প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২৯ জুন : বালি খাদানের রাস্তায় টোল আদায়ের সংস্থা নির্বাচনের জন্যে জোর দিতে হবে ই-টেন্ডার করানোর উপর।বুধবার দুর্গাপুরে অনুষ্ঠিত প্রশাসনিক সভা থেকে গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তাদের এই পরামর্শ দিলেন মুখমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । এই ব্যাপারের তিনি পূর্ব বর্ধমানের খণ্ডঘোষের ’শশঙ্গা গ্রাম পঞ্চায়েতকে’ মডেল করারও নিদান দেন।মুখ্যমন্ত্রীর মুখ থেকে এমন প্রশংসার কথাশুনে আপ্লুত খণ্ডঘোষের তৃণমূল নেতৃত্ব ও শশঙ্গা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ।
বালি খাদানের রাস্তায় টোল আদায়ের সংস্থা নির্বাচন নিয়ে কথা বলতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী এদিন আরো বলেন,“স্থানীয় ভাবে টেন্ডার ডাকলে অনেক ক্ষেত্রেই বোঝাপড়া হয়ে যায়। তখন বাইরের কেউ আর আসতে চায় না। এটাকে ভাঙতে হবে।এই ব্যাপারে সরকারকেও একটা নীতি তৈরি করতে হবে।এর পরেই মুখ্যমন্ত্রী বলেন,বালি খাদানের রাস্তায় টোল ট্যাক্স আদায়ের সংস্থা নির্বাচনের জন্য ই-টেন্ডার বাধ্যতামূলক করে তা কেন্দ্রীয় ভাবে অর্থাৎ জেলাগত ভাবে পরিচালনা করলে সরকারের আয় অনেক বাড়তে পারে। এই ব্যাপাকে খণ্ডঘোষের শশঙ্গা পঞ্চায়েতকে উদাহরণ হিসাবে তুলে ধরে মুখ্যমন্ত্রী শশঙ্গা পঞ্চায়েতকে ’মডেল’ হিসাবে ধরারও কথা বলেন” মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে প্রশংসা পেয়ে আপ্লুত শশঙ্গা পঞ্চায়েতের প্রধান সহ খণ্ডঘোষে তৃণমূল নেতৃত্ব ।
শশঙ্গা গ্রাম পঞ্চায়েতকে কেন ‘মডেল’ হিসাবে ধরতে বলছেন সেই বিষয়টিও এদিন প্রশাসনিক সভা থেকে পরিস্কার করেদেন মুখ্যমন্ত্রী ।তিনি জানান, দুই বর্ধমানেই অনেক বালি খাদান রয়েছে। বালিখাদান থেকে সরকারের আয় বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে।গ্রামের বিভিন্ন রাস্তা দিয়ে বালির লরি যায়। সেই রাস্তা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য পঞ্চায়েত সেখান থেকে টাকা নেয়।আগে ওভারলোডিং বালির লরি যাতায়াতের ব্যাপারে বিশেষ নজরদারি থাকতো না । এখন ওভারলোডিং বন্ধে নজদারি বেড়েছে। আগে একটি লরিতে যে পরিমাণ বালি যেত সেটা এখন তিনটে লরিতে যায়। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “খণ্ডঘোষ ব্লকের শশঙ্গা নামের একটি গ্রাম পঞ্চায়েত রয়েছে। তারা অনেক বছর ধরে বালির গাড়ি থেকে টোল ট্যাক্স নেয়।পূর্বে ৪-৫ বছর তারা বছরে ৫০-৫৪ লক্ষ টাকা পাচ্ছিল। টোল আদায়কারী সংস্থা নির্বাচনের জন্য গত ২১ ডিসেম্বর তারা ই-টেন্ডার করে। আর তাতেই এক বছরে জন্য তারা পেয়েছে ১ কোটি ৯৯ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। এতে তাদের আয় চারগুণ বেড়েছে।
প্রশাসনিক সভায় উপস্থিত প্রশাসনিক কর্তাদের মুখ্যমন্ত্রী পরামর্শ দেন,’একই পথে কেন্দ্রীয় ভাবে অর্থাৎ জেলাগত ভাবে বালির লরির জন্যে ই-টেন্ডার বাধ্যতা মূলক করা গেলে সরকারের আয় অনেকাংশে বাড়বে।আয়ের পঞ্চাশ শতাংশ টাকা পঞ্চায়েত ট্রেজারিতে পাঠাবে । আ বাকি টাকা দিয়ে পঞ্চায়েত গ্রামের উন্নয়নের কাজ করবে ।’
তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত শশঙ্গা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান প্রকাশ ঘোষ এদিন বলেন,’টোলের সব টাকাটা আমরা পেয়ে গিয়েছি। প্রশাসনিক সভায় মুখ্যমন্ত্রী আমাদের কর্ম পদ্ধতি নিয়ে প্রশংসা করায় আমরা অত্যন্ত খুশি ।মুখ্যমন্ত্রী আমাদের পঞ্চায়েতকে ’মডেল’ করতে বলেছেন ।এর জন্যে আমরা গর্ব বোধ করছি।খণ্ডঘোষের বিডিও সত্যজিৎ কুমারের বলেন, “ই-টেন্ডার ডাকলে প্রচুর টাকা আয় হবে বলে আমরা শশঙ্গা পঞ্চায়েতকে বলেছিলাম ।সেই মতে শশঙ্গা পঞ্চায়েত ব্লকের সাহায্য নিয়ে ই-টেন্ডার ডেকে আয় বাড়াতে সক্ষম হয়েছে“।খণ্ডঘোষের জেলাপরিষদ সদস্য অপার্থিব ইসলাম বলেন ,একই পথে ব্লকের লোদনা গ্রাম পঞ্চায়েত হাঁটলে তারাও আয় অনেই বেশী বাড়াতে পারতো ।কারণ তাদের পঞ্চায়েত এলাকা দিয়েও প্রচুর বালির গাড়ি যাতায়াত করে । অথচ তারা ই-টেন্ডার না ডেকে ৫০ টাকার স্ট্যাম্প পেপারে একটি টোল আদায়কারী সংস্থার সঙ্গে চুক্তিপত্র করে।মাত্র ১৫ লক্ষ ৫ হাজার টাকায় ওই সংস্থাকে তাদের এলাকা দিয়ে চলাচল করা বালির গাড়ি থেকে টোল আদায়ের ছাড়পত্র দিয়ে দেয়।এমনটা না করে ই- টেন্ডার করে আয় বাড়ানোর পথে হাঁটলে লোদনা গ্রাম পঞ্চায়েতও শশঙ্গা গ্রাম পঞ্চায়েতের মতো মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে প্রশংসা কুড়োতে পারতো ।’
জেলাশাসক প্রিয়াঙ্কা সিংলা বলেন,’জেলার কোন কোন রাস্তায় ই-টেন্ডার করে টোল আদায়ের সংস্থা নির্বাচন করা যায় তার ব্যাপারে জেলার প্রতিটি পঞ্চায়েতকে নির্দেশ দেওয়া হবে ।’।