এইদিন ওয়েবডেস্ক,বসিরহাট(উত্তর ২৪ পরগণা),১০ ডিসেম্বর : আজ উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বসিরহাটের জনসভায় ভাষণ দেওয়ার সময় বাংলাদেশের কট্টরপন্থী মুসলিমদের ‘রাজাকারের নাতি’ ও ‘পাকিস্তানের অবৈধ সন্তান’ বলে অবিহিত করলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । অন্যদিকে বাংলাদেশের তদারকি সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মোঃ ইউনূসের নির্দেশে ঢাকা সহ বিভিন্ন শহরের রাজপথে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ভিডিও দেখিয়ে সেদেশের মুসলমানদের উত্তেজিত করার ষড়যন্ত্র শুরু হয়ে গেছে । যাতে বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়েছে ।
বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর অমানবিক অত্যাচারের বিরুদ্ধে, ভারতের জাতীয় পতাকার অবমাননার প্রতিবাদে এবং স্বামী চিন্ময় প্রভুর মুক্তির দাবিতে আজ মঙ্গলবার বিকেলে বঙ্গীয় হিন্দু রক্ষা সমিতির ডাকে বসিরহাটের নকুয়াদহ হাজরাতলা মোড়ে বিক্ষোভ সভায় অংশগ্রহণ করেন তিনি । ভাষণে তিনি বলেন, ‘আজকে সকাল থেকে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থলবন্দর ভোদাডাঙ্গা অবরোধ করেছেন আপনারা ট্রু ইন্ডিয়ানরা । আমি আপনাদেরকে স্যালুট এবং প্রনাম করি । আপনারা হিন্দুরা পেট্রোপলের পরে আজকে আবার তাকর দেখাচ্ছেন । তাই এই রাস্তা দিয়ে বাংলাদেশের পণ্য পরিবহন বন্ধ আছে । এ তো সবে সকাল । এখনো বেলা হয়নি । পেট্রোপলের পরে ভোদাডাঙ্গাতে ট্রেলার দেখালাম । মন্দির ভাঙ্গা বন্ধ না করলে, চিন্ময় প্রভুকে মুক্তি না দিলে, জিহাদীদের আওয়াজ বন্ধ না হলে নতুন বছরের সিনেমা দেখাবো ।’
তিনি বলেন,’আপনারা জানেন গোটা পৃথিবীর সনাতনী সংগঠনগুলি পথে নেমেছে । আজকে বিশ্ব মানবতা দিবস । মানবতার সব সীমা লঙ্ঘিত হচ্ছে বাংলাদেশ ।
আপনারা জানেন বাংলাদেশে মানবাধিকারের কোন অস্তিত্ব নেই । বাংলাদেশের হিন্দুদের জনসংখ্যা তাড়াতে তাড়াতে, ধর্ম পরিবর্তন করতে করতে আজকে মাত্র ৭ শতাংশে নামিয়ে এনেছে । কেমন আফগানিস্তান, পাকিস্তানে হিন্দু,শিখ, জৈনদেরকে কার্যত শূন্য করে দেওয়া হয়েছে । এদেরও একটাই এজেন্ডা বাংলাদেশ থেকে হিন্দু শূন্য করতে হবে । হিন্দু এলাকায় হিন্দু ভাইদের সামনে, হিন্দু মন্দিরের সামনে মিছিল করে বলছে ‘নয় ধর্ম ছাড়ো নয় দেশ ছাড়ো’ । বলছে, ‘ভারত জাতের মামার বাড়ি বাংলা ছাড়ো তাড়াতাড়ি’ । কি। সাহস !’
এরপর তিনি বাংলাদেশের কট্টর ইসলামী মৌলবাদীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আরে, রাজাকারের নাতি, আমরা তোদের উপর নির্ভর করি না। রাজাকারের নাতি, পাকিস্তানের অবৈধ সন্তান তোদের ওপর নির্ভত করি না আমরা । আমাদের ওপর তোরা নির্ভর করিস,মোল্লা ইউনূস…ভালো করে শুনে রাখো । আমরা ৯৭ টা পণ্য না পাঠালে তোদের ভাত কাপড় জুটবে না। ঝাড়খন্ড থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ ফারাক্কা দিয়ে না পাঠালে ৮০ভাগ গ্রামে বিদ্যুৎহীন থাকবে । আবার বলছে কলকাতা দখল করবে !’
শুভেন্দু অধিকারী বলেন,’টাইট কিভাবে দিতে হয় আমরা জানি । আমাদের দেশে এমন একজন প্রধানমন্ত্রী আছেন চিনি ৫০০ বছরের স্বপ্ন পূরণ করে অযোধ্যায় রাম মন্দির সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে নির্মাণ করে দিয়েছেন । আমাদের দেশে এমন একজন প্রধানমন্ত্রী আছেন যিনি জি-টয়েন্টির সভাপতিত্ব করেছেন । আমাদের দেশে এমন একজন প্রধানমন্ত্রী আছেন যিনি ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির এক দেশ, এক নিশান, এক বিধান ৩৭০,৩৫-এ কে উপরে ফেলে দিয়ে কাশ্মীরে ভারতের ঝাণ্ডা উড়িয়েছেন । আমাদের দেশে এমন একজন প্রধানমন্ত্রী আছেন যিনি কোভিডে ১০ মাসের মধ্যে চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের দিয়ে আমাদের ৩ টে দেশীও ভ্যাকসিন বের করে হাসিনা ম্যাডামের অনুরোধে ওই বাংলাদেশকে কোভ্যাকসিন দিয়েছেন । তার নাম নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী । ২০১৪ সালের আগে ভারত ১২ তম অর্থনৈতিক দেশ ছিল৷ আর আজ চতুর্থ । সামরিক শক্তিতে আমেরিকা, রাশিয়ার পরে চীনের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার ক্ষমতা যদি কারোর থাকে তার নাম ভারতবর্ষ ।’
এরপর বাংলাদেশী কট্টরপন্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন,’খুব আওয়াজ না ? বড় বড় আওয়াজ…ওই আওয়াজ বন্ধ করতে আমরা জানি । মনে নাই ১৯৭১ সালের কথা ? ৭১ সালে ৩০ লক্ষ বাংলাভাষি শহীদ হয়েছে । যার মধ্যে গরিষ্ঠ সংখ্যক বাঙালি হিন্দু । ১৭ হাজার ভারতীয় সেনা,বিএসএফ আত্ম বলিদান দিয়ে বাংলাদেশ তৈরি করেছে । ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী জিন্না আর নেহরুকে বলেছিলেন তোমরা ভারত ভাগ করেছ আর আমি পাকিস্তানকে টুকরো টুকরো করাবো । আমাদের সঙ্গে পাঙ্গা নিতে আসবেন না । আলু না পাঠালে চোখের জল নাকের জল এক হয়ে যায় । পিঁয়াজ না পাঠালে চোখের জল নাকের জল এক হয়ে যাবে । লবণ তৈরি হয় কিন্তু আয়োডিন দেয় ভারত মাতা । বড় বড় কথা !’
সম্প্রতি বিএনপি-এর রিজভী নামে এক নেতা ভারতের পণ্য বয়কট করার ডাক দেয়ার উদ্দেশ্যে ঢাকায় প্রকাশ্য রাস্তায় ভারতের শাড়ি পুড়িয়েছিলেন । ওই নিয়ে তার উদ্দেশ্যে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘কে এক রিজভী, রাজাকারের বাচ্ছা বউয়ের শাড়ি পোড়াচ্ছে । ওই রিজভীকে বলি কলকাতায় আপনি এসেছিলেন৷ হার্টের অপারেশন করিয়েছেন । হার্টের মধ্যে একটা রিং পরিয়েছেন । ওই রিংটা খুলে বের করে ফেলতে পারবেন, বউয়ের শাড়ি তো খুব পোড়ালেন ? পারবেন না৷ ওই বেকার রিজভী আবার বলে কি বাংলাদেশের না আসায় কলকাতা সব হোটেল বন্ধ হয়ে গেছে । কি সাহস ?’
শুভেন্দু অধিকারী উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে আহ্বান জানান,’এটা বাংলাদেশের হিন্দুদের বাঁচার লড়াই নয়, এটা অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই। তাই জাগো হিন্দুই জাগো । আওয়াজ উঠছে এপার বাংলা থেকে । বঙ্গীয় হিন্দু রক্ষা সমিতি পশ্চিমবঙ্গের সর্বত্র প্রতিটা মহকুমাতে, কলকাতার রাজপথে সমস্ত সনাতনী রাষ্ট্রবাদী সংগঠনকে এক সূত্রে বেঁধে একদিকে ওঁ, স্বস্তিক, বজরংবলীর ধ্বজ, অন্যদিকে বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম মহা শক্তিধর ভারতবর্ষের যুব রঞ্জিত পতাকা নিয়ে আমাদের এই কর্মসূচি চলছে ।’
প্রসঙ্গত, উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বসিরহাট হল তৃণমূল কংগ্রেসের কুখ্যাত নেতা শেখ শাহজাহানের এলাকা । শাহজাহানের আমলে হিন্দু মহিলা পুরুষদের নিদারুণ-নিপিরনের শিকার হতে হতে বলে অভিযোগ । বর্তমানে শাজাহান জেলে । ইতিমধ্যে ওই এলাকাতে গিয়ে জনসভা করে এসেছিলেন শুভেন্দু অধিকারী সহ রাজ্য বিজেপির একাধিক নেতানেত্রী । একসময়ের সন্ত্রাস কবলিত বসিরহাটে জনসভা করা হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের পক্ষে কতটা কঠিন ছিল তা শুনিয়ে দিয়ে শুভেন্দু অধিকারী বলেন,’বসিরহাটে কোন অনুষ্ঠান অনেক প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে আপনাদের করতে হয়।’
এদিকে ক্রেনে জায়ান্ট স্ক্রীন লাগিয়ে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ভিডিও দেখানো শুরু করেছে বাংলাদেশের মোহাম্মদ ইউনূসের সরকার । মনোজ শ্রীবাস্তব নামে একজন এক্স ব্যবহারকারী ভিডিওটি শেয়ার করে লিখেছেন, ‘হিন্দুদের শত্রু । জর্জ সোরাস গ্যাং এর গভীর কৌশল । অখিলেশের নির্দেশে রাহুল তেজস্বী কেজরিওয়াল । বাংলাদেশে পর্দায় বাবরি মসজিদ ধ্বংস দেখানো হচ্ছে । যাতে মুসলমানদের ভয়ানক রক্তপাত ঘটাতে উস্কে দেওয়া যায় । ভারতের বিশ্বাসঘাতক বিরোধিতা । হিন্দুদের চ্যালেঞ্জ ।’।