এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,০৫ এপ্রিল : আজ বর্তমানে ইডি হেফাজতে রয়েছে সন্দেশখালির ‘ত্রাস’ শেখ শাহজাহান । আজ শুক্রবার তাকে কঠোর নিরাপত্তায় ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য জোকা হাসপাতালে আনা হয়েছিল । আর তখনই সাধারণ মানুষের ক্ষোভের মুখে পড়তে হয় ওই তৃণমূল নেতাকে । মানুষ দাবি করে যে ‘দুর্বৃত্ত শাহজাহানকে নিরাপত্তা নয়, বরঞ্চ গুলি করে মারুন । আর ওর জন্য বরাদ্দ নিরাপত্তা সন্দেশখালির মানুষদের দিন, তাতে তারা নিজের ভোট নিজেরা নির্বিঘ্নে দিতে পারে ।’ যদিও ক্ষিপ্ত জনতাকে ওই কুখ্যাত নেতার আশেপাশে যেতে দেয়নি কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা ।
প্রসঙ্গত, বসিরহাটের তৃণমূলের সর্বেরসর্বা শেখ শাহজাহানের বিরুদ্ধে কালো টাকা সাদা করা, আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষদের জমি জায়গা জোর করে দখল করে মাছের ভেড়ি বানানো, খুন, সরকারি দপ্তরে ঢুকে আধিকারিকদের ওপর হামলা চালানো প্রভৃতি মারাত্মক সব অভিযোগ উঠেছে । তবে যে অভিযোগকে ঘিরে গোটা দেশজুড়ে আলোড়ন পড়ে গেছে, সেটা হল সন্দেশখালি এলাকার মহিলাদের পার্টি অফিসে ডেকে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ । শাহজাহান ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে সন্দেশখালীর মহিলারা তাদের এই সমস্ত অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে । আর এর পর থেকেই তৃণমূল নেতা শাহজাহানের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসছে রাজ্যের মানুষ । তারই প্রতিফলন দেখা গেল আজ কলকাতার জোকা হাসপাতালে শাহজাহানকে করিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময়।
গত ৫ জানুয়ারী সন্দেশখালীতে ইডি এবং সিএপিএফ কর্মীদের উপর হামলার ঘটনার পর বেপাত্তা হয়ে যায় শেখ শাহজাহান । তাকে গ্রেপ্তার না করায় রাজ্য পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ওঠে একাধিক প্রশ্ন । শেষ পর্যন্ত দীর্ঘ টালিবাহানার পর পুলিশ শাহজাহানকে গ্রেফতার করতে বাধ্য হয় । সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (সিবিআই) এর হাতে শাহজাহানকে তুলে দেওয়া নিয়েও দড়ি টানাটানি করে পুলিশ । অবশেষে আদালতের নির্দেশের পর পুলিশ তাকে সিবিআই এর হাতে তুলে দিতে বাধ্য হয় । পরে আদালতের মাধ্যমে শাহজাহানকে নিজেদের হেফাজতে নেয় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট ৷ গত সোমবার কলকাতার মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের (পিএমএলএ) একটি বিশেষ আদালত শাহজাহানকে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত ইডি হেফাজতে পাঠিয়েছে।
এদিকে সন্দেশখালি মামলায় আদালতের তিরস্কারের মুখে পড়তে হয়েছে রাজ্য সরকারকে । কলকাতা হাইকোর্ট বিষয়টিকে অত্যন্ত লজ্জাজনক বলে উল্লেখ করে আদালত বলেছে, রাজ্যে নাগরিকদের নিরাপত্তা যদি বিপদে পড়ে, তার দায় পুরো রাজ্য সরকারের।
আদালত বলেছে, সন্দেশখালীতে যা ঘটেছে তাতে যদি এক শতাংশও সত্যতা থাকে, তবে এটি অত্যন্ত লজ্জাজনক কারণ পরিসংখ্যান প্রতিবেদনে বাংলাকে নারীদের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ রাজ্য বলে দাবি করা হয়েছে ।
আদালত বলেছেন,সন্দেশখালীতে যা ঘটেছে তার নৈতিক দায় পুরো জেলা প্রশাসন ও ক্ষমতাসীন দলেরই নেওয়া উচিত। কোনো নাগরিকের নিরাপত্তা বিপন্ন হলে ১০০ শতাংশ দায়িত্ব ক্ষমতাসীন দলের। এক্ষেত্রে সরকারও দায়ী ।
প্রসঙ্গত,কলকাতা হাইকোর্ট এই বিষয়ে স্বতঃপ্রণোদিতভাবে শুনানি করছে। এ সময় আইনজীবী প্রিয়াঙ্কা টিব্রেওয়াল আদালতকে বলেন, সন্দেশখালীতে তার কাছে অনেক অভিযোগ রয়েছে। এত মানুষ এসেছে। কিন্তু তৃণমূল নেতারা বলছেন, কিছুই হয়নি। তিনি বলেন,’আমি হলফনামা রেকর্ডে রাখছি। আমি তাদের নাম উল্লেখ করছি না, অন্যথায় তারা বিপদে পড়বে। সেখানে একজন মহিলা তার বাবার সাথে দেখা করতে গিয়েছিল। যখন সে ফিরে আসে, তাদের জমি দখল করা হয় এবং তাকে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করা হয়।’
টিব্রেওয়ালা বলেছেন,’এখানে বেশিরভাগ শিকারই অশিক্ষিত। ই-মেইল ভুলে যাও, সে চিঠিও লিখতে পারে না। ৫০০ টিরও বেশি মহিলা আমাদের কাছে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ করেছেন। আমাদের কাছে হলফনামা রয়েছে যাতে বলা হয়েছে, একজন শাহজাহানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার এক হাজার সঙ্গী গ্রামে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং শাহজাহানের বিরুদ্ধে বিবৃতি না দেওয়ার জন্য তাকে হুমকি দিচ্ছে। এই লোকেরা বলছে যে মহিলারা বিবৃতি দিলে তারা তাদের স্বামী ও সন্তানদের শিরশ্ছেদ করবে এবং ফুটবল খেলবে ।’
এই মামলার শুনানির সময় প্রধান বিচারপতি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পাশাপাশি শেখ শাহজাহানের আইনজীবীকেও তিরস্কার করেন। মামলার অভিযোগ তদন্তের দাবি জানান তিনি। প্রধান বিচারপতি শিবগানাম বলেন,আপনি এমন একজন অভিযুক্তের হয়ে হাজির হচ্ছেন যার তদন্ত চলছে। আপনি আগে আপনার চারপাশের অন্ধকার দূর করুন, তারপর আপনার অভিযোগ জানান।।