এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,০১ জুন : ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্যের অভিযোগে সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার শর্মিষ্ঠা পানোলিকে হরিয়ানার গুরুগ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করে এনেছে কলকাতা পুলিশ । প্রায় ১৫০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে মাত্র ১৯ বছরের ওই তরুনীকে গ্রেপ্তারে কলকাতা পুলিশের অতি সক্রিয়তা এবং গ্রেপ্তারের ধরন নিয়ে উঠছে একাধিক প্রশ্ন । এদিকে শ্রীরাম স্বাভিমান পরিষদের সম্পাদক সুরোজ কুমার সিং দাবি করেছেন যে পাকিস্তানের করাচি ভিত্তিক ‘স্কাই ফাউন্ডেশন’ নামে একটা সংগঠনের তরফে দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে শর্মিষ্ঠাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে দাবি করে তোলপাড় ফেলে দিয়েছেন । তিনি ওই সংগঠনকে তদন্তের আওতায় আনার দাবিও জানিয়েছেন ।
সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যম আইএএনএস-কে দেওয়া একটা সাক্ষাৎকারে সুরোজ কুমার সিং বলেছেন,’সবাই জানেন যে শর্মিষ্ঠা একটা বয়ান দিয়েছিল যা নিয়ে অনেক বিতর্ক হয় । তার জন্য সে নিশর্ত ক্ষমাও চেয়েছিল । তারপরেও ‘স্কাই ফাউন্ডেশন’ নামে একটা সংগঠন, যার অফিস পাকিস্তানের করাচিতে,ওই সংগঠনের কিছু লোক গার্ডেনরিচ থানায় একটা এফআইআর রজু করে । মেয়েটিকে গ্রেফতারের দাবী করে । শুধু গ্রেপ্তারের দাবি নয়,শর্মিষ্ঠাকে প্রাণে মারার হুমকি পর্যন্ত দেওয়া হয় । ওরা হুমকি দিয়ে বলেছিল যে পুলিশ যদি কোন পদক্ষেপ না নেয় তাহলে আমরা পদক্ষেপ নেব । ‘সর তন সে জুদা’র স্লোগানও তোলা হয়েছিল । তারপর পুলিশ গেল এবং শর্মিষ্ঠাকে তুলে নিয়ে চলে এলো ।’
তিনি দাবি করেন, যে সংগঠন শর্মিষ্ঠার বিরুদ্ধে মামলা করেছে তার তদন্ত হোক । আমি আবেদন করছি যে এই সংগঠনের অডিট হোক, পুলিশ ওই সংগঠনের উপর নজর রাখুক, আর এই সংগঠনের বিরুদ্ধে তথ্য সংগ্রহ করা হোক । কারণ সংগঠনটির অফিস হল করাচিতে । আর পাকিস্তানের করাচি একটা রেজিস্টার্ড সংগঠনের কোন প্রতিনিধি এখানে এসব কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে ? এটা আমাদের জানতে হবে ।’
তিনি বলেন,’আমরা যখন আলিপুর কোর্টে এসেছি তখন কিছু লোককে উল্লাস প্রকাশ করতে দেখেছি শর্মিষ্ঠাকে গ্রেপ্তার করার জন্য ।’ সেই ভিডিও তিনি নিজের মোবাইল ক্যামেরায় দেখিয়ে বলেন,’যে স্কাই ফাউন্ডেশন অভিযোগ করেছিল তাদের লোকেরা আদালত চত্বরে ধর্মীয় স্লোগান দিচ্ছে। মেয়েটির গ্রেফতারিতে তারা উল্লাস প্রকাশ করছে । অন্যদিকে এই ধরনের অনেক ঘটনা আমাদের ভারতে ঘটে যেখানে আমাদের ভগবানকে বারবার ভুল ভাবে উপস্থাপিত করা হয় । দেশের বিরুদ্ধে কথা বলা হয় ।’ তিনি বলেন,’পশ্চিমবঙ্গ একটা মুক্তাঞ্চল হয়ে গেছে । যে সমস্ত লোক হিন্দুদের গালি দেয় তাদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয় না । এখানকার মেয়র বলে, যারা ইসলামে জন্মগ্রহণ করেনি তারা দুর্ভাগা । এখানকার মন্ত্রী হুমায়ুন কবির বলে যে আমরা এখানে ৭০ শতাংশ, হিন্দুদের ভাগীরথীতে ভাসিয়ে দেবো । এখানকার সিদ্দিকুল্লা বলে যে আমরা যেকোনো থানা এবং কলকাতাকে বন্ধ করে দিতে পারি। আর ওরা এসব করেও দেখিয়েছে ।’
এদিকে শর্মিষ্ঠা পানোলিকে গ্রেপ্তারি নিয়ে একাধিক প্রশ্ন উঠছে । শনিবার কলকাতা পুলিশের এক্স হ্যান্ডেলে একটা সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের জন্য । তাতে লেখা হয়েছে,গার্ডেন রিচ পুলিশ স্টেশনের মামলা নং ১৩৬ তারিখের ১৫.০৫.২০২৫ তারিখের প্রসঙ্গে, একজন আইন ছাত্রীকে বেআইনিভাবে গ্রেপ্তারের ইঙ্গিত দেওয়া কিছু সোশ্যাল মিডিয়ার বর্ণনা বাস্তবিকভাবে ভুল এবং বিভ্রান্তিকর। সমস্ত আইনি প্রক্রিয়া যথাযথভাবে অনুসরণ করা হয়েছিল। নোটিশ দেওয়ার জন্য সমস্ত প্রচেষ্টা করা হয়েছিল, কিন্তু প্রতিবারই তাকে পলাতক পাওয়া গিয়েছিল। ফলস্বরূপ, উপযুক্ত আদালত কর্তৃক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছিল, যার পরে তাকে গুরগাঁও থেকে আইনত গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। এরপর তাকে উপযুক্ত ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে হাজির করা হয়েছিল এবং আইনের যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসারে ট্রানজিট রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছিল। আমরা সংশ্লিষ্ট সকলকে যাচাই না করা বা অনুমানমূলক বিষয়বস্তু ছড়ানো থেকে বিরত থাকার এবং তথ্যের জন্য খাঁটি উৎসের উপর নির্ভর করার জন্য অনুরোধ করছি ।’
যদিও কলকাতা পুলিশের এই বিষয়ে অতিসক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন নেটিজেনরা । সুনয়না হোলে (@SunainaHoley) কলকাতা পুলিশকে ট্যাগ করে লিখেছেন,’স্যার/ম্যাডাম, শর্মিষ্ঠা তার বাবার সাথে ১৪ এবং ১৬ মে আপনার সাহায্য চাইতে থানায় গিয়েছিলেন কারণ তাকে এবং তার পরিবারকে হত্যা এবং ধর্ষণের হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। আপনি কেন তাকে সাহায্য করেননি? কলকাতায় এই ধরনের হুমকির জন্য কোন আইন নেই কেন? তার জীবন কেন আপনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল না? জীবন বাঁচানোর জন্য কী করা উচিত? যে বাড়ির ঠিকানা ফাঁস, ফোন নম্বর জনসমক্ষে ফাঁস..তাই শহর ছেড়ে যেখানে তারা নিরাপদ বোধ করে সেখানে বাস করছিল। হাজার হাজার মানুষ সেই তরুণীর শিরশ্ছেদ কামনা করছে । একজন বাবার কী করা উচিত ? একজন মেয়ের বাবা হিসেবে দয়া করে আমাকে উত্তর দিন। যাইহোক, মনে হচ্ছে এই সব আপনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়.. আমাকে এই উত্তর দিন ১৫ তারিখে এফআইআর দায়ের করা হয়েছিল। ১৬ তারিখে যখন সে আপনার সাহায্য চাইতে থানায় গিয়েছিল তখন কেন নোটিশ দেওয়া হয়নি?’
হিন্দুত্ব নাইট (@HPhobiaWatch) লিখেছেন,’কোন ধরণের আইনগত প্রক্রিয়ায় একজন ১৯ বছর বয়সী মেয়েকে মধ্যরাতে বিমানে উঠতে বাধ্য করা হয়? কেন পুলিশ সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারে না? তার সাথে কি কোনও মহিলা অফিসার ছিলেন? আইন স্পষ্টভাবে ব্যতিক্রমী ঘটনা ছাড়া রাতের বেলায় মহিলাদের গ্রেপ্তার নিষিদ্ধ করে। স্পষ্টতই তিনি খুনি বা সন্ত্রাসী ছিলেন না যে এই অপরাধকে ‘ব্যতিক্রমী ঘটনা’ হিসেবে চিহ্নিত করা হবে। আপনি কি ভারতীয় আইন প্রক্রিয়া নাকি শরিয়া প্রক্রিয়া অনুসরণ করছিলেন?’
লোকেশ চাহার লিখেছেন,’কোন ধরণের আইনগত প্রক্রিয়ায় একজন ১৯ বছর বয়সী মেয়েকে মধ্যরাতে বিমানে উঠতে বাধ্য করা হয়? কেন পুলিশ সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারে না? তার সাথে কি কোনও মহিলা অফিসার ছিলেন? আইন স্পষ্টভাবে ব্যতিক্রমী ঘটনা ছাড়া রাতের বেলায় মহিলাদের গ্রেপ্তার নিষিদ্ধ করে। স্পষ্টতই তিনি খুনি বা সন্ত্রাসী ছিলেন না যে এই অপরাধকে ‘ব্যতিক্রমী ঘটনা’ হিসেবে চিহ্নিত করা হবে। আপনি কি ভারতীয় আইন প্রক্রিয়া নাকি শরিয়া প্রক্রিয়া অনুসরণ করছিলেন?’
শ্রীবন্দনা লিখেছেন,’এখানে শেষ মুহূর্তে একজন মহিলাকে গ্রেপ্তার করার ব্যতিক্রমী ঘটনা কী? সবসময়ের মতো সাধারণ বক্তব্য দিয়ে ভুল করবেন না। ডাক্তারের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে।’
জিতেন্দ্র প্রতাপ সিং কলকাতা পুলিশের এই পোস্টকে ট্যাগ করে লিখেছেন,’শত শত অভিযোগের পরেও তোমরা শাহজাহান শেখকে গ্রেপ্তার করোনি, যে খুন, ধর্ষণ, দাঙ্গা এবং অগ্নিসংযোগের মতো একাধিক অপরাধ করেছে। তারপর যখন হাইকোর্টের নির্দেশে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, তখন তোমরা দেখেছিলে কিভাবে সে গর্বের সাথে হাঁটছিল যেন সে নিশ্চিত যে বাংলা পুলিশ তার কিছুই করতে পারবে না। এরপর, যখন আদালত তাকে সিবিআইয়ের কাছে হেফাজত দেয়, দেখুন কিভাবে সে কাঁদতে শুরু করে।’
এদিকে এফ আই আরের কপিটিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে । তাতে তদন্তকারী আধিকারিক ও ইনস্পেকটরের পরিচয় নিয়েও কেউ কেউ ভিন্ন দৃষ্টিকোন থেকে বিষয়টি দেখছেন। মোটের পর উপর, এমনিতেই “বদনাম” রাজ্য পুলিশ শর্মিষ্ঠা পানোলিকে ইসলাম ধর্মনিন্দার অভিযোগে গ্রেপ্তারে অতিসক্রিয়তা দেখিয়ে ফের দেশ জুড়ে নিন্দার পাত্র হয়ে গেছে ।।

