এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,১৬ ফেব্রুয়ারী : বাংলাদেশ থেকে প্রাণ বাঁচিয়ে ভারতে পালিয়ে আসা হিন্দুদের গ্রেপ্তার করে জেলা ঢোকানো হলেও রোহিঙ্গা মুসলিমদের পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ গ্রেফতার করছে না বলে অভিযোগ তুললন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । আজ রবিবার কলকাতার ইন্ডিয়ান মিউজিয়ামের এবিসি হলে খোলা হাওয়া আয়োজিত ‘বাংলাদেশ ইন ক্রাইসিস’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এই অভিযোগ করেছেন শুভেন্দু অধিকারী । দৃষ্টান্তস্বরূপ তিনি ৮৫ বছরের এক বাংলাদেশি হিন্দু বৃদ্ধাকে রায়গঞ্জ মহকুমা আদালতের দেওয়া ২ মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়ার কথা উল্লেখ করেন ।
শুভেন্দু অধিকারী বলেন,’বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোতে এই সমস্যা হচ্ছে না । সমস্যা হচ্ছে অবিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে । বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে । আপনারা তিন চার সপ্তাহ আগে দেখেছেন ৮৫ বছরের বৃদ্ধা মা, তাকে দু’মাসের জেল দিয়েছে রায়গঞ্জ মহকুমা আদালত । তার অপরাধ হচ্ছে তিনি একজন হিন্দু,প্রাণ বাঁচানোর জন্য তিনি এবং তার পরিবারে আরও দু’জন সদস্য কাঁটাতার টপকে ভারতে ঢুকে পড়েছেন । তাকে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে এবং সেই মাকে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা অনুযায়ী দু’বছর জেল হওয়ার কথা । কিন্তু বিচারক তার বয়স দেখে দু’মাসের জেল দিয়েছেন ।’
শুভেন্দু অধিকারীর অভিযোগ,’অথচ রোহিঙ্গা মুসলিমদের ঢোকানো হয়, গ্রেফতার করা হয় না । সাদ শেখ, জাবেদ মুন্সির মত আনসারুল্লা বাংলার জঙ্গিদের বাইরের রাজ্যের পুলিশ আছে গ্রেফতার করে । সেই রাজ্যে বাংলাদেশের রাজনৈতিক কর্মীকে প্রাণ বাঁচাতে চলে আসায় গ্রেপ্তার হতে হয় । হিন্দু পরিবারকে তাদের ধর্ম বাঁচানোর জন্য এ রাজ্যে চলে এসে গ্রেফতার হতে হচ্ছে ।’
তিনি বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গ সরকার তো তোমাদের কথা শুনবে না । আর রাজ্যপালের ভাষনের ওপর বলার সুযোগও খুব কম । কারণ স্পিকার হস্তক্ষেপ করে কি বলবে আমি এখুনি বলে দিচ্ছি । বলবে, ‘এটা অন্য রাষ্ট্রের বিষয়, বিধানসভায় এটা আলোচনার বিষয় নয়’ । অতএব এই নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে ।’
শুভেন্দু অধিকারী জানান, কালিয়াগঞ্জে ৬ জন, রানাঘাটের ৫১ জন, গোপালগঞ্জের আওয়ামী লীগের ছাত্রলীগের ছয় জনকে গ্রেফতার করেছে খড়দা পুলিশ । তিনি বাংলাদেশের হিন্দু, বৌদ্ধ প্রভৃতি সংখ্যালঘুদের এবং আওয়ামী লীগের পরিচিত লোকেদের আশ্রয় দেওয়ার দাবি জানান। তিনি বলেন,’কারন তারা কেউ রোহিঙ্গা মুসলমানদের মত বা সাদ শেখেদের মত উগ্রবাদী, জঙ্গিবাদী নয় ।’
ফের বিএসএফকে সীমান্তে ক্যাম্প করার জন্য জমি না দেওয়ার জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে অভিযুক্ত করেন বিরোধী দলনেতা । তিনি বলেন,’৫৯৬ কিলোমিটার জমি দেয়নি । আমরা একাধিক বার চেচামেচি করার পর আর আপনারা টক শো করার পর শেষ তিনটে ক্যাবিনেট মিটিংয়ে ঠেলায় না পড়লে বিড়াল গাছে ওঠে না । এখন দেখবেন যে রাজ্য সরকার বিএসএফকে জমি দিতে শুরু করেছে । এটা সম্ভব হয়েছে আমরা ও সংবাদ মাধ্যম আওয়াজ তোলার জন্য ।’
বাংলাদেশকে চালাচ্ছে পাকিস্তান
‘বাংলাদেশকে কার্যত পাকিস্তানি চালাচ্ছে’ বলেও এদের মন্তব্য করেন শুভেন্দু অধিকারী । তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত ওখানে কোনদিন অফিসে থাকছেন না । তিনি গোটা বাংলাদেশ ঘুরে বেড়াচ্ছেন । বাংলাদেশে এখন যে মৌলবাদী সরকার চলছে, এখানে বিএনপি’র কোন রোল নেই, আওয়ামী লীগের কথা তো ছাড়ুন, এখানে জাতীয় পার্টিরও কার্যত কোনো রোল নেই । এখানে জামাতের লোকেরা চালাচ্ছে যারা ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের সমর্থক ছিল । জামাতের দলীয় কার্যালয়ে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত প্রতিদিন আসছে । সব ব্যাপারেই নাক গলাচ্ছে । ওরাও তো পরিকল্পিতভাবে সনাতন হিন্দুদের শূন্য করতে চাইছে । আর মুক্তিযুদ্ধের যারা ধারক, বাহক বা সমর্থক,তারা সীমান্ত সুরক্ষা, সরকারি দপ্তর, শিক্ষা দপ্তর থেকে তাদের বাদ দিচ্ছে । বিভিন্ন কমিটি থেকে বাদ দিচ্ছে । এমনকি যে সমস্ত ভাস্কর্য, মূর্তি বা স্মৃতিচিহ্ন আছে সব মুছে ফেলছে । শুধু বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমান নয়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কোন মুর্তি এই মুহূর্তে বাংলাদেশে পাওয়া যাবে না । চট্টগ্রামে গান্ধীজীর স্মারক ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে । প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর নামে একটা লাইব্রেরী ছিল সেটাও ভেঙে দেওয়া হয়েছে । এই যে শক্তি এটা ভয়ংকর শক্তি । যদি এদের দ্রুত না রোখা হয় তাহলে আগামী দিনে গোটা বাংলাদেশ পাকিস্তানিদের হাতে চলে যাবে । হয়তো একদিন সকালে শুনতে পাবেন যে বাংলাদেশ বলছে বিভাজন ভুল ছিল আমরা সংযুক্তিকরণ চাইলাম ।’।

