দিশার দিদির পরিচিত অন্বয়। নিশার বিয়ে হয়ে গেছে ওর কলিগের ভাই অন্বয়। এমনিতে দিশা আর নিশা দুই বোন হরিহর আত্মা।
- এই বোনু অন্বয়ের আজ একটা লেখা প্রকাশিত হয়েছে। জাস্ট ফাটাফাটি। দারুণ লেখে রে। আমি ওর ডাই হার্ট ফ্যান।
- হ্যাঁ কয়েকদিন থেকেই দেখছি তুই আজকাল ওকে নিয়ে খুব পড়েছিস। ফেসবুক খুললেই দেখি তো তোর কমেন্ট বক্সে লেখা- ওহ্ কি লাগছে! ও তোর প্রেমে পড়ল নাকি রে দি? জিজুকে বলি।
- হাহাহা! পাগলি, ও আমার ভাইয়ের মতোই রে। আর ওর ভীষন পার্সোনালিটি সবার সাথে মেশে না।
-‘দি ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাবো ওকে?’
-দ্যাখ পাঠিয়ে কি হয় !
অট্টহাসিতে বোনের সাথে কথা শেষে নিশা ফোনটা কেটে দিলো।
দিশা অন্বয়কে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠায়। ঠিক পাঁচ মিনিটের মধ্যে রিকোয়েস্ট একসেপ্টেটেড।
দিন চারেক পর….
-‘হাই… তুমি কি নিশাদির পরিচিত?’
-‘হ্যাঁ আমার দিদি…’
দিশা আর অন্বয়ের মধ্যে বেশ কথাবার্তা শুরু হয়।
ক্রমশ দিশা জড়িয়ে পড়ে অন্বয়ের সাথে কথা বলার নেশায়। রাত তিনটে তো ওদের দুজনের কাছে সন্ধ্যের সমানই হয়ে গিয়েছিল। দিশা সামনাসামনি দেখা করার প্রস্তাব কখনোই পায়নি অন্বয়ের থেকে কারণটা ওর অজানাই ছিল। তবু দিশা ওর সবটুকু দিয়ে অন্বয়কে ধরে রাখতে চেয়েছিল। কারণ ও যে অজান্তেই অন্বয়কে মনের খুব কাছে এনে ফেলেছিল।
প্রায় এক বছর পার।
অন্বয় নিজের জগতেই মত্ত থাকে। এদিকে দিশাও নিজের জীবনে খুব ব্যস্ত। এখন আর ওদের দুজনের সে ভাবে কথাবার্তা হয় না।
হঠাৎ একদিন সকালে দিশার বান্ধবী,
-‘ দিশা তুই তো ইন্টারনেটে ভাইরাল! তোর একটা ন্যু*ড পিকচার ভাইরাল!’
-‘হোয়াট ?’
-‘প্রথমে ভেবেছিলাম এ. আই এফেক্ট কিন্তু না! ছবিতে স্পষ্ট তোর ফোনের ওয়াটার মার্কটা।’
দিশা ফোনটা কেটে দৌড়ে টয়লেটে গিয়ে চোখে মুখে জল ছিটে দিতে থাকে। কান্নায় বুক ফেটে যাচ্ছে। কারণ মেসেঞ্জার আর হোয়াটসঅ্যাপ এ একমাত্র অন্বয়কেই ও খোলামেলা ন্যু*ড ছবিগুলো পাঠিয়েছিল রাতের বন্ধুত্বের নেশায়। কিন্তু আজ ওর গায়ে ছাপ লেগে গেল পস্টিটিউটের। ভাবলেও ওর নিজের গা গুলিয়ে উঠছে।
দুপুরে সাইবার ক্রাইমে রিপোর্ট করে দিশা। আই. পি এড্রেস থেকে জানা যায় ওটা কুলতলার আশে পাশের কোনো জায়গা থেকে আপলোড করা হয়েছিল।
পুলিশের এস.আই
-‘ম্যাডাম কিছু মনে করবেন না দোষ আপনারও কম কিছু নয়’।
দিশা নিশ্চুপ। বুক ফাটছে, চাইলেও অন্বয়ের নামটা মুখে আনতে পারছে না।
-‘ম্যাডাম ছবিটা যাতে সরিয়ে নেওয়া যায় আমরা সেই ব্যবস্থা করে দেবো। ডোন্ট ওয়্যারি বাড়ি যান ‘।
দিশা মোবাইল খুলে দেখলো দিদির মিসড কল প্রায় শ’খানেক। মা বাবা কবেই পৃথিবী ছেড়ে গেছে। দিদির কাছে মানুষ। দিশা চেয়েছিল মনের মানুষ খুঁজতে। তাইতো রাতের নেশায় মেতে নিজের সর্বনাশ ডেকে আনলো এভাবেই।
অন্বয়ের সাথে কথা বলা দরকার। এই প্রথমবার দিশা মেসেজ ছেড়ে অন্বয়কে ফোন করলো। দু’তিনবার রিং হবার পর ফোনটা ও ধরলো,
-‘ ডোন্ট ডিসটার্ব মি, ইউ আর এ প্রস, সেইম ওন ইউ’।
অন্বয় কথা গুলো শেষ করার আগেই শুনতে পেলো দুরন্ত গতিতে ছোটা ট্রেনের শব্দ।
পরদিন নিউজ পেপারে – ন্যু*ড ছবি ভাইরাল হওয়ায় ট্রেনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা তরুণী ।।