এইদিন ওয়েবডেস্ক,উত্তর ২৪ পরগণা,০৬ জানুয়ারী : উত্তর ২৪ পরগণা জেলার সন্দেশখালি থানার সরবেড়িয়া গ্রামে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের(ইডি) আধিকারিকরা আক্রান্ত হওয়ার পর থেকেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছেন রাজ্যের জেলবন্দি মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের ‘ঘনিষ্ঠ’ তৃণমূল নেতা শাহজাহান শেখ । এক সময় সিপিএমের এই দাপুতে নেতাকে স্থানীয় ‘মাফিয়া’ আখ্যা দিয়েছেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । শুক্রবার মুর্শিদাবাদের বেলডাঙ্গায় জনসভায় ভাষণে শুভেন্দু অধিকারী অভিযোগ তোলেন যে ২০১৯ সালে চার বিজেপি কর্মীকে খুনের আসামি শাহজাহান শেখ বহু আদিবাসী ও হিন্দুদের সম্পত্তি বেআইনিভাবে দখল করে নিয়েছেন । এমনকি সরকারি প্রকল্পে দুর্নীতি থেকে শুরু করে বাংলাদেশে হেরোইন পাচারের অভিযোগ তুলেছেন শাহজাহান শেখের বিরুদ্ধে । কিন্তু কে এই শাহজাহান শেখ ? কিভাবে তিনি হয়ে উঠলে উত্তর ২৪ পরগণা জেলার তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বেসর্বা ?
শোনা যায়, শাহজাহান শেখ আদপে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী । সিপিএমের রাজত্বকালে তিনি পশ্চিমবঙ্গে অনুপ্রবেশ করেন । তখন উত্তর ২৪ পরগনায় ছিল সিপিএমের নেতা মজিদ মাস্টার ও বাবু মাস্টারদের দাপট । তাদের হাত ধরেই সিপিএমে পড়ন্ত বেলায় লাল পতাকার ছত্রছায়ায় আশ্রয় নেন শাহজাহান শেখ । কাঠ ও গরু পাচারে জড়িয়েছে তার নাম । অল্পদিনেই তৎকালীন শাসকদল সিপিএমের স্থানীয় বিধায়ক অনন্ত রায়ের অত্যন্ত আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন তিনি । যদিও শাহজাহানকে কোনো পদ দেয়নি সিপিএম । কিন্তু ২০১১ সালে রাজ্যে সিপিএমের পরাজয়ের পর বিপাকে পড়তে হয় তাকে । এরপর ২০১৬ সালে মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির স্নেহভাজন ‘বালু’র হাত ধরে তৃণমূলে নাম লেখান শাহজাহান । এলাকায় তার এতটাই দাপট ছিল যে ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনে বসিরহাট আসনে তৃণমূল প্রার্থী নুসরত জাহানকে তিনি একক কৃতিত্বে জিতিয়ে নিয়ে আসেন বলে দাবি করা হয় । এই কৃতিত্বের জন্য তৃণমূল তাকে পুরষ্কার স্বরূপ সন্দেশখালি ১-ব্লকের সভাপতি করে । পরে তিনি উত্তর ২৪ পরগণা জেলা পরিষদের মত্স্য কর্মাধ্যক্ষ হন ।
২০২৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় কমিশনকে জমা দেওয়া শেখ শাহজাহানের হলফনামায় তার সম্পত্তির খতিয়ান দেখে অনেকেরই চোখ কপালে উঠে গেছে । হলফনামা অনুযায়ী নিজেকে ‘ব্যবসায়ী’ বলে পরিচয় দেওয়া শাহজাহান শেখের বাত্সরিক আয় ১৯ লক্ষ ৮৩ হাজার ৮৩২ টাকা । ব্যাঙ্কে রয়েছে ১ কোটি ৯২ লক্ষ ১২ হাজার টাকা । ৪ কোটি টাকা মূল্যের ৪৩ বিঘা জমি,২ কোটি ৩৯ লক্ষ টাকার সোনার গহনা, ১ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা মূল্যের প্রাসাদপম বাড়ি এবং ১৭টি গাড়ি রয়েছে তার । একজন বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী এত বিপুল পরিমান সম্পত্তির মালিক কিভাবে হল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে । স্বভাবতই জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের ঘনিষ্ঠ নেতা শাহজাহান শেখের সম্পত্তির দিকে নজর পড়েছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের ।।