এইদিন ওয়েবডেস্ক,পূর্ব মেদিনীপুর,২৬ জুলাই : ভুয়া ভোটারদের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দিতে বিশেষ নিবিড় সংশোধন (SIR) শুরু করেছে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন । বর্তমানে বিহারে এই কাজ চলছে । আপাতত যেটা জানা যাচ্ছে যে অন্তত ৭৫ লক্ষ ভুয়া ভোটার লিস্ট থেকে বাদ যেতে পারে ৷ তাদের মধ্যে বহু রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীও রয়েছে ৷ চলতি বছরের আগস্ট-সেপ্টেম্বর নাগাদ পশ্চিমবঙ্গে এসআইআর-এর কাজ শুরু হবে বলে জানা যাচ্ছে ৷ ইতিমধ্যে তার প্রক্রিয়াও শুরু হয়ে গেছে । রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর কথায়,এরাজ্যে অন্তত ১ কোটি ২৫ লক্ষ রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি মুসলিম রয়েছে যাদের ভোটার কার্ড,আধার কার্ড করে দিয়েছে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস । ওই অনুপ্রবেশকারী মুসলিমরা তৃণমূলের “কোর ভোটব্যাঙ্ক” হওয়ায় তাদের বাঁচানোর জন্য শাসকদল ইতিমধ্যেই ‘খেলা’ শুরু করে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি ।
আজ পূর্ব মেদিনীপুর জেলার তমলুকের নিমতৌড়ি স্মৃতিসৌধে কার্গিল বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে অপারেশন সিঁদুর-এর সাফল্যে একটি দলীয় অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন,’পুলিশ দপ্তরের মুখ্য সচিব গৌতম সান্যাল গতকাল আইপ্যাককে নিয়ে মিটিং করেছেন । মিটিং করে তিনি ডিএম, এসডিও ও বিডিওদের নির্দেশ দিয়েছেন যে দক্ষিণ ২৪ পরগনা, নদিয়া মুর্শিদাবাদ বীরভূম, মালদা,দক্ষিণ দিনাজপুরের উত্তর অংশ এবং কোচবিহারে ব্যাপক আকারে ডোমিসাইল সার্টিফিকেট বা আবাসিক শংসাপত্র ইস্যু করতে হবে । আর এই ডোমিসাইল সার্টিফিকেট দেওয়া হবে রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি মুসলিমদের ।’ তিনি এও বলেছেন, ‘ইতিমধ্যে আইপ্যাকের উদ্যোগে ৮ টা সীমান্তবর্তী জেলায় ৭৫,০০০ মুসলমান বাংলাদেশিকে ৬ নম্বর ফর্ম দেওয়া হয়েছে ।’ শুভেন্দু অধিকারী জানান,তিনি বিষয়টি ভারতের প্রধান নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমারের গোচরে আনবেন এবং আজ আজ ২৬ জুলাই থেকে দেওয়া ডমিসাইল সার্টিফিকেট গ্রহণ না করার জন্য তার কাছে অনুরোধ করবেন ।
তৃণমূল সুপ্রিমো ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে উদ্দেশ্য করে শুভেন্দু অধিকারী বলেন,’মমতা ব্যানার্জির জেনে রাখুন, এবারে আপনার আইপ্যাকের প্রতীক জৈন, গৌতম সান্যালরা কেউ আপনাকে বাঁচাতে পারবে না । যা করছেন খবর আসছে । এই রাজ্যের বিজেপি তার লড়াই লড়বে । বিরোধী দলনেতা হিসেবে এটা আমার দায়িত্ব ।’
রাজ্যের বিডিও-এসডিও -ডিএমদের সতর্ক করলেন শুভেন্দু অধিকারী
তিনি রাজ্যের বিডিও-এসডিও -ডিএমদের সতর্ক করে বলেন,’আমি পশ্চিমবঙ্গের বিডিও-এসডিও-ডিএমদের সতর্ক করছি যে আপনারা আজ ২৬ জুলাই থেকে দেওয়া ডমিসাইল সার্টিফিকেট যদি হিয়ারিংয়ে বা বাড়ি বাড়ি সার্ভেতে গ্রহণ করেন তাহলে পাঠান কালীর ভুয়া জন্ম-মৃত্যু শংসাপত্রের মতো আপনাদের কপালেও দুঃখ আছে ।’ তিনি বলেন,’দ্বিতীয় বিষয় হল, বিএলও নিয়ে আমি প্রতিবাদ করেছিলাম এগরা থেকে ৮৪ জন আইসিডিএস-এর নাম দিয়ে । তারপরে গোটা ভারতে পরিবর্তন হয়ে গেছে । ১.১-এ বলা আছে স্থায়ী কর্মীকে দিতে হবে । কিন্তু ইতিমধ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের দেওয়া তালিকা অনুযায়ী বহু বুথে স্থায়ী কর্মীদের দেয়নি এবং লিখে দিয়েছে যে ওখানে নাকি স্থায়ী কর্মী নেই । যদিও ১.১ অনুযায়ী কর্মী না থাকলে ১.২ তে দেওয়া যায় । প্যারাটিচার, পার্টটাইমার,ভোকেশনাল, আইসিডিএস ইত্যাদিকে নিযুক্ত করা যেতে পারে ।’ তবে এটাও বলেছেন,’আমি ওই বুথ গুলোতে প্রমাণ করে দেবো যে স্থায়ী কর্মী থাকা সত্ত্বেও এরা না দেখে এপিডেফিট দিয়েছে । জেলে যেতে হবে ।’
স্থানীয় এলাকার বিডিওকে সতর্ক করে শুভেন্দু অধিকারী বলেন,’তমলুকের বিডিওকেও বলে রাখি, আপনাদেরও জেলে যেতেই হবে । আপনারা জানেন না বিহারে যে এসআইআর হয়েছে, ৪০৩ জনে বিএলও- এর নামে এফআইআর হয়েছে । ৫৩ জন বিএলও গ্রেপ্তার হয়েছে এবং তারা এখন বিহারের বিভিন্ন জেলে বন্দী আছে । আপনারা ভাবছেন মমতার পুলিশ ধরবে না ? মমতার পুলিশ যদি না ধরে তাহলে কি করতে হয় চার বছরে আমি তা প্রমাণ করে দিয়েছি । আবার প্রমাণ করে দেবো।’
প্রতিটি মুসলিম গ্রামে পাওয়া যাবে বাংলাদেশি মেয়ে-বউ
শুভেন্দু অধিকারী বলেন,’একটাও রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি মুসলমানের নাম এরাজ্যের ভোটার তালিকায় থাকবে না । আমাদের এখানের ৫-৬ টা মুসলমান গ্রামেও ফেসবুকে বাংলাদেশের মুসলমান মেয়েদের পটিয়ে এখানে নিয়ে এসে বিয়ে করেছে । ওদের ভুয়ো আধারে ভোটার কার্ড করে দিয়েছে । সব মুসলমান পাড়ায় পাবেন বাংলাদেশের মেয়ে-বউ । বাংলাদেশের মুসলমান মেয়েদের ফেসবুকে পটিয়ে এনে বিয়ে করেছে । কেউ ভিসায় এসেছে, কিন্তু আর ফিরে যায়নি । অনেকেই ভিসা না করে মমতার দয়ায় ৫৪০ কিলোমিটার বেড়াবিহীন সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ করেছে ।’
তিনি বলেন,’বিহারে যদি ৫০ লাখ নাম বাদ যায় তাহলে এখানে এক কোটি পঁচিশ লক্ষ বাংলাদেশী মুসলমান এবং রোহিঙ্গারা বাদ যাবে । আর সমস্ত হিন্দুদেরকে আমি আশ্বস্ত করছি,ধর্মীয় কারণে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে আসা হিন্দুদের আশ্বস্ত করছি যে একটা কারোর কোন অসুবিধা হলে ওপরের মোদীজি যদি গ্যারান্টার থাকেন এই রাজ্যের এলওপিও একটা ছোটখাটো গ্যারান্টার ।’
অভিযোগ উঠছে যে আমির সেখ নামে যে যুবককে বাংলাদেশে পুশব্যাক করা হয়েছে সে আদপে ভারতীয় এবং তার বাড়ি কালিয়াচকের জালালপুর অঞ্চলের নারায়ণপুর গ্রামে ৷ এনিয়ে একজন সাংবাদিক শুভেন্দু অধিকারীকে প্রশ্ন করলে তিনি ওই সাংবাদিককে পালটা প্রশ্ন করে বলেন,’আপনি জানলেন কি করে ওই যুবক বৈধ ? আপনি জানলেন কি করে এবিপি আনন্দ বৈধ? আপনি কোর্ট নথি তুলে নিয়ে এসে আমাকে দেবেন, আমি রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী ভজন লাল শর্মাকে বলবো যে আপনার পুলিশকে বলুন ক্ষমা চেয়ে মুক্তি দিতে ৷’ তিনি বলেন,’আপনারা অনেকেই কান দিয়ে দেখেন । আর সেকুলারিজমের নামে আপনারা পশ্চিমবঙ্গের ইতিমধ্যেই সর্বনাশ করে দিয়েছেন । এক দেড় কোটি লোককে ঢুকিয়ে গিয়েছেন। যারা আমাদের জমি নিচ্ছে, রেশন নিচ্ছে,ভোট নিচ্ছে, সব নিয়ে নিচ্ছে আমাদের । এরা কারা ? এরা রোহিঙ্গা আর বাংলাদেশি মুসলমান ।’
ধর্মীয় কারনে পালিয়ে আসা বাংলাদেশি হিন্দুদের কোনো ভয় নেই
ধর্মীয় কারনে অত্যাচারিত হয়ে পালিয়ে আসা বাংলাদেশি হিন্দুদের অভয় বার্তা দিলেন শুভেন্দু অধিকারী৷ তিনি বলেন,’বাংলাদেশের যে হিন্দুরা হিন্দুস্তানে এসেছে, শুধুমাত্র ধর্মীয় কারণে, তার মধ্যে আমার মা আছেন, ৬০ সালে এসেছেন, শুধু হিন্দু বলে । আমার মায়ের পিতৃদেবরা শিক্ষক ছিলেন, মাখনলাল ভট্টাচার্য, বরিশাল, দশ বিঘা জমি আর চাকরি ছেড়ে এখানে এসে জুট মিলের ম্যানেজারি করে সংসার চালিয়েছেন । তাদের কোনো ভয় নেই ।’
কোচবিহারের নিশিকান্ত দাসকে এনআরসি নোটিস করেছে আসাম সরকার । এই বিষয়ে শুভেন্দু অধিকারী বলেন,’এই বিষয়ে যা বলার মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত বিশ্ব শর্মাকে বলে দিয়েছেন । পরিষ্কার বলেছেন যে সব হিন্দুদেরকে উনি প্রটেকশন দেবেন । যদি দুই একটা জায়গায় হেরফের হয়ে থাকে, তৃণমূলের সঙ্গে যোগসাজশে ফরেস্ট ডিপার্টমেন্ট করেছিল, ধরাও পড়ে যাবে । ওই জন্য ওদের প্রাক্তন সাংসদ পার্থপ্রতিম রায়কে ভুয়া পোস্ট করে ডিলিট করতে হয়েছে । মুম্বাই পুলিশ প্রমাণ করে দিয়েছে যে মমতা মিথ্যাবাদী ।’
সব শেষে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, আমি ১৫ ই আগস্ট এর পরে কন্যা সুরক্ষার মতো রাস্তায় নামবো । রোহিঙ্গা মুক্ত, বাংলাদেশী মুসলমান মুক্ত ডঃ প্রসাদ মুখার্জির বাংলা চাই ।’।

