এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,১১ নভেম্বর : আরজি করের তরুনী চিকিৎসক ‘অভয়া’র ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় এখনো নিহতের পরিবার ন্যায়বিচারের অপেক্ষায় । মামলাটি এখন সুপ্রিম কোর্টের হাতে । কিন্তু কলকাতা হাইকোর্টের হাত থেকে মামলাটি স্বতঃপ্রণোদিতভাবে নিজেদের হাতে তুলে নেওয়া সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় অবসর নিয়েছেন । ফলে আরজি করের ঘটনার ন্যায়বিচার আদপেই হবে কিনা তা নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠছে । এদিকে আগস্ট মাসে ‘অভয়া’র উপর ঘটে যাওয়া নৃশংস বর্বরোচিত ঘটনার পর রাজ্যের সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা নিয়ে বিস্তর প্রশ্ন উঠছে । এই মামলায় ব্যাকফুটে থাকা মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বে রাজ্যের শাসকদল রাজ্যের সমস্ত মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ডাক্তার, নার্স সহ মহিলা স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বেশ কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে । তার মধ্যে অন্যতম হল, হাসপাতালগুলি সিসিটিভি দিয়ে তা মুড়ে ফেলা হবে । সিসিটিভি লাগানোর জন্য ইতিমধ্যে টেন্ডারও হয়ে গেছে । এদিকে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী প্রতি সিসিটিভি স্থাপনে প্রায় সাড়ে ৩ লক্ষ টাকা খরচ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন।
তিনি আজ সোমবার রাজ্যের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দপ্তরের ম্যানেজিং ডিরেক্টরের স্বাক্ষরিত দুটি দরপত্র এক্স-এ শেয়ার করেছেন । তার মধ্যে একটি ঝাড়গ্রাম সরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের,যেটি ২৮/০৯/২০২৪ ইস্যু করা হয় । এবং পরের দিন ২৯/০৯/২০২৪ তারিখে আহ্বান করা দরপত্রটি হল হুগলি জেলার আরামবাগের প্রফুল্ল চন্দ্র সেন সরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের । কিন্তু সিসিটিভি স্থাপনে বিপূল ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন শুভেন্দু অধিকারী ।
তিনি লিখেছেন,’রাত্রির সাথী’ প্রকল্পের অধীনে সিসিটিভিগুলি স্থাপন করা হচ্ছে এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ এবং ওয়েস্ট বেঙ্গল মেডিকেল সার্ভিসেস কর্পোরেশন লিমিটেড দ্বারা ভাসমান দরপত্রের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কিন্তু কত খরচে ? নিজেই দেখুন:- ঝাড়গ্রাম সরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল :- সিসিটিভি স্থাপনের পরিমাণ – ১৯৫ টি, খরচের মোট পরিমাণ – ৩,২২,৫২, ৯২৩ /- টাকা (তিন কোটি বাইশ লক্ষ বায়ান্ন হাজার নয়শ তেইশটি মাত্র) প্রতি ইউনিট খরচ – টাকা ১,৬৫,৪০০/- (এক লাখ পঁয়ষট্টি হাজার চারশত মাত্র) ।
প্রফুল্ল চন্দ্র সেন সরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল; আরামবাগ :- সিসিটিভি স্থাপনের পরিমাণ – ৫০ টি,খরচের মোট পরিমাণ – ১,৭৫,৯৮,৭৩৯/ (এক কোটি পঁচাত্তর লাখ আটানব্বই হাজার সাতশ ঊনচল্লিশ মাত্র)৷ প্রতি ইউনিট খরচ ৩,৫১,৯৭৪/- (তিন লাখ একান্ন হাজার ঊনশত চুয়াত্তর মাত্র) । তিনি লিখেছেন, ‘আশ্চর্যজনক, অবিশ্বাস্য এবং একেবারে নির্লজ্জ। সবাই জানে যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার দুর্নীতির প্রতীক, কিন্তু এবার তারা নিজেদেরকে ছাড়িয়ে গেছে।’ শুরুতেই তিনি লিখেছেন,
‘অভয়ার জন্য ন্যায়বিচার নাকি তৃণমূলের কাটমানি ? সংকটকে অর্থ উপার্জনের সুযোগে পরিণত করার জন্য টিএমসি সত্যিই প্রশংসার দাবিদার ! পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মেডিকেল কলেজগুলিতে নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য মাননীয় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরে যেখানে দুর্বল মহিলা স্বাস্থ্যসেবা কর্মী, নার্স, ডাক্তাররা চব্বিশ ঘন্টা কাজ করে,সেখানে সিসিটিভি স্থাপনের বিষয়ে শীর্ষ আদালতে রাজ্য এবং তাদের আইনজীবীদের দ্বারা অনেক হৈ চৈ করা হয়েছে।’
প্রসঙ্গত,আরজি কর কান্ডের পর রাজ্যের সমস্ত মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ডাক্তার, নার্স সহ মহিলা স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বেশ কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে রাজ্য সরকার । এমন পরিস্থিতিতে নিয়ে আসা হয়েছে ‘রাত্রিরের সাথী অ্যাপ’। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ্য উপদেষ্টা আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় আগস্টে নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে জানিয়েছিলেন যে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রাজ্যের প্রতিটি মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতালে রাত্রিরের সাথী প্রকল্প কার্যকর করা হবে।মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের জন্য চালু করা হয়েছে ‘রাত্রিরের সাথী অ্যাপ’। এই অ্যাপের মাধ্যমে মহিলারা সহজেই কলকাতা পুলিশের সাহায্য পেতে পারেন।
এই বিশেষ মোবাইল ফোন অ্যাপ স্থানীয় থানা বা পুলিশ কন্ট্রোল রুমের সংস সংযুক্ত করা হবে।সমস্ত কর্মজীবী মহিলাদের ফোনে এই অ্যাপটি ডাউনলোড করা বাধ্যতামূলক হতে হবে। হাসপাতালে নাইট শিফট করবেন যে মহিলারা, তাঁদের জন্য অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছে। কর্মজীবী নারীদের জন্য থাকবে আলাদা বিশ্রামাগারও। প্রত্যেকটি মেডিকেল কলেজ, হাসপাতাল ও মহিলা হোস্টেলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রাতের বেলা পুলিশ মোতায়েন রাখা হবে।
কোনও মহিলা যদি বিপদে পড়েন, এমার্জেন্সি হেল্পলাইন নম্বর ১০০ বা ১১২ তে কল করে নিতে পারেন। রাজ্যের একাধিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে সিকিউরিটি চেক, ব্রেথালাইজার টেস্টের ব্যবস্থা থাকবে। এবং রাতের ডিউটিতে একা মহিলা নয়। সুরক্ষার জন্য মহিলা ও পুরুষ সিকিউরিটি সমানুপাতে থাকতে হবে।
এছাড়া তিনি আরও জানিয়েছিলেন যে মহিলা স্বেচ্ছাসেবকদের এখন রাজ্যের সমস্ত মেডিকেল কলেজ ও জেলা হাসপাতালে, বিশেষ করে রাতে কাজ করা মহিলাদের নিরাপত্তার জন্য মোতায়েন করা হবে। এর উদ্দেশ্য হল রাতের দায়িত্ব পালনকারী মহিলাদের জন্য কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। উল্লেখ্য, রাজ্য সরকার আরও পরামর্শ দিয়েছে যে যতটা সম্ভব মহিলাদের রাতের ডিউটি করা উচিত নয়। মহিলা ডাক্তার এবং নার্সদের ডিউটি ১২ ঘণ্টার বেশি যাতে না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখতে বলা হয়েছে।।