এইদিন ওয়েবডেস্ক,পশ্চিম মেদিনীপুর : বিজেপি কর্মী তথা অবসরপ্রাপ্ত সেনা জওয়ান পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ডেবরা থানার পুরুষোত্তম নগরের বাসিন্দা সঞ্জয় বেরা(৪২)কে হেফাজতে নিয়ে পিটিয়ে মারার অভিযোগ উঠেছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ডেবরা থানার পুলিশের বিরুদ্ধে । ডেবরা থানার ওসি এবং এই ঘটনায় জড়িত পুলিশ কর্মীদের বরখাস্ত ও গ্রেফতারির দাবি জানিয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু । আজ বুধবার সন্ধ্যায় ডেবরার দলীয় কার্যালয়ে সাংবাদিক বৈঠকে তিনি আরও জানিয়েছেন যে বৃহস্পতিবার আদালত একাধিক চিকিৎসক রেখে বাড়ির লোকের উপস্থিতিতে এবং ভিডিওগ্রাফী করে সঞ্জয় বেরার ময়নাতদন্ত করতে নির্দেশ দিয়েছে । তিনি বলেন,আমি এই রায়কে স্বাগত জানাচ্ছি । আমি আশা করব নিহতের শিশুসন্তানের দিকে তাকিয়ে আদালত যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে ৷’
নিহতের শিশুসন্তানকে পাশে বসিয়ে তিনি বলেন,’গত ৪ জুন নির্বাচনের ফলাফল যেদিন ঘোষণা হয় সেদিন রাত্রে রান্না করছিলেন সঞ্জয় বেরা । সেই সময় পুলিশ তাকে ডেকে নিয়ে যায় । ডেবরা থানার পুলিশ সেদিন তৃণমূলের জয়ের আনন্দে বিভোর ছিল ।’ ডেবরা থানার ওসিকে নিশানা করে তিনি বলেন,’কেশপুরের ছাপ্পা মেরে তিনি এনামুলের কাছ থেকে ঘড়ি নিয়েছেন, টাকা নিয়েছেন এবং দীপক অধিকারীবাবুকে ছাপ্পা মেরে জিতিয়েছেন । তাই আজ জয়ের আনন্দে ডেবরা থানার পুলিশ, যারা বালি থেকে টাকা তোলে, আর সারারাত ধরে ঝাড়খন্ড থেকে আসা গরুকে হাঁটিয়ে হাঁটিয়ে ভাইপোর ডায়মন্ড হারবারে পাঠায় যাতে নৌকা করে বাংলাদেশে পাচার করা যায়। সেই পুলিশ সঞ্জয়কে তুলে নিয়ে এসে ব্যাপকভাবে মারধর করে । অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে প্রেসিডেন্সিতে নিয়ে যায় । সেখানে হাতের বাইরে চলে গেলে পিজিতে ভর্তি করে এবং তিনি মারা যান । এটা হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা ।’ তিনি বলেন,’সুপ্রিম কোর্টের আইন অনুযায়ী হেফাজতে মৃত্যু হলে তার শাস্তি পুলিশের যারা ছিলেন তাদের ওপর বর্তায় । সঞ্জয় বেড়া বিজেপির একনিষ্ঠ কর্মী ছিলেন এবং তিনি ছিলেন অবসর অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মীও । যিনি জীবনের একটা বড় অংশ দেশমাতৃকার সেবায় ব্যয় করেছেন তাকে পশ্চিমবঙ্গে এই পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হলো । এই রাজ্যের গণতন্ত্রের অধিকার সব হরণ করে নিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস । তারা যদি ভাবে ৪৫ শতাংশ ভোট পেয়ে ৩৯ শতাংশ ভোট পাওয়া পার্টিকে শেষ করে দেবে তাহলে তারা ভুল করছে । আমরা বিচার ব্যবস্থার প্রতি আস্থা রেখে গণতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন কে তীব্র থেকে তীব্রতর করব ।’
শুভেন্দু অধিকারী জানিয়েছেন বৃহস্পতিবার ডেবরা অগ্নিমিত্রা পালের নেতৃত্বে ধিক্কার মিছিল হবে । তিনি বলেন,’সঞ্জয়ের সপ্তম শ্রেণীতে পড়া শিশু পুত্রকে পিতৃহারা করে দেওয়া হলো । এই খুনের দায়িত্ব সম্পূর্ণ মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির৷ এই ছোট্ট বাচ্ছার ৪২ বছরের বাবাকে কেড়ে নিল আমাদের ট্যাক্সের পয়সায় বেতন পাওয়া পুলিশ । পশ্চিমবঙ্গ যে রসাতলের শেষ প্রান্তে চলে গেছে এই বাচ্চাদের মুখ তার একটি প্রকৃষ্ঠ উদাহরণ । দু’কান কাটা এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর যদি লজ্জা থাকে তাহলে এই পুলিশগুলোকে সাসপেন্ড করে হেফাজতে নিয়ে প্রকৃত রাজধর্ম পালন করুন, এই চ্যালেঞ্জ বিরোধী দলনেতা আপনাকে দিচ্ছে ।’
সেই সাথে মঙ্গলবার পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার কেশিয়ারি বিডিওর ডাকা বৈঠকে যোগ দিতে যাওয়া বিজেপি নেত্রী মৌমিতা সিংহকে মারধরের ঘটনায় কেশিয়ারি বিডিওর,জয়েন্ট বিডিওসহ হামলায় জড়িত তৃণমূল নেতাদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি । নিজের ফেসবুক পেজে এনিয়ে শুভেন্দু অধিকারী লিখেছেন,’গতকাল পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশিয়াড়ি পঞ্চায়েত সমিতির বিরোধী নেত্রী শ্রীমতি মৌমিতা সিংহ কে কেশিয়াড়ির বিডিও অর্থ, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন “স্থায়ী সমিতির” একটি সাধারণ সভায় যোগদানের জন্য ওনাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন এবং সেখানেই ব্লক সভা কক্ষের ভেতরে তৃণমূলের কল্পনা শীট এর নেতৃত্বে তৃণমূলের সদস্যরা তাকে নির্মম ভাবে মারধর করে। পরে তাকে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়। আজ ওনাকে দেখতে হাসপাতালে গিয়েছিলাম। মৌমিতা দেবীর বাঁ হাতে গুরুতর চোট আছে, গোটা শরীরে আঘাত রয়েছে। ওনাকে আমরা উন্নত চিকিৎসার জন্য বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। অপরাধীদের বিরুদ্ধে মহামান্য আদালতের নির্দেশ মেনে অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। আমরা কেশিয়াড়ির বিডিও সহ প্রত্যেক অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। আমি ঈশ্বরের কাছে মৌমিতা সিংহ মহোদয়ার দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি।’।