এইদিন ওয়েবডেস্ক,মালদা,০২ ডিসেম্বর : আজ মঙ্গলবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করে ২০১১ সাল থেকে এযাবৎ, ১৫ বছরে রাজ্য সরকারের উন্নয়নমূলক কাজের খতিয়ান তুলে ধরেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি । যার তিনি নাম দিয়েছেন ‘উন্নয়নের পাঁচালি’ । মমতার বর্নিত এই ‘উন্নয়নের পাঁচালি’কে ‘আই প্যাকের তৈরি করা চিত্রনাট্য’ ও ‘ঢপের পাঁচালী বললেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ।
আজ মালদার ইংরেজবাজারে হনুমান মূর্তি উদ্বোধনে গিয়ে মমতার ‘উন্নয়নের পাঁচালি’র প্রতিটি পয়েন্ট ধরে ধরে বেশ কিছু প্রশ্ন তুলেছেন শুভেন্দু । তিনি বলেন,’আজকে মুখ্যমন্ত্রী আই প্যাকের তৈরি করা চিত্রনাট্য, “উন্নয়নের পাঁচালী” প্রকাশ করেছেন৷ আই প্যাকের এই চিত্রনাট্যে কি কি আছে আমি বলে দিচ্ছি : কাল থেকে তৃণমূলের একটা নতুন ক্যাম্পেনিং শুরু হবে, আজ তার লঞ্চ হয়ে গেছে৷ উন্নয়নের পাঁচালী…. ঢপের পাঁচালী….ক্ষতশ্রীর পাঁচালি….জলাঞ্জলির পাঁচালি ।’
তিনি বলেন,’এটাতে প্রত্যেক বিধানসভায় ১৫ জনের কিং গঠন করা হয়েছে । মিথ্যা প্রচার করার জন্য তিনটে দলে ভাগ করা হয়েছে । এরা প্রত্যেক গ্রাম পঞ্চায়েতে যাবে মন্দির দর্শন করবে । তারপরে জনসভা করবে কমিউনিটি লাঞ্চ করবে । প্রচুর অবৈধ টাকা এদের । তারপরে একজন কর্মীর বাড়িতে ভিজিট করবে । সন্ধ্যা বেলায় স্ট্রিট কর্নার হবে । তারপরে এলইডি ভ্যান এর মধ্য দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রচার হবে । যে প্রচার বাস্তবের সঙ্গে কোন সম্পর্ক নেই।’
শুভেন্দু বলেন,’মুখ্যমন্ত্রী আজকে যেগুলো বলেছেন তার মধ্যে এত মিথ্যা এবং অসত্য ছিল…তিনি বলেছেন রাজ্যের জিএসডিপি হয়েছে কুড়ি লক্ষ ৩১ হাজার কোটি টাকা । সম্পূর্ণ মিথ্যা । দারিদ্র সীমার বাইরে আনা হয়েছে এক কোটি ৭২ লক্ষ মানুষকে৷ প্রধানমন্ত্রীর অন্ন সুরক্ষা যোজনার চাল আর গম যদি বন্ধ হয়ে যায় তাহলেই বুঝতে পারবেন পশ্চিমবঙ্গের লোকের অবস্থাটা কি ।’
তিনি বলেন,’বলেছেন, বেকারত্বের হার কমিয়েছেন ৪০ শতাংশ । আমি মুখ্যমন্ত্রীকে বলব তিনি কাদের চাকরি দিয়েছেন তাদের নাম, বাবার নাম এবং ঠিকানা দিয়ে সম্পূর্ণ তালিকা প্রকাশ করুন । এই মুখ্যমন্ত্রী বামফ্রন্টের রেখে যাওয়া এক কোটি বেকারকে ২ কোটি ১৫ লক্ষে পরিণত করেছেন । এই মুখ্যমন্ত্রী ২০১৫ সালে শেষ এসএসসি পরীক্ষা করিয়েছিলেন । ২০১৭ সালের শেষ পিএসসি হয়েছিল । দীর্ঘ ৮-৯ বছর ধরে কোন পরীক্ষা হয়নি চাকরি হয়নি । চাকরি চুরি হয়েছে । যে মুখ্যমন্ত্রীর ডবল ডবল চাকরি থেকে বলেছিল সেই মুখ্যমন্ত্রীর আমলে চার ডবল চাকরি চলে গেছে এটা সবাই জানে । মুখ্যমন্ত্রীকে প্রশ্ন করছে বিরোধী দলনেতা ৫১ টা কর্ম বিনিয়োগ কেন্দ্র বন্ধ কেন ? মুখ্যমন্ত্রীকে প্রশ্ন করছে বিরু জননেতা যুবশ্রীর কি হল? এমপ্লয়মেন্ট ব্যাঙ্ক পনেরশো টাকা করে বেকার ভাতা আপনি বন্ধ করে দিয়েছেন ।’
শুভেন্দু অধিকারী মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘আপনি বলেছেন কৃষি ক্ষেত্রে উন্নয়ন হয়েছে ৯.১৬ গুন । আপনাকে বলতে হবে সারের কালোবাজারি হয় কেন ? ধান কেন কেনা হয় না ? আপনি এবারে ১৫ কুইন্টাল ধান যেটা কেনার কথা সেটা কমিয়ে ১০ কুইন্টাল করেছেন । আপনি কৃষকদের সর্বনাশ করছেন । প্রধানমন্ত্রীর সব কৃষককে পিএম কিষান সম্মাননিধি দিতে চায় । ৮৩ লক্ষ কৃষক পরিবার পাওয়ার যোগ্য । আপনি কেবলমাত্র হিন্দু হওয়ার জন্য ও বিজেপি করার জন্য তেত্রিশ লক্ষ নাম পাঠাননি, ৫০ লক্ষ নাম পাঠিয়েছিলেন এবং প্রধানমন্ত্রীর সবাইকে টাকা দিয়েছিলেন । ৩৩ লক্ষ নাম আপনি কেন পাঠাননি? ‘
শুভেন্দুর অভিযোগ ম,’আপনার রেকর্ড অনলাইনে পাওয়া যায় না । আর যত জমি আছে আপনার লোকেরা চেঞ্জ করে রেকর্ড কালো করে দিয়েছে । ল্যান্ড ডিপার্টমেন্ট আপনার হাতে সম্পূর্ণ দুর্নীতিতে ভর্তি ।’ তিনি বলেন,’আপনি আজ বলেছেন দু লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে । ২০১২ সালে হলদিয়ায় প্রথম বিজিবিএস থেকে শুরু করে লাস্ট যে বিজিবিএস করেছেন তাতে মৌ চুক্তি করেছেন, প্রকাশ্যে সাংবাদিকদের সামনে ১৬ লক্ষ কোটি টাকা । আমরা চাই মৌ অনুযায়ী বিনিয়োগ কোথায় কোথায় হয়েছে আপনাকে তালিকা দিতে হবে। আপনার হাতে ল্যান্ড ব্যাংক নেই । আপনি ল্যান্ড পলিসি তুলে দিয়েছেন । আপনার শিল্পের বিনিয়োগের ব্যাপারে প্রয়াত রতন টাটা যেটা বলে গেছে সেটাই সঠিক । রতন টাকা বলেছিলেন,মাথায় বন্দুক রেখে আমাকে রাজ্য থেকে তাড়ানো হল । আমি ব্যাড “এম” থেকে গুজরাটের গুড “এম”-এর কাছে যাচ্ছি । তখন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন নরেন্দ্র মোদি । আর এই রাজ্যের বিরোধী দলনেত্রী ছিলেন আপনি । আপনার সার্টিফিকেট প্রয়াত রতন টাকা দিয়ে গেছে।’
শুভেন্দু বলেন,’আবার আজকে বলেছেন দেউচা পাচাপিতে এক লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান হবে । আপনি বিগত তিনটে নির্বাচনে একই ভাঙ্গা রেকর্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। ৪২ লক্ষ্য ছেলেমেয়েকে স্কিল ট্রেনিং দেওয়া হয়েছে । এরও তালিকা আমরা দেখতে চাই। এদের প্লেসমেন্ট এর তালিকা দেখতে চাই ।’
তিনি বলেন,’আপনার আমলে নাকি স্বাস্থ্য বাজেটে ছয়গুণ বৃদ্ধি হয়েছে । আপনি অবিলম্বে আয়ূষ্মান ভারত চালু করুন । মিথ্যাচার । মুখ্যমন্ত্রীর উন্নয়নের পাঁচালী নয়, দুর্নীতি, তোষণ আর সীমাহীন স্বেচ্ছাচারিতার পাঁচালী মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ করেছেন আজ । আমরা বলি এটা জলাঞ্জলির পাঁচালী । বাংলার গৌরব, সংস্কৃতি, মায়ের সম্মান , কন্যা সুরক্ষা, আপনার হাতেই জলাঞ্জলি হয়েছে । এর উত্তর অভয়ার বাবা-মা আপনাকে সঠিকভাবে দিতে পারবে।’
পাশাপাশি বিরোধী দলনেতা ঘোষণা করেন,’তাই এই মুখ্যমন্ত্রীর মিথ্যাচারিতার বিরুদ্ধে বিজেপি যথাসময়ে শ্বেতপত্র প্রকাশ করা শুধু নয়, ২৯৪ টা বিধানসভা কেন্দ্রে আপনি ১১,১৬ এবং একুশের বাজেটে কি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এবং কি করেছেন, আমরা জানুয়ারি মাসে প্রতিটা বিধানসভায় উপস্থিত হয়ে আপনার নির্বাচিত এমএলএ-দের বিরুদ্ধে আমরা চার্জশিট দাখিল করব ।’।

