এইদিন ওয়েবডেস্ক,মহিষাদল(পূর্ব মেদিনীপুর), ২৫ ডিসেম্বর : তৃণমূলকে টিকিয়ে রেখেছে পুলিশ আর জিহাদীরা ৷ এরাজ্যে বিজেপি ৩৯ শতাংশ হিন্দু ভোট পেয়েছে, আর ৫ শতাংশ হিন্দু একজোট হলেই পশ্চিমবঙ্গে ডবল ইঞ্জিন সরকার হবে বলে মন্তব্য করলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । আর এরাজ্যে বিজেপি সরকারে এলেই উত্তরপ্রদেশের মত সুশাসন এবং গুজরাটের মত শিল্প স্থাপন ও কর্মসংস্থানের গ্যারান্টিও দেন তিনি । পাশাপাশি রাজ্যে বিজেপিকে ক্ষমতায় আনতে হিন্দুদের একজোট হওয়ার বার্তা দেন তিনি ৷ তার কথায়, মুসলিমরা সমস্ত কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সুবিধা নেওয়ার পর বলবে এটা তাদের অধিকার৷ কিন্তু হিন্দুদের দল বলে আখ্যায়িত করে বিজেপিকে ভোট দেবে না এবং তৃণমূল টুপি পরাবে ও ওরা পরবে ।
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ভারতরত্ন অটল বিহারী বাজপেয়ীর জন্ম শতবর্ষ ও তুলসী পূজন দিবস উপলক্ষ্যে আজ বুধবার পূর্ব মেদিনীপুর জেলার মহিষাদলের ভূঞ্যাসড়ায় (নাটশাল) সেবাদান কর্মসূচিতে যোগ দেন শুভেন্দু অধিকারী । ওই কর্মসূচিতে আয়োজিত জনসভায় ভাষণে তিনি বলেন,’এরা (তৃণমূল) আছে মুসলমানদের ভোট নিয়ে । ভুল বুঝিয়ে । মোদিজীর একটা স্কিম শুধু হিন্দুদের জন্য নয় । সবার জন্য । কোভিডের ভ্যাকসিন লাইন দিয়ে নিয়েছেন । হিন্দু আগে মুসলমান পরে হয়েছে ? না । রেশন দোকান থেকে মাথাপিছু ৫ কেজি চাল গম আনেন, শুধু হিন্দুরা আনে ? আবাসের বাড়ি যারা পেয়েছেন শুধু হিন্দুরা পেয়েছেন ? ১৫৫ টা স্কিম একটা স্কিমের নাম বলুন তো শুধুমাত্র একটা নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের জন্য । তারপরেও ভোটের সময় বলবেন বিজেপি হিন্দুদের পার্টি । ২০২১ সালে বললেন সিএএ, ডিটেনশন ক্যাম্প, আপনাদের নাকি সব ক্যাম্প পাঠিয়ে দেবে । লাইন দিয়ে ভোট দিয়েছেন । ২০২৪ সালের লোকসভার ভোটে আপনাদের ভুল বুঝালো সংবিধান বদলে দেবে, ‘ইস বার ৪০০ পার’ মানে হিন্দু রাষ্ট্র হবে । এখন বলছে ওয়াকফ সংশোধনী বিল, আপনাদের সব নিয়ে নেবে… মাদ্রাসা, ঈদগাহ সব নিয়ে নেবে । আরে সিএএ চালু হয়েছে ৬ মার্চ ২০২৪ । কে ডিটেনশন ক্যাম্পে গেছে ? আপনারা ওই বুঝেই থাকুন । আপনারা ভোট দেবেন না আমরা জানি। আপনাদের টুপি পরায় তৃণমূল আর সেই টুপিটা আপনারা ভালো করেই পরেন । আপনাদের বাদ দিয়ে আমরা ৩৯ শতাংশ ভোট পেয়েছি । ২ কোটি ৩৩ লক্ষ ২৭ হাজার ভোট, সব হিন্দুদের ভোট এবং জনজাতিদের ভোট । আপনাদের ভোট নাই ।’
মমতা ব্যানার্জির উদ্দেশ্যে শুভেন্দু বলেন,’দু কোটি মুসলমানের ভোট, ৪০ লক্ষ ছাপ্পা, আপনারা পেয়েছেন । আর কিছু চোর, ডাকাত, চিটিংবাজ আছে… এখনো আছে কালি আছে, ছবি আছে , কমল আছে, রেশন চোর রমেশ আছে । চোর, ডাকাতগুলো তো তৃণমূল করে । তারা তো কিছু জন থাকবেই । তারপরে ৩৯ শতাংশ৷ আর পাঁচ শতাংশ হিন্দু এক হবেন ? ৪৪ শতাংশ করে দিতে পারেন এ রাজ্যে? দেখবেন শুধু হিন্দু এবং জনজাতিদের ভোট নিয়ে আমরা সরকারে আসব । উদাহরণ হল মহারাষ্ট্র । ২০১৯ সালে ভোট দিতে নেমেছিলেন ৬১ শতাংশ । আমরা পেয়েছিলাম ১০২ টা আসন । এবারে ভোট দিতে নেমেছেন ৬৬.৫, বাড়তি পাঁচ শতাংশ হিন্দু ভোট দিয়েছেন,তাকে ছত্রপতি শিবাজী মহারাজের মহারাষ্ট্র পুরো গেরুয়াময় হয়ে গেছে । পশ্চিমবাংলার হিন্দুরা জাগুন । জাগতে আপনাদের হবে । ঐক্যবদ্ধ হন । আমি মাঝামাঝি কোন কথা বলি না ।’
এরাজ্যের মুসলিমদের সম্পর্কে শুভেন্দু অধিকারী বলেন,’আমি অনেক বুঝিয়েছি৷ কিন্তু মুসলিম ভোট শুনবে না । তারা রেশন নেবে বলবে অধিকার । শৌচালয় দেবে বলবে অধিকার । বাড়ি নেবে বলবে অধিকার । আর ভোটের সময় বলবে আরে তুমি বিজেপি তুমি হিন্দুদের পার্টি, তোমাকে ভোট দেবো না । আরে হিন্দুদের যদি পার্টি হয়ে থাকি তাহলে হিন্দুদের ঐক্যবদ্ধ করব ।’
আমার নন্দীগ্রামে ৬৪ হাজার মুসলমান মমতাকে ভোট দিয়েছে। আমাকে ৪০০ মুসলিম ভোট দিয়েছে । এখানেও দু চারজন আছে যারা মোদিজীর ভক্ত রাষ্ট্রবাদী । সিপিএমের মীনাক্ষী মুখার্জি ৬২০০ ভোট পেয়েছেন। তারমধ্যে ১২০০ মুসলিম ভোট । আমি ৬৫ শতাংশ হিন্দুকে এক করেছিলাম । এক লক্ষ দশ হাজার ভোট পেয়ে মমতা ব্যানার্জিকে আমি ২০১৮ ভোটে হারিয়েছি । নন্দীগ্রামে ৭৫ শতাংশ হিন্দু লোকসভা ভোটে এক হয়েছে । অভিজিৎ গাঙ্গুলীকে আমরা নন্দীগ্রাম থেকে ৮২০০ ভোটে এগিয়ে রেখেছিলাম । শুধু হিন্দুদের ভোটে । বিধানসভা ভোটে ৯০ ভাগ হিন্দু পদ্মফুলে ভোট দেবে একসঙ্গে । আর বিজেপির যেই দাঁড়াক না কেন ২০ হাজার ভোটে জিতবে । আপনারা এখন ঐক্যবদ্ধ হন ।’
তিনি বলেন,’এই লড়াই আমাদের জিততেই হবে । বাংলার জনবিন্যাস বদলে যাচ্ছে । বাংলা থেকে জঙ্গি ধরা পড়ছে । এই বাংলায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে শুরু করে বিশ্ববরেণ্য নেতারা জন্মগ্রহণ করেছেন । আজকে লজ্জা লাগে না যে আসামের পুলিশ এসে মুর্শিদাবাদের মাদ্রাসা থেকে জঙ্গি ধরে নিয়ে যাচ্ছে । যারা এই বাংলায় বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ধ্বংস করতে এসেছিল । লজ্জা করে না মমতা ব্যানার্জি ? কাশ্মীরের পুলিশ এসে ক্যানিং থেকে জঙ্গি জাবেদ মুন্সিকে ধরে নিয়ে গেছে । ভাবছেন এইতো বলছে ক্যানিং এর কথা । তাতে আমাদের কি । অপেক্ষা করুন । যদি ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই জঙ্গি সরকারকে আমরা যদি বিসর্জন না দিতে পারি এই বাংলার অবস্থা বাংলাদেশের থেকেও খারাপ হবে ।’
বাংলাদেশের হিন্দু নির্যাতনের বিষয়ে শুভেন্দু অধিকারী বলেন,’তিন কোটি বাঙালি হিন্দু শুধু ধর্মীয় কারণে এক কাপড়ে বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন সময় বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছে । যার মধ্যে আমার মাতৃদেবী তৎকালীন শ্রীমতি গায়ত্রী ভট্টাচার্য এবং আজকের শ্রীমতি গায়ত্রী অধিকারী আছেন । ১৯৬০ সালে ওনার মাখনলাল ভট্টাচার্য বরিশালের শিক্ষক ছিলেন । শুধু হিন্দু হওয়ার জন্য প্রাণ হাতে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে এসে চন্দননগরের জুট মিলে একজন শিক্ষককে ম্যানেজারি করে তার সংসারকে প্রতিপালন করতে হয়েছে । হিন্দু হওয়ার অপরাধে কি অত্যাচারটা বাংলাদেশে সেদিনও করেছে আজও করছে। জাগো হিন্দু… জাগো হিন্দু… জাগো হিন্দু৷ অটল বিহারী বাজপেয়ীর ছবি কে সামনে রেখে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন যে তাকত দেখাবো আমরা,শক্তি দেখাবো আমরা, বাটেঙ্গে তো কাটেঙ্গে । এক রাহেঙ্গে তো সেফ রাহেঙ্গে ।’
চিন্ময় কৃষ্ণ ব্রহ্মচারীকে জেলে ঢোকানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন,’চিন্ময় বিষ্ণুপ্রভু জেলে কেন জানেন ? আমাদের মধ্যে অনেক ভাব ছিল । ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র । চিন্ময়কৃষ্ণ প্রভু সব হিন্দুকে এক সূত্রে মেতে ছিলেন সনাতনী ঐক্য পরিষদ তৈরি করে । তাই তাকে জেলের মধ্যে বিনা কারণে রাখা হয়েছে । তাই নিজের সত্তাকে বজায় রেখেও প্রথমে বলুন আমি ভারতীয় আমি সনাতনী । দেখবেন আপনি জিতবেন।আপনার দুর্গা ঠাকুর ভাঙতে কেউ পারবেনা । কলকাতার রাজাবাজারে কালী ঠাকুর ভাঙতে কেউ পারবেনা । বেলডাঙ্গার কার্তিক ঠাকুর ভাঙতে পারবেনা । আপনি আক্রান্ত হবেন না । আপনার রামনবমীর মিছিলের ঢিল ছোড়া বন্ধ হবে। তৃণমূলকে টিকিয়ে রেখেছে পুলিশ আর জিহাদীরা ।’
তিনি বলেন,’২০২৬ সালের বিজেপিকে আনতে হবে । বিজেপি ক্ষমতায় এলে উত্তরপ্রদেশের মত শাসন, সুশাসন আর নারী সুরক্ষা দেব । আর গুজরাটের মত শিল্প কি করে আনতে হয় আর হাতে কাজ কি করে দিতে হয় সেটা আমরা দেখিয়ে দেবো । এই দুটো উদাহরণ দিয়ে আপনাদের কাছে অঙ্গীকারবদ্ধ হলাম । আমি যদি সতীশবাবু, সুশীলবাবু, বিরাজবাবু, কুমুদবাবু, কুমার জানা, কুমুদিনী ডাকুয়াদের মাটির ছেলে হয়ে থাকি তাহলে আমি শপথ করে বলে যেতে চাই ২০২৬ সালে কম্পার্টমেন্টাল সিএমকে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বানাবো… বানাবো… বানাবো ।’।