এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,১২ জুন : দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার মুসলিম অধ্যুষিত মেটিয়াবুরুজ বিধানসভার রবীন্দ্রনগর থানার মহেশতলা পুরসভারর বীন্দ্রনগর এলাকায় পুলিশ ও হিন্দুদের উপর “জিহাদি হামলার” অভিযোগ তুলেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । বুধবার দুপুর থেকে প্রায় রাত অব্দি কার্যত রনক্ষেত্রের চেহেরা নেয় গোটা এলাকা । ব্যাপক পাথরবাজির পাশাপাশি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে ।
এখনও থমথমে মহেশতলা। ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ১৬৩ ধারা জারি করা হয়েছে সেখানে। সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে কলকাতা পুলিশ । এদিকে একটি ভিডিও বার্তায় মহেশতলায় “জেহাদিদের দ্বারা মাতা তুলসী’র” অপমানের প্রতিবাদে আজ গৈরীক ধ্বজ নিয়ে প্রতিবাদের ডাক দিয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ।
বুধবার রাতে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও বার্তায় তিনি এই ডাক দেন । তিনি সেখানে লিখেছেন,’আজ ডায়মণ্ড হারবার জেলার মহেশতলার রবীন্দ্রনগরে মমতা পুলিশের সামনে বিধর্মীদের দ্বারা মাতা তুলসী’র অপমান ও অপবিত্র হয়েছে। আমি একজন সনাতনী হিসেবে সকল সনাতনীদের কাছে আমার আবেদন, আগামীকাল নিজ নিজ এলাকায় শান্তিপূর্ণ ভাবে গৈরীক ধ্বজ নিয়ে জেহাদিদের দ্বারা মাতা তুলসী’র অপমানের প্রতিবাদ করুন। জয় মাতা তুলসী রানীর জয় । জয় শ্রী রাম৷’
ভিডিওতে বিরোধী দলনেতাকে বলতে শোনা গেছে, পশ্চিমবঙ্গে মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বে তোষণের রাজনীতি এবং পুলিশ ও কলকাতা পুলিশ যার নাম এখন “মমতা পুলিশ” তাদের একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের জিহাদি, দাঙ্গাবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না গ্রহণ করার জন্য হাত-পা বেঁধে রেখে দেওয়া হয়েছে । পশ্চিমবঙ্গে হিন্দু সংখ্যালঘু এলাকা গুলিতে ঘরবাড়ি লুট, দোকান লুট, অগ্নিসংযোগ, শারীরিক নির্যাতন, রক্তপাত হচ্ছে । এমনকি ধুলিয়ানে হরগোবিন্দ দাস এবং চন্দন দাসের নিশংস বর্বররিচিত হত্যা আপনারা দেখেছেন । মোথাবাড়ির ঘটনার পরই আমরা সনাতনীদের কাছে, দেশপ্রেমিকদের কাছে আবেদন করেছিলাম “আজ যাহা মোথাবাড়ি আগামীকাল তাহা আপনার বাড়ি” । অনেকে ভেবেছিলেন মালদায় তো হিন্দুরা সংখ্যালঘু প্রায় । তারপরে সামশেরগঞ্জ, ধুলিয়ান দেখলেন । বললেন ওখানে ১৬-১৮ শতাংশ হিন্দু থাকে তাই হয়তো অত্যাচার হচ্ছে । আজকে কলকাতার উপকণ্ঠে ডায়মন্ড হারবার লোকসভার মেটিয়াবুরুজ বিধানসভার অন্তর্গত মহেশতলা পুরসভার রবীন্দ্রনগর থানা এলাকার,যা ডায়মন্ড হারবার জেলা পুলিশের মধ্যে পড়ে, যার দায়িত্ব আছে পুলিশ মন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি এবং চাটুকার রাজীব কুমার… এখানে মানুষ যা দেখলেন… যারা মনে করেন মালদা মুর্শিদাবাদে হয়েছে তো কি আছে আমরা ভালো আছি… তথাকথিত সেকুলার এবং যারা ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলেন….আজকের সমগ্র মহেশতলার একটা অংশ এবং রবীন্দ্রনগর থানা এলাকায় যেভাবে হিন্দুদের উপর আক্রমণ মন্দিরে ভাঙ্গা দোকান লুটপাট, রক্তপাত হয়েছে… শুধু হিন্দুদের ওপর নয় যে পুলিশের হাত-পা বেঁধে দেওয়া হয়েছে বিশেষ রাজনীতির কারণে… এই সম্প্রদায়ের টিকি পর্যন্ত ছোঁয়া যাবে না… তাদেরকে দিয়ে আজকে ৫০ থেকে ৪০ জন পুলিশ রক্তাক্ত হয়েছে । মহিলা পুলিশরা রক্তাক্ত হয়েছেন । একাধিক হিন্দুর বাড়ি, গাড়ি এবং মোটরসাইকেল শুধু নয়, পুলিশের গাড়ি পর্যন্ত জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে ।
তিনি বলেন,এর আগে ২০২২ সালের লক্ষ্মীপুজোর দিন মমিনপুর ইকবালপুর এর ঘটনা স্মরণ করিয়ে দিই । আমি কলকাতা হাইকোর্টের তৎকালীন অবসরকালীন বেঞ্চে গিয়েছিলাম । মাননীয় বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী সেদিন এনআইএ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন । তারপর থেকে গার্ডেনরিচ,মেটিয়াবুরুজ, মমিনপুর ইকবালপুর, যা ফিরহাদ হাকিমের কথায় “মিনি পাকিস্তান”,সেখানে যা দৃশ্য আপনারা দেখেছেন, আমরা আজ ভবানী ভবনে গিয়ে প্রতিবাদ করেছি কাল বিধানসভায় গিয়ে প্রতিবাদ করব । আমরা ঘরে বসে থাকবো না । ধুলিয়ান, সামসদগঞ্জ, মোথাবাড়ির মতো সব হিন্দুকে সব ক্ষতিপূরণ হিন্দুদের দ্বারা সংগ্রহ করা অর্থে আমরা দেব এবং আইনি লড়াইয়ে তাদের পাশে থাকব । তাদেরকে ন্যায় এবং বিচার পাইয়ে দেওয়ার কাজ আমরা করব ।
শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, আমি হিন্দু সনাতনীদের সমস্ত সংগঠনের কাছে আবেদন করব আগামীকাল গেরুয়া ধ্বজ হাতে নিয়ে এই ঘটনার বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণভাবে গোটা রাজ্য জুড়ে প্রতিবাদ করার জন্য । আপনারা দেখেছেন রবীন্দ্রনগরে একটি মন্দিরের সামনে তুলসী মঞ্চকে একজন বিধর্মী জঙ্গি পুলিশের সামনে তুলে ফেলে দিয়ে তুলসী মাতার অপমান করেছে । সমগ্র হিন্দু সমাজ এবং প্রতিটি বাড়িতে আমরা তুলসী মাতাকে দেবী হিসেবে পূজা করি৷ আমরা বছরের একটা দিন তুলসী পূজন দিবস হিসেবে পালন করি । আমাদের গীতায় তুলসী দেবীর কথা বলা আছে । আজকে তুলসী মাতার এক বিধর্মীর হাতে মমতা পুলিশের সামনে যেভাবে অপমান করা হলো তা কখনো মেনে নেওয়া যায় না । এই হিন্দু বিরোধী সরকার, হিন্দু বিরোধী পুলিশের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক প্রতিবাদ আপনারা করুন । মাতা তুলসীকে সামনে রেখে আপনারা শপথ গ্রহণ করুন এই অন্যায়ের প্রতিবাদ আমরা করব । গণতান্ত্রিকভাবে আমরা প্রতিশোধ নেব এবং আজ না হয় কাল এদের শাস্তির ব্যবস্থা আমরা করব ।’
জানা গেছে, মহেশতলা পৌরসভার রবীন্দ্রনগর থানার পাশে শিব মন্দিরের জায়গা অবৈধভাবে দখল করে ফলের দোকান করার অভিযোগ ঘিরে বিবাদের সূত্রপাত । বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষের দাবি,মন্দিরের ভক্তদের বারবার বলা সত্ত্বেও সেই দোকান সরানো হয়নি। তারপর সেখানে মন্দির কমিটির লোকজন তুলসী মঞ্চ বানিয়ে দিলে মুসলিম জনতা এসে তুলসী মঞ্চ, শিব মন্দির এবং আশেপাশে হিন্দু দোকানে ভাঙচুর চালায়। প্রথম মন্দির চত্বরে হামলা করা হয়, তারপর হিন্দুদের উপর হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ করেছেন তিনি ।।

