দিব্যেন্দু রায়,ভাতার(পূর্ব বর্ধমান),১৭ জানুয়ারী : ব্যাঙ্কে কয়েক লক্ষ টাকা দেনা । পরিশোধের জন্য লাগাতার তাগাদা আসছে ব্যাঙ্ক থেকে । তাই ওই দেনা থেকে পরিত্রাণ পেতে একটি ফন্দি বের করে ফেলেন পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাতার থানার ধরমপুর গ্রামের বাসিন্দা সোনারূপোর গহনা ব্যবসায়ী শেখ রহুল আমিন । দোকানের বীমার টাকায় ব্যাঙ্ক ঋণের ফাঁস থেকে যাতে মুক্তি পাওয়া যায় তাই নিজের দোকানেই চুরি করার পরিকল্পনা করে ফেলেন ওই ব্যবসায়ী । আর পরিকল্পনা মোতাবেক নিজের দোকানের শাটারের তালা কেটে লকার ভেঙে নগদ ২ লক্ষ টাকা সহ প্রায় ২২ লক্ষ টাকার সামগ্রী সরিয়ে ফেলেন তিনি । তারপর রটিয়ে দেন রাতের অন্ধকারে দুষ্কৃতীরা দোকানের শাটার ভেঙে সর্বস্ব নিয়ে পালিয়ে গেছে ।
খবর যায় ভাতার থানায় । খবর পেয়েই ভাতার থানার ওসি অরুন কুমার সোম ঘটনাস্থলে পাঠান মোল্লা জামালউদ্দিন নামে এক এসআই সহ পুলিশবাহিনীকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই অরুনবাবু নিজেও চলে যান ঘটনাস্থলে । এদিকে এই দুঃসাহসিক চুরির ঘটনার খবর শুনে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন পূর্ব বর্ধমান জেলার ডিএসপি(ক্রাইম) শাশ্বতী শ্বেতা সামন্ত । এই ডাকাতির রহস্যভেদ করতে প্রায় দিনভর তাঁরা ধরমপুর গ্রামেই থেকে যান । দফায় দফায় দোকান মালিককে জিজ্ঞাসাবাদ করে অবশেষে এই ডাকাতির রহস্যভেদ করে ফেলে পুলিশ । পুলিশের জেরায় দোকান মালিক কবুল করেন ব্যাঙ্ক ঋণ থেকে রেহাই পেতেই তিনি এই পরিকল্পনা ফেঁদেছিলেন । পুলিশ ওই ব্যবসায়ীর বাড়ির আলমারিতে তল্লাশি চালিয়ে নগদ দুই লক্ষ টাকা উদ্ধার করে বলে জানা গেছে ।
কিন্তু কিভাবে রহস্যভেদ করল পুলিশ ? পুলিশ সূত্রে খবর, সোমবার চুরির খবর পেয়ে যখন ধরমপুর বাসস্ট্যান্ডে ওই ব্যবসায়ীর দোকানে পুলিশ যায় তখন তাঁদের নজরে পড়ে সার্টারের তালাগুলি কাটা হয়েছে । দোকানের ভিতরে দুটি সিন্ধুকের মধ্যে সবচেয়ে মজবুত সিন্ধুকটি ভাঙা হলেও অন্যটি অক্ষত অবস্থায় রয়েছে । এটা দেখেই সন্দেহ ঘনীভূত হয় তদন্তকারী আধিকারিকের মনে । পুলিশ তখন ব্যবসায়ীর মোবাইলটি দেখতে চায় । কিন্তু শেখ রহুল আমিন জানান,তাঁর ফোনটি অকেজো হয়ে যাওয়ায় সেটি বর্ধমানে মেরামতি করতে দিয়েছেন । কিন্তু পুলিশ জানতে পারে ব্যবসায়ীর মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন ধরমপুর দেখাচ্ছে । তখন এনিয়ে পুলিশ তাকে চেপে ধরতেই বাড়ির একটি পুরানো ড্রাম থেকে নিজের মোবাইলটি বের করে পুলিশের হাতে তুলে দেন ওই ব্যবসায়ী । শেষে সোমবার বিকেল নাগাদ চুরির রহস্যভেদ করতে সক্ষম হয় পুলিশ ।
জানা গেছে,ওই সন্ধ্যা নাগাদ ব্যবসায়ীকে ভাতার থানায় এনে জেরা করে পুলিশ । তখন নিজের পরিকল্পনা কথা সব পুলিশের কাছে খুলে বলেন তিনি । ব্যবসায়ী পুলিশকে জানায়, ব্যাঙ্কে ১৫ লক্ষ টাকা ঋণ রয়েছে তার । টাকা পরিশোধের জন্য ব্যাঙ্ক থেকে খুব তাগাদা করছিল । সেই কারনে দোকানের বীমার টাকা পেতেই তিনি এই মতলব ফেঁদেছিলেন ।
জানা গেছে, ক্ষমা চাওয়ার পর দোকান মালিককে আপাতত ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ । তবে ভাতার থানার ওসি অরুন কুমার সোম জানিয়েছেন পুলিশকে ভুল তথ্য দেওয়ার জন্য ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে একটি মামলা রজু করা হবে ।।