এইদিন ওয়েবডেস্ক,পূর্ব মেদিনীপুর,২১ আগস্ট : রাজ্যের তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের বিরুদ্ধে অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণী (ওবিসি) শংসাপত্র দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যপক অনিয়মের অভিযোগ উঠছে দীর্ঘদিন ধরে । নিজেদের সুবিধামত ক্যাটাগরি পাইয়ে দিয়ে যোগ্যদের বঞ্চিত করে অযোগ্যদের শংসাপত্র পাইয়ে দেওয়ার খেলা চলছে বলে অভিযোগ । তফসিল জাতি ও উপজাতিদের কোটা কেটে মুসলিম সম্প্রদায়কে পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগে সরব হচ্ছে বিজেপি ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলি । এই সংক্রান্ত মামলা এখন আদালতের বিচারাধীন । এই বিতর্কের মাঝেই পূর্ব মেদিনীপুর জেলার চণ্ডীপুর ব্লকের ঈশ্বরপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান খুকুরানি মণ্ডল ঘোড়ুইয়ের বিরুদ্ধে ‘ভুয়ো ওবিসি শংসাপত্র’ ব্যবহার করে পঞ্চায়েতের সংরক্ষিত আসন থেকে নির্বাচিত হওয়ার অভিযোগ তুলেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । তিনি বলেছেন,”পশ্চিমবঙ্গের তরুণ প্রজন্মের ভবিষ্যৎ আজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তোষন নীতি আর ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতির বলি ৷”
তিনি রণজিৎ রক্ষিত বনাম পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য এবং অনান্যদের মামলায় বিচারপতি অমৃতা সিনহার রায় এবং তমলুকের উপ-বিভাগীয় কর্মকর্তা আদালতের অর্ডার শিটের কপি এক্স-এ শেয়ার করেছেন শুভেন্দু অধিকারী । তিনি লিখেছেন,’পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আর তাঁর প্রশাসন ওবিসি সার্টিফিকেটকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে অপব্যবহার করার চক্রান্ত বরাবরই করে এসেছেন। এই অপব্যবহারের নিদর্শন আবারও প্রকাশ্যে । তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা প্রশাসনের প্রত্যক্ষ মদতে ভুয়ো ওবিসি শংসাপত্র দাখিল করে ওবিসি সংরক্ষিত আসনগুলিতে অবৈধভাবে নির্বাচিত হয়েছেন যার জ্বলন্ত উদাহরণ পূর্ব মেদিনীপুর জেলার চণ্ডীপুর ব্লকের ঈশ্বরপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান শ্রীমতী খুকুরানি মণ্ডল ঘোড়াই। তিনি ভুয়ো ওবিসি শংসাপত্র দাখিল করে ওবিসি সংরক্ষিত আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন। এখন প্রধানের পদই শুধু নয়, পঞ্চায়েত সদস্যের পদও তিনি খোয়াতে চলেছেন।’
শুভেন্দু অধিকারীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ১৫ জানুয়ারী বিচারপতি অমৃতা সিনহার পর্যবেক্ষণ ছিল : আজ আদালতে পেশ করা প্রতিবেদন থেকে দেখা যাচ্ছে যে কর্তৃপক্ষ কেবলমাত্র বেসরকারী বিবাদীর পক্ষে জারি করা শংসাপত্রের সত্যতা বিবেচনা করেছে। উক্ত শংসাপত্রের বিষয়বস্তু এবং বিশেষ করে যে প্রার্থীর পক্ষে ওবিসি শংসাপত্র জারি করা হয়েছিল তিনি আসলে উক্ত শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত কিনা তা অনুসন্ধান করা হয়নি। আবেদনকারী এবং বেসরকারী বিবাদীকে শুনানির সুযোগ দিয়ে বেসরকারী বিবাদীর যথাযথ শ্রেণী নির্ধারণের জন্য এসডিওকে পুনরায় তদন্ত পরিচালনা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
এরপর গত ২৩ জুলাই পূর্ব মেদিনীপুর জেলার তমলুকের উপ-বিভাগীয় কর্মকর্তার স্বাক্ষরিত নির্দেশে বলা হয়েছে,’২০২৩ সালের মামলা নম্বর WPA -২২৫৫৫ এর প্রেক্ষিতে, মাননীয় কলকাতা হাইকোর্ট রণজিৎ রক্ষিত – বনাম পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য ও অন্যান্য মামলায়, আবেদনকারী এবং বেসরকারী বিবাদীকে শুনানির সুযোগ দিয়ে বেসরকারী বিবাদীর যথাযথ শ্রেণী নির্ধারণের জন্য তমলুকের উপ-বিভাগীয় কর্মকর্তাকে পুনঃতদন্ত পরিচালনা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন ।পূর্ববর্তী সকল শুনানির তারিখে, খুকুরাণী মণ্ডল ঘোড়ুইকে তার দাবির পক্ষে প্রাসঙ্গিক নথি জমা দেওয়ার জন্য যথেষ্ট সময় দেওয়া হয়েছিল কিন্তু তিনি সেই নথি জমা দিতে পারেননি। ২৩.০৭.২০২৫ তারিখে, খুকুরাণী মণ্ডল ঘোড়ুই শুনানির সময় কোনও প্রাসঙ্গিক নথি জমা দিতে পারেননি বা তার দাবির পক্ষে কোনও তথ্য সরবরাহ করতে পারেননি, যদিও তাকে যথেষ্ট সময় দেওয়া হয়েছিল। সকল পক্ষের বক্তব্য শোনার পর এবং চাঁদিপুরের ব্লক ডেভেলপমেন্ট অফিসারের জমা দেওয়া প্রতিবেদন পর্যালোচনা করার পর, এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে খুকুরাণী মণ্ডল ঘোড়ুই ওবিসি সম্প্রদায়, উপ-বর্ণ “তান্তি, তান্তুবায়া”-এর অন্তর্ভুক্ত নন।’
শুভেন্দু অধিকারীর প্রতিক্রিয়া হল, “এই উদাহরণ হিমশৈলের চূড়া মাত্র। সঠিক নিরপেক্ষ তদন্ত করলে সারা রাজ্য জুড়ে এমন হাজার হাজার শ্রীমতি খুকুমনি মন্ডল ঘোড়ুই ধরা পড়বেন যারা ভুয়ো শংসাপত্রের অপব্যবহার করে সংরক্ষিত আসনগুলিতে অবৈধ ভাবে নির্বাচিত হয়ে বসে রয়েছেন। এদেরকে এই সব ভুয়ো শংসাপত্র পাইয়ে দিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসন, একেবারে তাঁর অঙ্গুলিহেলনে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর রাজনৈতিক স্বার্থে ওবিসি শংসাপত্রকে অপব্যবহার করে শুধুমাত্র দলীয় নেতাদের ওবিসি সংরক্ষিত আসন থেকে জিতিয়ে আনা বাদেও মুসলিম সম্প্রদায়কে তোষণ করার অসৎ উদ্দেশ্যে ও ভোটব্যাংক হিসেবে ব্যবহারের স্বার্থে বেআইনিভাবে ওবিসির সমস্ত সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন, যাতে তারা প্রকৃত ওবিসি তালিকাভুক্ত সম্প্রদায়ের ভাগের সরকারি চাকরি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগের ক্ষেত্রে সুবিধা পান।”
তিনি আরও লিখেছেন,”এর ফলেই আজ রাজ্যের বর্তমান শিক্ষা-সংকট দেখা দিয়েছে যা প্রশাসনিক দুষ্কর্মের জ্বলন্ত প্রতিফলন। মহামান্য কলকাতা হাইকোর্ট মমতা সরকারের প্রণীত বিতর্কিত ওবিসি তালিকা বাতিল করেছিলেন, কিন্তু রায় মানার পরিবর্তে সরকার মামলাকে দীর্ঘায়িত করেছে, যার ফলে উচ্চমাধ্যমিকের ফল প্রকাশ হবার তিন মাসাধিক কাল অতিবাহিত হবার পরেও উচ্চশিক্ষার জন্য সরকারি কলেজগুলিতে ছাত্রছাত্রীদের ভর্তি প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে রয়েছে। শুধু তাই নয় জয়েন্ট এন্ট্রান্স এর ফলও এই কারণেই প্রকাশ করেনি রাজ্য সরকার। যার কারণে ৫ লক্ষাধিক ছাত্রছাত্রীর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে রয়েছে। ছাত্রছাত্রীদের বাধ্য হয়েই রাজ্যের বাইরে ভর্তি হতে হচ্ছে, আবার অনেককেই বেসরকারি কলেজে উচ্চশিক্ষার জন্য বিপুল খরচ বহন করতে হচ্ছে।
পশ্চিমবঙ্গের তরুণ প্রজন্মের ভবিষ্যৎ আজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তোষন নীতি আর ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতির বলি। ওবিসি সংরক্ষণের মূল উদ্দেশ্য কে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নিজের খেয়াল খুশি মতো সম্পূর্ণ অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে ওবিসি নিয়ে নিম্ন মানের রাজনীতি করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।” তিনি লিখেছেন,”বাংলা লড়বে বাংলা জিতবে” ।।