মন্তব্য করেন,’এই সরকারের উপরে সর্বত্র ঘৃণা তৈরি হয়েছে । এদের কাছে এ রাজ্যের কোন মেয়ে সুরক্ষিত নয় । বাংলার মায়েদের আমরা দেবী দুর্গার চোখে পূজা করি । স্বামী বিবেকানন্দ মহাষ্টমীর দিন কুমারী পুজোর মধ্য দিয়ে বাংলায় কন্যা পূজা চালু করেছিলেন । কিন্তু এই বাংলায় কোনো কন্যা সুরক্ষিত নয় । আরজি করের অভয়া সুরক্ষিত নয় । কালিয়াগঞ্জ এর তামান্না সুরক্ষিত নয় । কসবার ল’কলেজের ছাত্রী সুরক্ষিত নয় । তাই আমাদের দায়িত্ব কন্যা বাঁচাও মমতা তাড়াও । হিন্দু বাঁচাও মমতা ভাগাও । আমরা মালদা দেখেছি । মা তে মালদা, ম তে মুর্শিদাবাদ, ম তে মহেশতলা, দায়ী কে ? ম-এ মমতা । আপনি ভাবতে পারবেন না স্বাধীনতার পরে প্রথমবার বাংলায় হিন্দু পলায়ন ঘটেছে । ধুলিয়ান সামসেরগঞ্জ থেকে দেশি নৌকায় চড়ে হিন্দুরা মালদার স্কুলে গেছে। হিন্দু জাগো ।’।

