এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,১০ ডিসেম্বর : চলতি বছরের মে মাসে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর স্বাক্ষরের পর ওয়াকফ অ্যামেন্ডমেন্ট বিল আইনে পরিনত হয়েছে । দেশ জুড়ে ওয়াকফ সম্পত্তি নথিভুক্ত করার জন্য উম্মিদ পোর্টাল চালু করেছে কেন্দ্র সরকার । পোর্টালে নথিভুক্ত করার শেষ দিন ছিল গত ৬ ডিসেম্বর । কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি পশ্চিমবঙ্গে ওয়াকফ আইন লাগু করতে দেবেন না বলে প্রতিশ্রুতি দিলে ওই সময় কালের মধ্যে সিংহভাগ সম্পত্তি আপলোড করা হয়নি । ফলে এখন সম্পত্তি ফিরে পেতে রাজ্যের ওয়াকফ বোর্ডগুলিকে ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে দীর্ঘ মামলার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে বলে জানালেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । তিনি ওয়াকফ নিয়ে রাজ্যের মুসলিমদের “সর্বনাশ” করে দেওয়ার জন্য মমতা ব্যানার্জিকে অভিযুক্ত করেছেন ।
কোচবিহারে প্রশাসনিক সভায় মুখ্যমন্ত্রীর বিভিন্ন ইস্যুতে “মিথ্যাচারিতা” সর্বসমক্ষে তুলে ধরতে আজ বিকেলে কলকাতার ৬ মুরলীধর সেন লেনের দলীয় কার্যালয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেন শুভেন্দু অধিকারী । বিশেষ করে তিনি ওয়াকফ নিয়ে অভিযোগ করেন, ‘কোচবিহারের সভাতে বলেছেন যে আমি কোন ধর্মীয় প্রপার্টি দখল করতে দেব না। এর আগে বলেছিলেন আইন কার্যকর করতে দেব না । এখন বলছেন দখল বা বেহাত করতে দেব না । কারণ উনি মনে করছেন যে চিরদিন উনি এখানে থাকবেন। কিন্তু তিনি কত বড় সর্বনাশ করে দিয়েছেন সমস্ত তথ্য সহ আমি বলে দিচ্ছি।’
তিনি বলেন,’কেন্দ্রীয় সরকার তার মাইনরটি অ্যাফেয়ার্স ডিপার্টমেন্ট সমস্ত রাজ্যের প্রতিনিধিদের নিয়ে বারে বারে মিটিং করেছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের দ্বিচারিতা আমি আপনাদের কাছে ডেট ধরে ধরে তুলে দিচ্ছি । পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রতিনিধি রাজ্যের সংখ্যালঘু দপ্তরের অতিরিক্ত সচিব জনাব এম এনাউর রহমান, সিও জনাব মহম্মদ আহসান আলি লক্ষ্ণৌতে ২৪/০৭/২০২৩, দিল্লিতে ০৭/১১/২০২৩, এই দুটি মিটিংয়ে তারা অ্যাটেন্ড করেছেন । এই দুটি মিটিয়ের যে রেজেলিউলশন তাতে তাদের একটা আপত্তি নেই, একটা বক্তব্য নেই । মোট এই সংক্রান্ত মিটিং হয়েছে চারটি। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফে এনাউর রহমান এবং মহম্মদ আহসান আলি প্রতিনিধিত্ব করেছে দুটি মিটিংয়ে । আর বাকি দুটি মিটিংয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকার কোন প্রতিনিধি পাঠাননি । আর যে দুটো মিটিং এ প্রতিনিধি পাঠিয়েছিলেন সেখানে তাদের প্রতিনিধিরা কোন আপত্তি নথিভুক্ত করেনি । এটা হল মমতা ব্যানার্জির দ্বিচারিতা, ভন্ডামি । মুসলিম ভোট নিয়েই উনি কার্যত ক্ষমতায় আছেন৷ মুসলিমদের বিভ্রান্ত করা, ওয়াকফ প্রপার্টি নিয়ে মিথ্যাচার করা, অথচ যেখানে বলার দরকার সেখানে সরকার কোন আপত্তি নথিভুক্ত করেনি ।’
শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন,’এরপরে আপনারা জানেন যে তিনি মিটিং মিছিল করেছেন । তার লোকেরা মিটিং মিছিল করেছে । ওনার মন্ত্রী জনাব সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর জামায়েত উলেমা হিন্দের নামে রামলীলা ময়দানে মিটিং করে বলেছেন রাজ্যের ৫০ টি জায়গায় দু হাজার করে লোক বসিয়ে দেবেন আর ১৫ মিনিট লাগে তার কলকাতাকে ঠান্ডা করতে বা অচল করতে৷এর পরে রানী রাসমণি রোডে তৃণমূলের সংখ্যালঘু সেলের ব্যানারে একটি সভা হয় । সেখানে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা, ওই যার হাতে গ্লাসের কাঁচ ভেঙে লেগেছিল(কল্যাণ ব্যানার্জি), তিনি বলেন যখন যে যেখানে দাঁড়িয়ে প্রার্থনা করবে সেই জায়গাটা ওয়াকফ সম্পত্তি হয়ে যাবে । এবং সেখানে জনাব ফিরহাদ হাকিম থেকে শুরু করে কত বড় বড় গরম গরম ডায়লগ দিয়েছিল ।’
তিনি বলেন,’তার ফলশ্রুতিতে কি হয়েছে ? মোথা লবাড়িতে সাম্প্রদায়িক হিংসা হয়েছে । ৬৮ টা দোকান লুট হয়েছে। তার ফলশ্রুতিতে কি হয়েছে ? ধুলিয়ান সামশেরগঞ্জ-এ আগুন জ্বলেছে । সেখানে দশটা হিন্দু প্রধান গ্রাম সর্বস্ব লুট হয়েছে । হরগোবিন্দ দাস, চন্দন দাস খুন হয়েছে । স্বাধীনতার পরে এই প্রথম হিন্দুদের পলায়ন লোকে দেখেছে বৈষ্ণবনগরে । এইসব ফলাফল হওয়ার পরে মুখ্যমন্ত্রী মুর্শিদাবাদে যান । এখানে উনি বলেন ওয়াকফ আমেন্ডমেন্ট বিল আমরা পশ্চিমবঙ্গের কার্যকর করতে দেব না । দিল্লি সরকার এনেছে, বিজেপি এনেছে যান দিল্লিতে গিয়ে আন্দোলন করুন এখানে কোন আন্দোলন করবেন না৷ তিনি আরো বলেন যে এখানে আন্দোলন করলে আমার থেকে বড় শত্রু কেউ হবে না । গরম গরম ডায়লগ । কারণ ধুলিয়ান সামসেরগঞ্জ-এর পরে তিনি প্যাঁচে চেয়ে পড়ে গিয়েছিলেন ।’
শুভেন্দু বলেন,’হাইকোর্টের ইন্টারফেয়ারেন্স, সেন্ট্রাল প্যারা মিলিটারি ফোর্স-এর ডিপ্লয়মেন্ট এবং এনআইএ তদন্ত চেয়ে পরিবারগুলো যখন গেছে তখন তিনি বুঝেছেন ওনার দুর্নীতিগ্রস্ত নেতারা যারা ধর্ম এবং সম্প্রদায়কে ব্যবহার করে মূলত মুসলিমদের ভোটে জেতেন । মিথ্যাচার করে । বিজেপিকে হিন্দুদের পার্টি বলে তকমা লাগিয়ে । এনআইএ হলে এই সমস্ত লোকেরা বিপদে পড়বে দেখে তিনি গরম গরম ভাষণ দিয়ে বলেন দিল্লি চলে যান।’
তিনি বলেন,’মুখ্যমন্ত্রীর এই ধমক এর পরে তথাকথিত তৃণমূলের মুসলিম নেতারা বলেন যে মুখ্যমন্ত্রী যখন আশ্বাস দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গে কার্যকর হবে না তখন আন্দোলন করার দরকার নেই । পশ্চিমবঙ্গের মালিক যখন বলে দিয়েছে এখানে কার্যকর হবে না তখন আমাদের আন্দোলন করার আর দরকার নেই । তারপর পুলিশের ভয় বলুন বা মমতা ব্যানার্জির প্রতি অগাধ আস্থা, শ্রদ্ধা প্রেম বা ভালোবাসার জন্য তারা আন্দোলন করেনি । তারা এই ভেবে সাইলেন্ট হয়ে যায় যে মুসলিমদের এত বড় ছাতা আছে তাই আমরা এখানে কিছু করবোনা ।’
এরপর তিনি বলেন,’এরপরে কান্ডকারখানা কি হলো ? রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের পরে এমেন্ডমেন্ট রুলে পরিণত হয়ে গেল । কেরালার সিপিএম সরকার, তামিলনাড়ুতে ইন্ডি জোটের সরকার উম্মিদ পোর্টালে আপলোড করতে শুরু করলো । আসাউদ্দিন ওয়াইসির হায়দাবাদেও আপলোড করতে শুরু করল । ৪৬ টা কাগজ লাগবে, গোটা ভারতবর্ষ জুড়ে করতে শুরু করল । আসাউদ্দিন ওয়াইসির হায়দাবাদেও আপলোড করতে শুরু করল । কিন্তু এখানে তো সবাই ঘুমাচ্ছে৷এখানে ৮০ হাজার ওয়াকফ পার্টি আছে বলা হয় । কিন্তু সবাই চুপ ।’
ওয়াকফ সম্পত্তি পোর্টালে আপলোড করার জন্য কেন্দ্রের তরফে রাজ্য সরকারের কাছে পাঠানো ৩ টি চিঠির কথা উল্লেখ করেন শুভেন্দু অধিকারী । তিনি জানান, ২৭ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে প্রথম চিঠি দেন ভারত সরকারের মাইনরিটি এফেয়ার্স মিনিস্টারের সচিব৷ দ্বিতীয় চিঠি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী কিরন রিজেজু ১৮ নভেম্বর দেন । তৃতীয় চিঠিটি দপ্তরের যুগ্ম সচিব রাম সিং ০৪/১২/২০২৫ তারিখে পাঠান৷ তিনি বলেন, ‘কিন্তু এখনো ইনি ঘুমাচ্ছেন। মে ২০২৫ তারিখে রুল তৈরি হয়ে যাওয়ার পর থেকে মুখ্যমন্ত্রী ঘুমাচ্ছেন । কারণ উনি সব । সংবিধানের মালিক, উনিই রাষ্ট্রপতি, উনিই প্রধানমন্ত্রী, পশ্চিমবঙ্গে উনিই সব । অতএব উনি যখন চাইবেন না, হবে না৷ থোরাই কেয়ার । এরপরে ওনার ঘুম ভাঙলো । উনি পিবি সেলিমকে বললেন এখানে তো ওয়াকফ প্রপার্টি মতুয়ালিরা সব বিপদে পড়বে, সব আন অথরাইজড হয়ে যাবে ০৬/১২/২০২৫ তারিখ থেকে । তারপর ২৭ শে অক্টোবর পিবি সেলিম সমস্ত জেলা শাসক বলল তাড়াতাড়ি করে উম্মিদ পোর্টালে আপলোড করুন ।’
শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন,’একরের পর একর ওয়াকফ প্রপার্টি দখল করে বসে আছে, কলকাতাতে মাল্টিস্টোর বিল্ডিং করার জন্য টাকা খেয়ে দিয়ে দিচ্ছেন, এগুলো সব বন্ধ হয়ে যাবে । পশ্চিমবঙ্গে যারা ওয়াকফ প্রপার্টি ৪৬ টা ডকুমেন্ট দিয়ে উম্মিদ পোর্টালে আপলোড করতে পারলো না তাদের এবার লিগেল ব্যাটেলে যেতে হবে । এর জন্য দায়ী কে ? মুসলমানদের ভোটে নির্বাচিত তৃণমূল সরকার এবং তার মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ।’
তিনি বলেন,’যে মুখ্যমন্ত্রী ২০২১ সালের শতকরা ৯২ শতাংশ মুসলিমদের ভোট পেয়েছিলেন, যে মুখ্যমন্ত্রী বা তার দল ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে পোল মুসলিম ভোটের ৯১% পেয়েছিলেন,সেই মুখ্যমন্ত্রী এরাজ্যের মুসলিমদের এতবড় সর্বনাশ করে দিলেন।’ পাশাপাশি তিনি রাজ্যের মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী, ফিরহাদ হাকিমসহ ভোটের সময় মসজিদ থেকে মমতা ব্যানার্জিকে ভোট দেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো মৌলবীদের কাছে এই ইস্যুতে মতামত দেওয়ার জন্য আহ্বান জানান ।।

