এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,২৪ ডিসেম্বর : সামসেরগঞ্জের জাফরাবাদে বাবা হরগোবিন্দ দাস ও ছেলে চন্দন দাসের নৃশংস বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের ১৩ জন আসামির মঙ্গলবার জঙ্গিপুর মহকুমা আদালতে সাজা ঘোষণা করা হয়েছে । সাজাপ্রাপ্ত ১৩ জন আসামির নাম হলো : দিলদার নদাব (২৮), আসমাউল নদাব ওরফে কালু (২৭), এনজামুল হক ওরফে বাবলু (২৭), জিয়াউল হক (৪৫),ফেকারুল সেখ ওরফে মহক (২৫),আজফারুল সেখ ওরফে বিলাই (২৪), মনিরুল সেখ ওরফে মনি (৩৯), একবাল সেখ (২৮),নুরুল ইসলাম (২৩),সাবা করিম (২৫),হযরত সেখ ওরফে হযরত আলী (৩৬), আকবর আলী ওরফে একবর সেখ (৩০) এবং ইউসুফ সেখ (৪৯)। এদের মধ্যে ৩ জন সেদিন ধারাল অস্ত্র দিয়ে বাবা ও ছেলেকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে খুন করেছিল বলে অভিযোগ । যদিও পুলিশ তাদের নির্দিষ্ট করে চিহ্নিত করেনি । ঘটনায় যুক্ত অনান্য আসামিদের মত ওই তিন মূল ঘাতককেও যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা দেওয়ায় সঙ্গত কারনেই পুলিশের বিরুদ্ধে তাদের ফাঁসির সাজা থেকে তাদের বাঁচিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠছে ।
অভিযোগ শুধু নিহতদের পরিবার থেকেই নয়, পাশাপাশি বিজেপিও একই অভিযোগ তুলছে । এই রায় নিয়ে পুলিশ সন্তোষ প্রকাশ করলেও নিহতদের পরিবার ও বিজেপি অসন্তোষ প্রকাশ করেছে । জাফরাবাদে বাবা হরগোবিন্দ দাস ও ছেলে চন্দন দাসের নৃশংস বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের মূল তিন অভিযুক্তকে পুলিশ কিভাবে ফাঁসির সাজা থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছে তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কলকাতার ৬ মুরলিধর সেন লেনে রাজ্য বিজেপির প্রধান কার্যালয়ে নিহত হরগোবিন্দ দাসের বিধবা স্ত্রী ও পুত্রবধূকে পাশে বসিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করেন তিনি । নিহতদের পরিবারের পাশাপাশি বিরোধী দলনেতাও তিন ঘাতকের ফাঁসির সাজার দাবি জানান ।
পুলিশ কিভাবে ওই তিন মূল অভিযুক্তকে ফাঁসির সাজা থেকে বাঁচিয়ে দিল, তার ব্যাখ্যা করে বিরোধী দলনেতা বলেন,আসলে দোষী ১৩ জনকে সমানভাবে চার্জশিটে অভিযুক্ত দেখিয়েছি সিট। যেখানে মূলত ৩ জনকে আলাদা করে চিহ্নিত করে দিয়েছিল পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শীরা। ওই তিন জনই প্রথম বাবা-ছেলেকে সেদিন কোপাতে শুরু করেছিল। পরে বাকিরাও হাত লাগায়। শুভেন্দুর কথায়, “চার্জশিটে ১৩ জনকে সমান দোষে দুষ্ট করেছে পুলিশ। অথচ পরিবার-সহ প্রত্যক্ষদর্শীরা ৩ জনকে চিহ্নিত করে দেন, যারা প্রথম এই হত্যাকান্ড চালিয়েছিল। এই ৩ জনই প্রথম কোপানোর কাজ শুরু করেছিল। শুভেন্দু অধিকারীর অভিযোগ,’জমি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে অনেক আগে থেকেই এই পরিবারকে টার্গেট করেছিল। বাকিরা সহযোগিতা করেছে। চার্জশিটে সবাইকে সমান দোষী দেখানোর উদ্দেশ্য একটাই, যাতে ফাঁসির সাজা না হয়।’ কিন্তু এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্ট, প্রয়োজনে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার কথাও বলেছেন তিনি । পাশাপাশি আইনি লড়াইয়ে পরিবারকে সমস্ত রকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন ।
তিনি জানান, হরগোবিন্দ দাস এবং চন্দন দাসকে কসাইয়ের ছুরি দিয়ে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে এবং তাই পরিবার-সহ সকলেই চান অপরাধীদের ফাঁসি হোক। উগ্রপন্থীদের চিহ্নিত করা জরুরি এবং পরিবারটির পাশে সকলেই আছেন, যাতে সকল অপরাধীর ফাঁসি হয়।বিরোধী দলনেতা আরও জানান, তিনি এবং হরগোবিন্দ ও পরিবার এই রায়ে সন্তুষ্ট নন এবং তাঁরা হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টে যাবেন। উচ্চতর আদালতে পারুল মায়ের(মৃত হরগোবিন্দ দাসের স্ত্রী) আইনি লড়াইয়ে আমরা সবাই সাথী হব । বিশেষ করে এই নরখাদকদের মৃত্যুদণ্ড দেখতে চাই ।’ তিনি বলেন,’হাইকোর্টে ও সুপ্রিম কোর্টের যে আইনজীবীদের প্রয়োজন, তাঁদের দিয়েই আইনি লড়াই লড়ব। ইতিমধ্যেই অনেক আইনজীবী এই মামলা লড়তে চেয়ে আমার সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করেছেন ।’ পাশাপাশি শুভেন্দু অধিকারী তাঁর উপর, বিজেপি, সনাতন সমাজ এবং জাতীয়তাবাদী আইনজীবীদের উপর আস্থা রাখার জন্য হরগোবিন্দ দাস ও চন্দন দাসের পরিবারকে ধন্যবাদ জানান।
যদিও তিন মূল ঘাতকের প্রতি “মানবিক দৃষ্টিকোন” -এর কারনে জঙ্গিপুর মহকুমা আদালতের বিচারক অমিতাভ মুখোপাধ্যায় তাদের ফাঁসির সাজা দেননি বলে জানিয়েছেন এই মামলার সরকারি আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায় । তিনি বলেন,’যারা দোষী, তাদের প্রত্যেকেরই বয়স কম। বাড়িতে চার পাঁচ জন রয়েছে। বাচ্চা রয়েছে। আমার উল্টোদিকের আইনজীবী এগুলো তুলে ধরেছেন।’ তিনি আরও বলেছেন,’হয়তো এগুলোকে কনসিডারেশন হিসাবে গণ্য করা হয়েছে। আমি ভিক্টিম ও আর এই ঘটনার প্রভাব যে সমাজেও রয়েছে, সেটা বিস্তারিত আদালতে বোঝাই। তবে সুপ্রিম কোর্ট ডেথ সেনটেন্স দিতে বারণ করছে। সেই পরামর্শ তো সবসময়ই বিচারক, বিচারপতিদের মাথায় থাকে।’
বিভাস চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘এটি অত্যন্ত নৃশংস এবং বিরল একটি অপরাধ ছিল। আমরা প্রথম থেকেই আদালতের কাছে সর্বোচ্চ সাজার দাবি জানিয়েছিলাম। পুলিশের পেশ করা ৯৮৩ পাতার চার্জশিট এবং ৩৮ জন সাক্ষীর বলিষ্ঠ বয়ান এই মামলা প্রমাণ করতে সাহায্য করেছে। ১৫ লক্ষ টাকার যে জরিমানা করা হয়েছে, তার একটি অংশ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে দেওয়ার আবেদন জানানো হতে পারে।’ অন্যদিকে, আসামী পক্ষের আইনজীবীরাও এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। তাঁদের দাবি, মামলার রায়ে কিছু আইনি ফাঁক রয়ে গিয়েছে । এই মামলার দুই তদন্তকারী অফিসার (IO) ছিলেন জঙ্গিপুর পুলিশ জেলার এসআই মিঠুন হালদার ও ইন্সপেক্টর প্রসূন মিত্র ।।

