এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,১৭ অক্টোবর : গতকাল বৃহস্পতিবার, শৈলশহর শিলিগুড়িতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ঘোষণা করেছিলেন যে সেখানে তিনি রাজ্যের সবচেয়ে বড় মহাকাল মন্দির তৈরি করবেন । মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণার ২৪ ঘন্টা কাটতে না কাটতেই তার বিরুদ্ধে ‘সনাতনী ভাবাবেগে আঘাতের’ অভিযোগ তুললেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ৷ তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটা ভিডিও পোস্ট করে অভিযোগ করেছেন যে ‘দীঘা জগন্নাথ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র’ চত্বরের নিকাশি নালার ম্যানহোলের ধাতব ঢাকনার উপরে ইংরাজিতে “জগন্নাথ” লেখা ছাপ রয়েছে ।
শুভেন্দুর শেয়ার করা ভিডিও ঢাকনায় আইএসআই ট্রেডমার্ক ও “JAGANNATH” লেখা দেখা যায় । শিলিগুড়িতে মমতার ‘সবচেয়ে বড় মহাকাল মন্দির’ নির্মানের ঘোষণার কথা উল্লেখ করে শুভেন্দু লিখেছেন,’আজকাল ‘হিন্দু বিরোধী’ তকমা মুছে ফেলতে মাননীয়া নানান রকম উদ্যোগের ঘোষণা করে চলেছেন, কখনো নিউটাউনে দুর্গাঙ্গন তো কখনো শিলিগুড়িতে মহাকাল মন্দির তৈরির কথা বলছেন। সবই অবশ্য সরকারি খরচে ও সরকারি নিয়ন্ত্রণে।’
তিনি লিখেছেন,’ঠিক যেমন হিডকো অধীনস্থ ‘দীঘা জগন্নাথ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র’। ওনার কথায়’ জগন্নাথ ধাম’! কিন্তু, কথায় বলে না, ‘কয়লা ধুলে যেমন ময়লা যায় না ঠিক তেমনি মানুষের স্বভাব কখনো পাল্টায় না’।যতোই আপনি মন্দির বানানোর ঘোষণা করুন না কেনো, আপনি যে বদলাননি আর আপনার পক্ষে যে বদলানো সম্ভব না, তা আবার প্রমাণিত। আপনি এখনো সনাতনী ভাবাবেগ কে কিভাবে হেয় করা যায় সেই দিকে প্রাধান্য দেন, আপনার ভোট ব্যাংক’কে তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে।’
শুভেন্দু অধিকারী লিখেছেন,’দীঘা জগন্নাথ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে’ দুষিত ও অপরিষ্কার জল নির্গমনের জন্যে যে নর্দমা রয়েছে, তার ম্যানহোলের ঢাকনার ওপর ইংরেজি তে ‘জগন্নাথ’ লেখা !!!
ভ্রমণার্থীদের থেকে শুরু করে, সাফাই কর্মী, পুলিশ কর্মীরা সবাই তা চলা ফেরার সময় পায়ে মাড়াচ্ছে !দোষ তাদের না, তাদের পক্ষে বোঝা সম্ভব না, দোষ আপনার সরকারের যারা ওখান থেকে আসা আয় কে কুক্ষিগত করার উদ্দেশ্যে পুরোটাই নিজেদের অধীনে রেখেছেন। এই ঢাকনা গুলো আপনাদের আদেশ (অর্ডার) অনুযায়ী নির্ধারিত (customised) উপায়ে বানানো, কারণ এই নামে কোনো ম্যানহোলের ঢাকনা বাজারে পাওয়া যায় না।’
তিনি লিখেছেন,’তাই ‘হিন্দু বিরোধী’ তকমা মুছতে হলে আগে নিজেকে শোধরানোর চেষ্টা করুন, কয়েক মাস অভ্যাস করুন সনাতনী সংস্কৃতি রীতিনীতি বোঝার, তার পর বড় বড় কথা বলবেন।আর যতো দ্রুত সম্ভব এই নর্দমার ম্যানহোলের ঢাকনা গুলো পরিবর্তন করবার নির্দেশ দিন। ক্ষমা করো মহাপ্রভু ।’
প্রসঙ্গত,বৃহস্পতিবার দার্জিলিংয়ে মহাকাল মন্দিরে পুজো দেন মমতা ব্যানার্জি । পুজো দিয়ে বেরিয়ে সারেন জনসংযোগ। কথা বলেন মন্দিরের পুরোহিত ও দর্শনার্থীদের সঙ্গে। সেখানে পরে সংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেছেন, ‘আমি শিলিগুড়ির কাছাকাছি জমি দেখে রাখতে জেলাশাসককে বলেছি। সেখানে কনভেনশন সেন্টার হবে। পাশে একটা বড় মহাকাল মন্দির তৈরি করব। সবচেয়ে বড় শিব মূর্তি গড়ব। তবে এজন্য একটু সময় লাগবে।’
কিন্তু ২০২৬ সালের ভোটের ঠিক মুখেই মমতার এই ঘোষণাকে “বিমুখ” হিন্দু ভোটব্যাংককে নিজের দিকে টানার প্রয়াস বলে মনে করছেন রাজনৈতিক অভিজ্ঞমহল । কারন বিগত লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলে এরাজ্যের ধর্মীয় মেরুকরণের স্পষ্ট ছাপ লক্ষ্য করা গেছে । শুভেন্দু অধিকারীর দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে তৃণমূলের প্রাপ্ত ভোট ২.৭৫ কোটি । যেখানে বিজেপি পেয়েছে মোট ২.৩৩ কোটি ভোট । বিজেপির ভোট মূলত হিন্দু সম্প্রদায়ের দেওয়া এবং তৃণমূল ৩০-৩৫ শতাংশ মুসলিম ভোটের প্রায় ১০০ শতাংশ পেয়েছে বলেও তিনি দাবি করেন । এমতবস্থায় ৪২ লাখ ভোটের ব্যবধান কমিয়ে তৃণমূলকে পরাজিত করতে আরও ৫ থেকে ৭ শতাংশ হিন্দু ভোটকে বিজেপির দিকে টানতে হবে বলে তিনি মনে করছেন । এরই মাঝে যদি শুভেন্দুর দাবি অনুযায়ী এসআইআর-এ এক কোটির অধিক রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী মুসলিমের, ডবল এন্ট্রি ও মৃতদের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ যায় তাহলে মমতা-অভিষেকের জন্য ফের ক্ষমতায় ফিরে আসা কঠিন হয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে । যেকারণে এবারের বিধানসভার নির্বাচনে হিন্দু ভোটব্যাংক ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াবে ৷ তাই এরাজ্যের আসন্ন বিধানসভার ভোট যে ধর্মের ভিত্তিতে হতে চলেছে সেটা দিনের আলোর মত স্পষ্ট।।

