দিব্যেন্দু রায়,কাটোয়া(পূর্ব বর্ধমান),১৭ ডিসেম্বর : পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়ায় গুলিকান্ডে এবার গুলিবিদ্ধ যুবককে ধর্ষণ ও পকসো আইনে গ্রেফতার করল পুলিশ । লালচাঁদ শেখ নামে ওই যুবকের প্রেমিকার মা শুক্রবার কাটোয়া থানার দ্বারস্থ হন । তিনি লালচাঁদের বিরুদ্ধে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাঁর মেয়ের সঙ্গে সহবাসের অভিযোগ তুলেছেন । এমনকি সহবাসের ফলে মেয়ে অন্তসত্ত্বাও হয়ে পড়ে বলে পুলিশের কাছে অভিযোগে জানিয়েছেন ধৃত কিশোরীর মা । আর এই অভিযোগ পেতেই এদিন বিকেল নাগাদ লালচাঁদের বাড়ি কাটোয়ার কেশিয়া মাঠপাড়া এলাকা থেকেই তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ ।
কাটোয়ার বাগানেপাড়ায় বাড়ি লালচাঁদ শেখের প্রেমিকার । জানা গেছে, বছর সতেরোর ওই কিশোরীর বাড়িতে রয়েছেন মা,বাবা ও দাদা । কিশোরীর বাবা ও দাদা রাজমিস্ত্রীর কাজ করেন । কর্মসুত্রে তাঁরা ভিন রাজ্যেই থাকেন । বাগানেপাড়ায় টালির ছাউনি দেওয়া ভগ্নপ্রায় ঘরে মায়ের সঙ্গে থাকে ওই কিশোরী । হতদরিদ্র সংসার । অভাবের কারনে চতুর্থ শ্রেণীর পর তাকে পড়াশোনা ছেড়ে দিতে হয় । নিজের খরচ খরচা চালানোর জন্য বছর দুয়েক আগে আড়াই হাজার টাকা বেতনে কাটোয়া শহরে একটি স্টেশনারী দোকানে কাজে লাগে ওই মেয়েটি । তবে তার আগে থেকেই লালচাঁদ শেখের সঙ্গে তার প্রেম পর্ব চলছে বলে জানা গেছে ।
জানা গেছে,কেশিয়া মাঠপাড়ায় লালচাঁদ শেখের বাড়ির আশেপাশে কিশোরীদের এক আত্মীয়ের বাড়ি রয়েছে । সেখানে যাতায়তের সুত্রেই কিশোরীর সঙ্গে লালচাঁদের পরিচয় । দেখতে রুপসী ওই কিশোরীর ১৩ বছর বয়স থেকেই লালচাঁদ প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে । কিশোরীর মা জানিয়েছেন, দোকানে কাজ করার সময় থেকেই লালচাঁদ তাঁর মেয়ের পিছুতে লেগেছিল । তারপর দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে । আর এই কারনে দোকানমালিক তাঁর মেয়েকে কাজ থেকে ছাড়িয়ে দেয় । পুলিশের কাছে তিনি অভিযোগে জানিয়েছেন, লালচাঁদ তাঁর মেয়েকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বারংবার সহবাস করেছে ।এমনকি সহবাসের ফলে তাঁর মেয়ে অন্তসত্ত্বা হয়ে পড়েছিল ।
কিশোরী মা বলেন, ‘এরপর আমি লালচাঁদের সঙ্গে আমার মেয়ের বিয়ের জন্য কথাবার্তা বলছিলাম । কিন্তু লালচাঁদ ও তার পরিবার ৬০ হাজার টাকা এবং ৩ ভরি সোনার গহনা সহ আরও কিছু সামগ্রী বরপন বাবদ দাবি করে । কিন্তু অত সামর্থ্য আমাদের নেই । তাই বাধ্য হয়ে আমাদের পিছিয়ে আসতে হয়েছিল ।’
জানা গেছে,প্রেমিক ও তার পরিবারের এই প্রকার দাবি মেনে নিতে পারেনি ওই কিশোরী । তারপর মনের দুঃখে সে মাসির বাড়ি ঝাড়খণ্ডে চলে যায় । সেখানে একটি নাচের দলের সঙ্গে সে যুক্ত হয়ে পড়ে । সেখান থেকে কাজের সুত্রে চলে যায় উত্তরপ্রদেশ । কিন্তু সে লালচাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলতো । কারন তখনও কিশোরীর বিশ্বাস ছিল তাকেই বিয়ে করবে প্রেমিক লালচাঁদ । কিন্তু ভিন রাজ্যে থাকার সময়েই মেয়েটি বন্ধুবান্ধবদের কাছ থেকে জানতে পারে অন্য আর একটি মেয়ের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছে তার প্রেমিক । এমনকি লালচাঁদ তাকে নিয়ে এলাকায় নানান অপপ্রচারও চালাচ্ছিল বলে জানতে পারে মেয়েটি । আর তখনই কিশোরীর মধ্যে প্রতিহিংসা কাজ করে । সম্প্রতি সে বাড়ি ফিরে আসে । তারপরেই ঘটে যায় প্রেমিককে লক্ষ্য করে গুলি চালানোর ঘটনাটি ।
জানা গেছে,পুলিশের জেরায় ধৃত কিশোরী কবুল করেছে বুধবার রাতে প্রেমিক লালচাঁদ শেখকে সে ফোন করে আসতে বলে । প্রথমে সে প্রেমিককে চুম্বন করে । তারপর পোশাকের ভিতরে লুকিয়ে রাখা ওয়ান সার্টার পিস্তলটি বের করে প্রেমিককে লক্ষ্য করে এক রাউন্ড গুলি চালিয়ে দেয় ।
অবশ্য গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ায় প্রাণে বেঁচে যায় কিশোরীর প্রেমিক । তারপর ওইদিন রাতেই এক রাউন্ড গুলি ও পিস্তলসহ কিশোরীকে গ্রেফতার করে কাটোয়া থানার পুলিশ । কিন্তু কিশোরীর কাছে আগ্নেয়াস্ত্র ও কার্তুজ কোথা থেকে এলো তা ভাবিয়ে তোলে পুলিশকে । যদিও পরে কিশোরীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পারে প্রেমিককে খুন করার উদ্দেশ্যে উত্তরপ্রদেশ থেকে সে কার্তুজসহ ওই আগ্নেয়াস্ত্রটি চুরি করে এনেছিল ।।