এইদিন ওয়েবডেস্ক,কোলাঘাট,১৭ মার্চ : পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কোলাঘাট থানা এলাকায় এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা সামনে এসেছে ৷ এক গৃহবধূকে পনবন্দি করে লাগাতার ধর্ষণ এবং শাঁখা-পলা খুলিয়ে সিঁদূর মুছে দিয়ে ধর্মান্তরিত করার অভিযোগ উঠেছে শেখ সমীর নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে । বুধবার(১৫ মার্চ ২০২৩) বিজেপি নেতা তথা “সিংহবাহিনী” নামে স্থানীয় একটি সংগঠনের সভাপতি দেবদত্ত মাঝি নির্যাতিতা মহিলার সাক্ষাৎকারের ভিডিও ও কয়েকটি ছবি পোস্ট করে টুইট করেছেন,’শেখ সমীর অর্পিতাকে ব্ল্যাকমেইল করে, তাকে অপহরণ করে, তাকে কয়েক সপ্তাহ ধরে ধর্ষণ করে, তাকে গরুর মাংস খাওয়ায়, তাকে ইসলামে ধর্মান্তরিত করে, তাকে এবং তার পরিবারকে হত্যার হুমকি দেয়। সিংহবাহিনী টিম তাকে উদ্ধার করে এবং তাকে সুরক্ষা দেয় ।পুলিশের সহায়তায় ধর্ষক শেখ সমীর স্বাধীনভাবে ঘোরাফেরা করছে। এটি পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুরের ঘটনা ।’
তিনি আরও লিখেছেন,’নির্যাতিতা অর্পিতার পরিবার এবং বন্ধুদের কোলাঘাট পুলিশ দ্বারা হয়রানি করা হচ্ছে এবং ধর্ষক ও জেহাদি শেখ সমীরের দ্বারা হুমকি দেওয়া হচ্ছে । সূত্র অনুসারে এসকে সমীর একজন সক্রিয় টিএমসি সদস্য ।’
জানা গেছে,কোলাঘাটের বাসিন্দা পেশায় মার্বেল ঠিকাদার সুবীর দাসের স্ত্রী অর্পিতা দাস । তাঁদের ৭ বছরের একটি পুত্র সন্তান রয়েছে । অন্যদিকে অভিযুক্ত শেখ সমীর গৃহবধূর স্বামীর অধীনে শ্রমিকের কাজ করত । ক্যামেরার সামনে ভুক্তভোগী বধূ অর্পিতা দাস সিংহবাহিনীর সভাপতি দেবদত্ত মাজিকে বলেছেন,’আমাকে আমার স্বামীর কাজের সাইটে যেতে হত । সেই সূযোগে আমার অজান্তেই আমার কিছু ছবি নিজের মোবাইল ক্যামেরায় তুলে রেখেছিল শেখ সমীর । সেই সমস্ত ছবি দেখিয়ে সে আমায় ব্লাকমেল করতে শুরু করে । তারপর একদিন আমাকে সে ডেকে পাঠায় । একটি পরিত্যক্ত জায়গায় নিয়ে গিয়ে সে আমাকে ধর্ষণ করে ।’ নির্যাতিতার অভিযোগ, একটি ঘরে আটকে রেখে তাকে লাগাতার ধর্ষণ করে গেছে শেখ সমীর । তাকে শাঁখা-পলা খুলিয়ে,সিঁদূর মুছে জোর করে ধর্মান্তরিত করা হয় । গরুর মাংস খেতে বাধ্য করা হয় । শেখ সমীর তাকে একটা কোরান হাতে দিয়ে তা পড়তে বাধ্য করে ।
তাঁর অভিযোগ,’সমীর আমাকে হুমকি দিত যে যদি আমি পালিয়ে যাই তাহলে আমাকে সে টুকরো টুকরো করে কেটে ফেলবে। আমার পরিবারকে মেরে ফেলবে । সেই ভয়ে আমি পালাতে পারিনি । এমনকি সে আমাকে মুম্বাইয়ে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে দেওয়ারও পরিকল্পনা করেছিল ।’
নির্যাতিতা মহিলা জানান,একদিন সমীরে খপ্পর থেকে কোনো রকমে বেড়িয়ে এসে স্বামীকে ফোন করে তাঁকে বাঁচানোর জন্য কাতর আকুতি জানান তিনি । এরপর “সিংহবাহিনী” নামে ওই সংগঠনটি তাঁকে শেখ সমীরের খপ্পর থেকে উদ্ধার করে ।
নির্যাতিতা মহিলার অভিযোগ,অভিযোগ জানানো সত্ত্বেও কোলাঘাট থাকার পুলিশ শেখ সমীরকে গ্রেফতারের কোনো আগ্রহই দেখাচ্ছে না ।’
ওই ‘লাভ জিহাদি’কে পুলিশ প্রশ্রয় দিচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন বিজেপি নেতা দেবদত্ত মাঝি । ভিডিওতে তাঁকে বলতে শোনা গেছে,’পুলিশের কাছে অভিযোগ জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি । বরঞ্চ আমাদের সংগঠনের সাহসী কর্মীরা জীবন হাতে নিয়ে ওই মহিলাকে উদ্ধার করেছেন । এখানো আমরা জীবন হাতে নিয়ে মহিলা ও তার পরিবারকে বাঁচিয়ে যাচ্ছি । পুলিশ আর ওই জিহাদি আমাদের এবং নির্যাতিতা মহিলার বিরুদ্ধে । মহিলাকে ধর্ষণ করা হয়েছে অথচ এখনো পর্যন্ত ধর্ষক গ্রেফতার হয়নি । মহিলাকে গরুর মাংস খেতে বাধ্য করা হয়েছে, জোর করে ধর্মান্তরিত করা হয়েছে, অথচ এখনো অভিযুক্ত গ্রেফতার হল না । উলটে মহিলার পরিবারের উপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে মহিলাকে তাদের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য । মহিলার স্বামী ও দেবরকে গ্রেফতারের হুমকিও দেওয়া হচ্ছে । আমাদের সংগঠনের কয়েকজন কর্মীকে গ্রেফতার করেছে কোলাঘাট পুলিশ ।’ তিনি বলেন, ‘থানায় অভিযোগ জানানোর পরেও পুলিশ মহিলাকে উদ্ধার করেনি । সেই কারনে আইন বহির্ভূতভাবে আমরা মহিলাকে উদ্ধার করতে বাধ্য হয়েছি । মহিলাকে উদ্ধার করে আমরা কি কোনো অন্যায় করেছি ?’
এদিকে জানা গেছে,লাগাতার হুমকির জেরে নির্যাতিতা মহিলা ও তার পরিবারকে বর্তমানে পূর্ব মেদিনীপুর থেকে দূরে কোনো এক গ্রামে নিরাপদ আশ্রয়ে রেখে দিয়েছে ‘সিংহবাহিনী’ নামে ওই সংগঠনটি । যদিও এই অভিযোগ প্রসঙ্গে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পুলিশের কোনো বিবৃতি পাওয়া যায়নি ।।
ছবি : বিজেপি নেতা তথা “সিংহবাহিনী” নামে স্থানীয় একটি সংগঠনের সভাপতি দেবদত্ত মাঝির টুইটার হ্যান্ডেল থেকে নেওয়া ।