এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,০৩ জুন : এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) অফিসার সেজে দেড় কোটি টাকার প্রতারণার অভিযোগে তৃণমূলের প্রভাবশালী নেতা, মন্ত্রী ও বিধায়কদের ঘনিষ্ট পূর্ব বর্ধমানের রায়নার ক্ষেমতা গ্রাম নিবাসী জিন্নার আলী গ্রেপ্তার হয়েছে ৷ ইডি অফিসাররা বুধবার জিন্নার আলীকে তার কলকাতার নিউটাউনের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে । এদিকে ধৃত জিন্নার আলীর সঙ্গে রাজ্যের মন্ত্রী মলয় ঘটক, বর্ধমান দক্ষিণের বিধায়ক খোকন দাস, জামালপুরের বিধায়ক অলোক মাঝি ও ভরতপুরের বিধায়ক হুমায়ূন কবিরের ছবি ব্যাপক ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে । ওই সমস্ত ছবিগুলি নিজের এক্স হ্যান্ডেলে শেয়ার করে তৃণমূলের মন্ত্রী ও বিধায়কদের গ্রেপ্তারের দাবি তুলেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ।
তিনি লিখেছেন,’বালি চুরি, কয়লা চুরি, গরু পাচার, চাকরি বিক্রি, ধর্ষণ, খুন, ভোট লুঠ এত সব গুণের পরে এবার নতুন সংযোজন নকল ইডি অফিসার সেজে প্রতারণার জাল বিছিয়ে ব্যবসায়ীদের থেকে টাকা আদায়। এগুলো তোলামূলের দ্বারাই সম্ভব। প্রতারক শেখ জিন্না আলী, নকল ইডি অফিসার সেজে কোটি কোটি টাকা আদায় করেছে। কিন্তু সামান্য এই ব্যক্তি এত সাহস পায় কি করে? সাহস দেয় তোলামূল সরকার এবং তোলামূল মন্ত্রী বিধায়কগণ। ওনাদের হাত মাথায় থাকলে কসবা ল’কলেজের মনোজিতের মত সবকিছুই করা যায় ! পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মন্ত্রী ও বিধায়কদের সাথে শেখ জিন্না আলীর কিছু ছবি শেয়ার করলাম।ইডির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করবো এই সকল ব্যক্তিদের হেফাজতে নিয়ে বিষয়টি পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করার জন্য।’
প্রসঙ্গত,বুধবার সাত সকালে প্রচুর সংখ্যায় কেন্দ্রীয় বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে পূর্ব বর্ধমানের রায়নার ক্ষেমতা গ্রাম নিবাসী শেখ জিন্নার আলীর বাড়িতে পৌছে যায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি-র অফিসাররা।ক্ষেমতা গ্রামে থাকা জিন্নার আলীর প্রাসাদোপম বাড়ি ঘিরে রাখে কেন্দ্রীয় বাহিনী। বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করেই তল্লাশী শুরু করে দেন ইডি-র অফিসাররা । কলকাতা সহ রাজ্যের আরও একাধিক জায়গায় থাকা জিন্নার আলীর অপর পাঁচটি বাড়িতেও ইডি অফিসাররা এদিন হানা দেয় । জিন্নার আলীর ব্যবহার করা দামি একটি চার চাকা গাড়ি এদিন বিকালে ক্ষেমতা গ্রামের বাড়ি থেকে ইডি বাজেয়াপ্ত করে কলকাতায় নিয়ে যায়। প্রায় একই সময়ে অন্য ইডি অফিসাররা জিন্নার আলীকে তাঁর কলকাতার নিউটাউনের বাড়ি থেকে আটক করে।
তদন্তকারী ইডি অফিসাররা বুধবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত ক্ষেমতা গ্রামের বাড়িতে টানা তল্লাশী চালিয়ে নানা নথিপত্র সংগ্রহ করার পাশাপাশি দামি একটি চারচাকা গাড়ি বাজেয়াপ্ত করে। রায়নার বাসিন্দাদের কথায় জানা গিয়েছে,’মাত্র আড়াই বিঘা জমি আর কুড়ে ঘর ছিল জিন্নার আলীর সম্পদ । কিন্তু শাসক দলের নেতাদের সঙ্গে সক্ষতা গড়ে তুলে জিন্নার আলী কয়েক বছরে রাতারাতি কোটিপতি বনে যায় । রাজ্যের মন্ত্রী মলয় ঘটক সহ বর্ধমান উত্তর বিধানসভার বিধায়ক নিশীথ কুমার মালিক, জামালপুরের বিধায়ক অলোক মাঝি, কেতুগ্রামের বিধায়ক শেখ শাহনওয়াজ, মঙ্গলকোটের বিধায়ক অপূর্ব চৌধুরী, তৃণমূল নেতা কাজল শেখ সহ একাধিক নেতার সঙ্গে জিন্নার আলীর ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ছবি এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখা যায় । রায়নার ক্ষেমতা গ্রাম থেকে শুরু করে বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুর, সটলেক, নিউটাইন, রাজারহাট প্রভৃতি জায়গায় জিন্নার আলী যে সব বাড়ি করেছেন তার আর্থিক উৎস এখন ইডি খুঁজছে বলে জানা গিয়েছে।।

