জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী, শিয়ালদহ, ০৩ সেপ্টেম্বর :কথায় আছে ‘যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে’ – প্রবাদ বাক্যটির যথার্থতা প্রমাণ করে দিলেন দমদমের বাগুইহাটির গোপা ভট্টাচার্য। স্বামী, পুত্র সহ সংসারের যাবতীয় কাজ একক হাতে সামলেও যে শুধু ব্যক্তিগতভাবে সাহিত্যচর্চা করা নয় তার সুফল সমষ্টির মধ্যেও ছড়িয়ে দেওয়া যায় তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রাখলেন তিনি। তারই হাত ধরে প্রচণ্ড গরমকে উপেক্ষা করে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবেশি অসম, উড়িষ্যা ও ঝাড়খণ্ড থেকে আগত প্রায় সত্তর জন কবি-সাহিত্যিকের উপস্থিতিতে দিনের আলোর মুখ দেখল বিশিষ্ট কবি-সাহিত্যিক গোপা ভট্টাচার্য সম্পাদিত আনন্দমেলা সাহিত্য পত্রিকা গোষ্ঠীর শারদ সংখ্যা। এটি দ্বিতীয় বছর। এছাড়াও অনুষ্ঠানে বেশ কয়েকটি একক কাব্যগ্রন্হ প্রকাশিত হয়।
আজ শনিবার (৩ সেপ্টেম্বর ২০২২) শিয়ালদহের কৃষ্ণচন্দ্র ঘোষ মেমোরিয়াল ট্রাস্ট ভবনে আয়োজিত বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট কবি-সাহিত্যিক সুশান্ত ঘোষ, দিলীপ রায়, দেবানন্দ মণ্ডল প্রমুখ। অনুষ্ঠানে প্রতিমা ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে রিয়া বসু, প্রজ্ঞানন্দ মুখোপাধ্যায়, শুভ্রা চট্টোপাধ্যায়, আনন্দ শিকারী প্রমুখরা উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশন করেন। উপস্থিত কবিরা পাঠ করেন স্বরচিত কবিতা। শুধু তাই নয় অনুষ্ঠানে একটি আবৃত্তি প্রতিযোগিতাও হয়। সেখানে প্রথম স্হান অধিকার করেন বিশিষ্ট আবৃত্তিকার সেঁজুতি বসু। সাহিত্য সংক্রান্ত আলোচনা, আবৃত্তি পাঠ, সঙ্গীত সব কিছু মিলে তিন ঘণ্টার এই অনুষ্ঠানের মূল সুর ছিল আন্তরিকতা। সমগ্র অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য।
এর আগে উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে গলায় উত্তরীয় পড়িয়ে ও হাতে মেমেণ্টো তুলে দিয়ে অতিথিদের বরণ করে নেওয়া হয়। প্রতিটি কবির হাতে তুলে দেওয়া হয় মেমেণ্টো, শংসা পত্র ও শারদ সংখ্যা। আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের হাতেও পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে আগত কবিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে আনন্দমেলা সাহিত্য পত্রিকা গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদিকা গোপা দেবী বললেন – প্রতি বছর অনেক শারদ সংখ্যা প্রকাশিত হয়। ভিড়ের মাঝে আমাদের পত্রিকা যাতে হারিয়ে না যায় তার জন্য সতর্ক থাকি। বেছে নিই ভিন্ন স্বাদের কবিতা। উৎসাহ দিই নতুন কবিদের। ভাল মন্দ বিচারের দায়িত্ব ছেড়ে দিই পাঠকের উপর।
প্রসঙ্গত জন্মসূত্রে অসমের মেয়ে গোপা দেবী স্বামীর কর্মসূত্রে আদ্যোপান্ত বাঙালি হয়ে উঠেছেন। দীর্ঘদিন ধরে সাহিত্যচর্চা করলেও স্বামীর উৎসাহে নিজেই একটি পত্রিকা গোষ্ঠী গড়ে তোলেন। তার মিষ্টি ও সরল ব্যবহারের জন্য পাশে পেয়ে যান একগুচ্ছ কবিকে। ইতিমধ্যে তার প্রায় দশটি একক কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে। এবছর কলকাতার আন্তর্জাতিক বইমেলায় তার লেখা অন্যতম বেস্ট সেলার মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাস ‘অন্তর্লীন’ পাঠক সমাজের কাছে সমাদৃত হয়েছে। তার মধ্যেই তারা খুঁজে পেয়েছে এক শক্তিশালী লেখিকাকে।।