এইদিন ওয়েবডেস্ক,নয়াদিল্লি,০৬ আগস্ট : বাংলাদেশে হিংসাত্মক বিক্ষোভের পর শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে সোমবার দেশ ছেড়ে পালাতে হয়। সেনার হেলিকপ্টারে শেখ হাসিনা প্রথম ভারতে আসেন। তার বিমান হিন্দন এয়ারবেসে অবতরণ করে। ভারতের এনএসএ অজিত ডোভাল তার সঙ্গে দেখা করেন। উল্লেখ্য, শেখ হাসিনা ভারতে থাকবেন নাকি অন্য কোনো দেশে আশ্রয় নেবেন তা এখনও স্পষ্ট নয় । তবে খবর যে ব্রিটেন রাজনৈতিক আশ্রয় না দেওয়া পর্যন্ত শেখ হাসিনা ভারতেই থাকবেন। ব্রিটেনের পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং ইউরোপীয় দেশগুলিতে শেখ হাসিনার নিরাপদ আশ্রয়ের বিষয়টি বিবেচনাধীন রয়েছে বলে কেন্দ্রী সরকারের সূত্রের খবর । এদিকে বাংলাদেশের ২৪ লাইভ নিউজপেপার দাবি করেছে যে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়তে চাচ্ছিলেন না শেখ হাসিনা ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,দেশজুড়ে এক মাসের বেশি সময় ধরে চলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপ হতে থাকে। গত শনিবার-রোববার এটি আরও খারাপের দিকে মোড় নেয়। এর ধারাবাহিকতায় সোমবার দুপুরে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। তবে জানা গেছে, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়তে চাচ্ছিলেন না। তবে অনেক বোঝানোর পর সোমবার দুপুরে তিনি পদত্যাগ করতে রাজি হন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ছাত্র আন্দোলনের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় তিনি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে দলীয় অস্ত্রধারী কর্মীদেরও নামিয়ে দেন। তবে তাতে তেমন একটা কাজ হয়নি। বরং শনিবার ও রোববার সরকারদলীয় বিভিন্ন এমপি-মন্ত্রীর বাসায় ও কার্যালয়ে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, থানায় হামলার ঘটনায় অনেকেই বুঝতে পারেন, সামনের দিনে অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে।
এ অবস্থায় রোববার রাত থেকেই শেখ হাসিনাকে পরিস্থিতি বোঝানোর চেষ্টা করেন তার একজন উপদেষ্টাসহ কয়েকজন নেতা। তারা সেনাবাহিনীর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের মাধ্যমে পদত্যাগের পরামর্শ দেন। কিন্তু তিনি সেদিকে কর্ণপাত না করে বরং সোমবার থেকে কারফিউ আরও কড়াকড়ি করার নির্দেশ দেন। সেই মতে সকাল থেকেই কারফিউ কড়াকড়ি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু সকাল ৯টার পর থেকে বিভিন্ন স্থানে কারফিউ ভেঙে আন্দোলনকারীরা নামতে শুরু করেন। ধীরে ধীরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে গণভবনে ডাকা হয় তিন বাহিনীর প্রধান ও পুলিশের মহাপরিদর্শককে (আইজিপি)। এ সময় শেখ হাসিনা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নিরাপত্তা বাহিনী কেন পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছে না। এ সময় তিনি তাদের মনে করিয়ে দেন, অনেক বিশ্বাস করে তিনি এই কর্মকর্তাদের শীর্ষ পদে বসিয়েছেন।
বক্তব্যের এক পর্যায়ে শেখ হাসিনা আইজিপিকে দেখিয়ে বলেন, তারা (পুলিশ) তো ভালো করছে, আপনারা কেন ব্যর্থ হচ্ছেন। তখন আইজিপি বলেন, পরিস্থিতি যে পর্যায়ে চলে গেছে, তাতে পুলিশের পক্ষেও আর বেশি সময় এ রকম অবস্থান ধরে রাখা সম্ভব নয়। সবাই তখন শেখ হাসিনাকে বোঝানোর চেষ্টা করেন, বলপ্রয়োগ করে এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে না। কিন্তু শেখ হাসিনা কিছুতেই সেটা মানতে রাজি হচ্ছিলেন না। তখন উপস্থিত কর্মকর্তারা ভিন্নভাবে শেখ রেহানার সঙ্গে আলোচনা করে শেখ হাসিনাকে বোঝাতে অনুরোধ করেন। তবে শেখ রেহানার বোঝানোতেও কাজ হয়নি। শেখ হাসিনা তার সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন। একপর্যায়ে উপস্থিত একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বিদেশে থাকা সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। তখন জয় কথা বলে তা মা শেখ হাসিনাকে শেখ হাসিনা পদত্যাগে রাজি করান।
তখন শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশে প্রচারের জন্য একটি ভাষণ রেকর্ড করতে চান। তবে সে সময় জানা যায়, বিপুলসংখ্যক ছাত্র-জনতা শাহবাগ ও উত্তরা থেকে গণভবন অভিমুখে রওনা হয়েছে। এক ঘণ্টার কম সময়ের মধ্যে তারা গণভবনে পৌঁছে যেতে পারে। এ অবস্থায় ভাষণ রেকর্ড করতে গেলে শেখ হাসিনার জন্য গণভবন ত্যাগ করা কঠিন হয়ে যেতে পারে। ফলে ভাষণ রেকর্ড করার সময় না দিয়ে বরং তাকে দ্রুত গণভবন ত্যাগ করতে প্রস্তুত হতে বলা হয়।
প্রতিবেদন অনুযায়ী,,পরে শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে তেজগাঁওয়ের পুরোনো বিমানবন্দরে হেলিপ্যাডে যান শেখ হাসিনা। সেখান থেকে তারা যান বঙ্গভবনে। সেখানে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে পদত্যাগের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে বেলা আড়াইটায় সামরিক হেলিকপ্টারে করে ছোট বোনসহ ভারতের উদ্দেশে যাত্রা করেন শেখ হাসিনা। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই বিক্ষোভরত জনতা গণভবনে ঢুকে পড়ে। প্রসঙ্গত,আওয়ামী লীগের সভাপতি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা টানা চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন চলতি বছরের ১১ জানুয়ারি। এর মাত্র সাত মাসের মাথায় পদত্যাগ করে দেশ ছাড়তে বাধ্য হলেন তিনি।।