এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,১০ মে : গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পহেলগামে ইসলামি সন্ত্রাসবাদীদের দ্বারা হিন্দু পর্যটকদের নরসংহারের পর সন্ত্রাসী রাষ্ট্র পাকিস্তানের বিরুদ্ধে “অপারেশন সিঁদূর” শুরু করেছে ভারত সরকার । মাত্র ২-৩ দিনের ভারতের প্রত্যাঘাতে দিশেহারা পাকিস্তান ৷ এদিকে পাকিস্তানকে বিপাকে পড়তে দেখে “যুদ্ধ নয়,শান্তি চাই” বুলি আওড়াচ্ছে ভন্ড বামপন্থী ও মেকি মানবতাবাদী কিছু লোকজন । যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে এই ছদ্ম ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীর দল আগামী ১২ মে কলকাতার মৌলালিতে একটা জমায়েতের কথা ঘোষণা করেছে । যেকারণে তারা সাধারণ মানুষের তীব্র ঘৃণার মুখে পড়তে হচ্ছে তাদের । ওই সমস্ত ‘সেকু-মাকু স্বঘোষিত বুদ্ধিজীবী’দের ‘দেউলিয়া-রাষ্ট্র বিরোধী-বাচাল’ বলে অবিহিত করেছেন এরাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ।
তিনি বেলুড় মঠের সাধারণ সম্পাদক স্বামী সুবীরানন্দ মহারাজের একটি বক্তব্যের ভিডিও এক্স-এ শেয়ার করেছেন । পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর বিষয়ে মহারাজ সাংবাদিকদের ক্যামেরার সামনে বলেছেন,’এটি অকল্যাণের উপর কল্যাণের যুদ্ধ । অশুভের উপর শুভের যুদ্ধ । বর্বরতার উপর সভ্যতার যুদ্ধ । বিবেকানন্দের ভারত, রামকৃষ্ণের ভারতের ওপর যদি কেউ আঘাত করে তাহলে ভারতবর্ষ বসে থাকবে না । প্রত্যাঘাত করবে । বরং প্রত্যাঘাত না করাই অপরাধ । সাধারণ মানুষ যেন দেশ এবং সরকারের পাশে দাঁড়ায় । এই যুদ্ধ সরকারের যুদ্ধ নয়, এই যুদ্ধ সাধারন মানুষের যুদ্ধ । ভারত মাতৃকাকে যেই কোন ধরনের আঘাত করবার চেষ্টা করবে ভারত মাতৃকার সন্তান হিসেবে আমরা অবশ্যই প্রত্যাঘাত করবো । স্বামীজি বলেছেন ভারতের কল্যাণ আমার কল্যাণ । স্বামীজি বলেছেন ভারতের প্রতিটি দলিল অত্যন্ত পবিত্র । স্বামীজি বলেছেন ভারত হচ্ছে যৌবনের উপবন এবং বার্ধক্যের বারাণসী । অতএব স্বামী বিবেকানন্দের ভারত রামকৃষ্ণের ভারত সভ্যতার প্রথম প্রভাত থেকে বিভিন্ন ঋষিমুনির ভারতকে যদি কেউ বিন্দুমাত্র আঘাত করে তাহলে ভারতবর্ষ বসে থাকবে না প্রত্যাঘাত করবে । তাতে আধ্যাত্মিক দিক থেকে শাস্ত্রীয় দিক থেকে কোন অপরাধ নেই । বরং প্রত্যাঘাত না করাই অপরাধ । সেজন্য ভারত সরকারের এই যে উদ্যোগ তাকে আমরা শুধু পূর্ণ সমর্থন করছি না, আমরা ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি যারা ভারত সরকার পরিচালনা করছেন ঈশ্বর তাদের শক্তি দিন, বুদ্ধি দিন যাতে করে আমরা এই যুদ্ধ স্পষ্টভাবে জিততে পারি ।’
শুভেন্দু অধিকারী লিখেছেন,’ জন বিচ্ছিন্ন সেকু-মাকু, স্বঘোষিত বুদ্ধিজীবী, দেউলিয়া রাষ্ট্র বিরোধী মনোভাবাপন্ন কিছু বাচাল আগামী ১২ তারিখ ‘যুদ্ধ- উন্মাদনা বিরোধী গণমিছিল’ সংগঠিত করেছে বলে শোনা যাচ্ছে। উক্ত সংগঠকদের উচিত বেলুড় মঠের সাধারণ সম্পাদক; স্বামী সুবীরানন্দ মহারাজ জীর এই বার্তাটি শোনা ও ওনার কথার অর্থ উপলব্ধি করা।’
তিনি লিখেছেন,’এই “যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই!” ব্রিগেড ভুলে গেছে ভারতবর্ষ কখনো কারোর ওপর প্রথমে আঘাত হানে না, কিন্ত প্রতিরক্ষার অধিকার আমাদের রয়েছে। আমাদের পবিত্র ভূমি নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু সহ অনেক বীর বিপ্লবী ও স্বাধীনতা সংগ্রামীদের জন্ম দিয়েছেন যাঁরা মাতৃভূমির স্বার্থে অস্ত্র তুলে নিতে বাধ্য হয়েছিলেন। এই তাত্ত্বিক আঁতেল কুল যারা সবসময়ই আমাদের আত্মরক্ষার অধিকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়, কিন্তু যখন আমরা আক্রান্ত হই তখন মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকে। এদের মুখ থেকে কখনো পাকিস্তান, বাংলাদেশ, চিন, নকশালদের বিরুদ্ধে কোনও কড়া শব্দ বেরোয় না। তাই পশ্চিমবঙ্গের সকল শুভবুদ্ধিসম্পন্ন ও গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষ এদের প্রত্যাখ্যান করেছেন।’
প্রসঙ্গত, জনৈক কুশল দেবনাথ নামে একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী একটি পোস্টে (লিঙ্ক : https://www. facebook.com/1000250026352 42/ posts /pfbid0Gwv13VyzQi9o7WPNJUgDm3Smirz bYjeCP3ZQE95LcycEkicAGdG1gw4xaAW6m4YXl/?app=fbl) ঘোষণা করেছিলেন, *পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত শুভবুদ্ধিসম্পন্ন, ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষের কাছে একটি আবেদন :
পহেলগাঁও-সন্ত্রাসে নিরীহ মানুষের মৃত্যুতে আমরা অত্যন্ত ব্যথীত, মর্মাহত। কিন্তু তাকে কেন্দ্র করে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান ভয়াবহ যুদ্ধ উন্মাদনার যে পরিস্থিতি বর্তমানে সৃষ্টি করা হয়েছে, তার বিরুদ্ধে আমাদের পথে নামা খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে। পহেলগাঁও- এর ঘটনার পর থেকে দুই প্রতিবেশী দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা উগ্র দেশপ্রেমের জিগির তুলে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ বাধানোর যে বাতাবরণ তৈরি করেছে, তা কখনোই দুই দেশের সাধারণ জনগণের স্বার্থ রক্ষা করবে না। এই যুদ্ধ-উন্মাদনা দুটি দেশের সাধারণ মানুষকে আরও কঠিন পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে যে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ, বিদ্বেষ ও বিভাজনের বিষ সমাজে সচেতন ভাবে বপন করা হচ্ছে, তা যে কোনো সুস্থ সমাজের জন্য চরম হানিকর।
তাই এই বিশেষ পরিস্থিতিতে আমরা পশ্চিমবঙ্গের সকল শুভবুদ্ধিসম্পন্ন, ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষের কাছে এই অন্যায় যুদ্ধ জিগিরের বিরুদ্ধে পথে নামার অনুরোধ জানাচ্ছি। যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই!
রাজনৈতিক সৃষ্টির চক্রান্তের বিরুদ্ধে সোচ্চার হোন!*
উপরোক্ত দাবিগুলিকে সামনে রেখে আমরা নিম্ন স্বাক্ষরকারীগণ আগামী সোমবার (১২/০৫/২০২৫) কলকাতার মৌলালী মোড় থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত একটি ‘যুদ্ধ- উন্মাদনা বিরোধী গণমিছিল’ সংগঠিত করার উদ্যোগ নিয়েছি। আপনিও এই উদ্যোগে সামিল হয়ে রাজ্যের মানুষের যুদ্ধবিরোধী আওয়াজকে শক্তিশালী করুন। আপনি এই উদ্যোগের সঙ্গে একমত হলে নিজের নাম যুক্ত করে সর্বত্র প্রচার করতে পারেন। আমাদের সকলের মিলিত উদ্যোগে শান্তি ও সম্প্রীতির কন্ঠস্বর জোরালো হয়ে উঠুক। *Say NO to war!*আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করো।
জমায়েত : দুপুর ৩টে,মৌলালী মোড়।ধন্যবাদ সহ … কুশল দেবনাথ,সুশান্ত ঝা,আলোক মুখার্জি, অলীক চক্রবর্তী,অমিতাভ ভট্টাচার্য, অতনু চক্রবর্তী, আশিস দাশগুপ্ত, মীর্জা হাসান,বোলান গঙ্গোপাধ্যায়,পূণ্যব্রত গুণ,রাংতা মুন্সি, শতাব্দী দাশ,সোমা মারিক,মহাশ্বেতা সমাজদার, অর্ক ভাদুড়ী, মোহিত রনদীপ,সুমিতা দাস, মৌসুমী ভৌমিক, সুগত রায়,কণিষ্ক চৌধুরী, প্রণব দে, ফারুক উল ইসলাম, সীতাংশু শেখর,ফরিদুল ইসলাম, মেরুনা মুর্মু,সায়ন চক্রবর্তী, মীর ফারহাদ,সঞ্জীব আচার্য, অমিত ভাদুড়ি,সুমন কল্যাণ মৌলিক,সুকৃতি রঞ্জন বিশ্বাস, কাঞ্চন সরকার, ঝুমা অভয়া চক্রবর্তী, সন্দীপ দাশগুপ্ত,প্রদীপ্ত ভট্টাচার্য, অভিজিৎ গুপ্ত, মানস ঘোষ,অচিন চক্রবর্তী, শমীক বন্দোপাধ্যায়, দেবলীনা মজুমদার, কৃষ্ণা বন্দোপাধ্যায়, তীর্থঙ্কর চন্দ, অপরাজিতা মুখার্জি, রথীন পাল চৌধুরী,শৈলেন ভট্টাচার্য (ক্যাপ্টেন),বীরেন ঘোষ,অনুরাগ মৈত্রীয়ী, মীরাতুন নাহার । নাম কপি পেষ্ট করার অনুরোধ জানাচ্ছি।যত বেশী নাম আসুক।’
তবে কুশল দেবনাথ নামে ওই ফেসবুক ব্যবহারকারী প্রোফাইলে নিজের কোনো ছবি ব্যবহার করেননি । পরিবর্তে একটা কুকুরের ছবি দিয়েছেন । কিন্তু চলতি ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ বন্ধে তার এই বার্তার তীব্র ভাষায় কটাক্ষ করছেন নেটিজেনরা । তার মধ্যে শৌভিক পাল নামে এক ব্যবহারকারী লিখেছেন,’মাওবাদীরা বলে—বন্দুকের নলই ক্ষমতার উৎস, অর্থাৎ সশস্ত্র বিপ্লব–ওই যুদ্ধই। এর বিরুদ্ধে আপনাদের অবস্থান কি? জানতে মন চায় ।’
প্রসেনজিৎ হালদার লিখেছেন,’সব কটাকে চিনে রাখা হোক। শান্তি চাওয়া আর দেশের ক্ষতি চাওয়া এক জিনিস নয়।’ মৃণাল হালদারের প্রতিক্রিয়া,’একটা প্রাসঙ্গিক কথা জানাই সকলকে। আমার পাড়ায় এখন দেখি আর কমিউনিস্টরা পথসভা করারও লোক পায় না। একদিন দেখি কলেজের গোটা তিনেক বাচ্চাছেলেকে দিয়ে ভাষন দেওয়াচ্ছে। আমি ভাবছি মৌলালীর মোড়ে যখন লোকে এদের মুখে থুতু দেবে তখন এরা কিভাবে নিজেদের শান্তি বজায় রাখবে।’।

