শ্রাবণ অফিস থেকে ফিরে অভ্যাসের বশে বেল বাজালো কিন্তু ভেতর থেকে কেউ দরজা খুলল না। হঠাৎ শ্রাবণের মনে পড়লো সেতো বাইরে থেকে লক্ করেই বেরিয়েছিল । মনে পড়লো গতকাল রাতে রিয়ার সাথে ঝগড়ার কথা। অগত্যা দরজা খুলে ঘরে পা দিতেই রিয়ার নীল চটিটা দেখে একটু চমকে গেল শ্রাবণ। কিন্তু না, রিয়া পুরণো চটিটাই পড়ে গেছে। চারিদিকে নিস্তব্ধ । নেই চুড়ির শব্দ, নেই বাসনের শব্দ, নেই কোন কথা, বায়না, ঝামেলা। এটাই তো চেয়েছিল শ্রাবণ। যে মেয়ে একটা সন্তান দিতে পারে না, যেখানে শিশু কাঁদেনা, যেখানে বাবা-মা বাচ্চা কে নিয়ে আনন্দ করতে পারে না, সেটা আবার কিসের সংসার? ফ্রেশ হয়ে সোফায় বসে ভাবতে ভাবতে গলাটা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল।
পাঁচ বছরের সংসার রিয়া আর শ্রাবণের। প্রেমের বিয়ে। বাড়িতে দুইজনেই থাকতো। শ্রাবণ অফিস গেলে রিয়া অনলাইনে হাতের কাজ শিখতো। বেশ কিছু জিনিস বানিয়ে শ্রাবণ কে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল ঠিকই তবে সব গুণের মধ্যে ও রিয়ার একটা দোষ বড়ো করে দেখা দিচ্ছিল শ্রাবণের কাছে। কাল সামান্য কথা কাটাকাটির মধ্যেই রিয়াকে সে আসল কোপটা দিয়েই দিল। “এত ঘর গোছানো, সাজগোজ, গল্প, হাসি কোথা থেকে আসে যার এতদিনে একটা সন্তান হোলো না!” কথাটা রিয়ার গালে একটা চড়ের মতো আঘাত করে হৃদয়ে যেন রক্তক্ষরণ হতে লাগলো। শরীর অসাড় হয়ে গেল নিমেষে। কানের মধ্যে ভোঁ ভোঁ করতে লাগলো। মাথার পেছনে চিন চিন করে ব্যথা শুরু হোলো। রাত তখন দশটা। রিয়া ডাইনিং টেবিলে শ্রাবণের খাবার গুছিয়ে ঘরে এসে শুয়ে পড়েছিল। আর দুজনের কোন কথা হয়নি। শ্রাবণ টিভি দেখে রাতের খাবার খেয়ে শুয়ে পড়েছিল। জানতেও পারেনি মাঝরাতে রিয়া ব্যাগ গুছিয়ে বাপের বাড়ি যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছিল। সকালে শ্রাবণ কে এককাপ চা দিয়ে বলেছিল- “সন্তান না হলে যদি একটি মেয়ে সংসারে থাকার অযোগ্য হয়, তাহলে এই সংসার এখানেই থেমে থাক।” চোখের জল গোপন করে রিয়া বেরিয়ে গেল। শ্রাবণও তখন ভেবেছিল এই নিষ্ফলা সংসার থাকার চেয়ে না থাকাই ভালো। না, রিয়া বাপের বাড়ি ও যায়নি। শ্রাবণের কাছেও আর ফিরে আসেনি। রিয়ারা ফেরেনা কারণ তাদের ও আত্মসম্মান আছে।।