এইদিন ওয়েবডেস্ক,নয়াদিল্লি,২৮ এপ্রিল : আজ সোমবার সুপ্রিম কোর্ট এক ঐতিহাসিক রায়ে স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, শরিয়া আদালত, কাজী আদালত, দারুল কাজা বা অনুরূপ কোনও প্রতিষ্ঠানের ভারতে কোনও আইনি স্বীকৃতি নেই। তাদের দেওয়া কোনও আদেশ বা সিদ্ধান্ত আইনত বলবৎ করা যাবে না। বিচারপতি সুধাংশু ধুলিয়া এবং বিচারপতি আহসানউদ্দিন আমানউল্লাহর বেঞ্চ এই রায় দিয়েছে।এই মামলায়, শাহজাহান নামে এক মহিলা এলাহাবাদ হাইকোর্টের সেই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন যেখানে পারিবারিক আদালতের আদেশ বহাল রাখা হয়েছিল। পারিবারিক আদালত শাহজাহানকে ভরণপোষণ দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল, কারণ কাজী আদালতের আপোষপত্রের ভিত্তিতে তারা বলেছিল যে, বৈবাহিক বিরোধের জন্য শাহজাহানই একমাত্র দায়ী।
প্রতিবেদন অনুসারে, মামলার শুনানিকালে, সুপ্রিম কোর্ট পারিবারিক আদালতের যুক্তি খারিজ করে দেয় এবং বলে যে কাজী আদালত বা শরিয়া আদালতের কোনও আইনি ভিত্তি নেই। বিচারপতি আহসানউদ্দিন আমানউল্লাহ তার রায়ে লিখেছেন,’কাজী আদালত, দারুল কাজা কাজিয়াত আদালত, শরিয়া আদালত ইত্যাদি, যে নামেই ডাকা হোক না কেন, তাদের কোনও আইনি স্বীকৃতি নেই। বিশ্ব লোচন মদন বনাম ভারত ইউনিয়ন (২০১৪) মামলায় যেমন বলা হয়েছে, এই ধরনের প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রদত্ত যেকোনো ঘোষণা বা রায় কারও জন্য বাধ্যতামূলক নয় এবং তা কার্যকর করা যাবে না। এই ধরনের ঘোষণা বা রায় কেবল তখনই আইনি তদন্তের মুখোমুখি হতে পারে যদি সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলি তা গ্রহণ করে এবং মেনে চলে, তবে শর্ত থাকে যে এটি অন্য কোনও আইনের সাথে সাংঘর্ষিক না হয়। তবুও, এই ধরনের ঘোষণা বা রায় কেবল সেই পক্ষগুলির মধ্যেই বাধ্যতামূলক হবে যারা এটি গ্রহণ করে, কোনও তৃতীয় পক্ষের জন্য নয়।’
এই বিষয়টি শাহজাহান এবং তার স্বামীর মধ্যে বিবাহ এবং বিবাহবিচ্ছেদের সাথে সম্পর্কিত। শেহজাহানের বিয়ে হয়েছিল ২০০২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর উত্তর প্রদেশের এক ব্যক্তির সাথে ইসলামিক রীতি অনুসারে। এটি ছিল তাদের দুজনেরই দ্বিতীয় বিয়ে। ২০০৫ সালে, স্বামী মধ্যপ্রদেশের ভোপালের কাজী আদালতে ‘বিবাহবিচ্ছেদ মামলা নম্বর ৩২৫’ দায়ের করেন, যা ২২ নভেম্বর ২০০৫ তারিখে পক্ষগুলির মধ্যে সম্পাদিত চুক্তির ভিত্তিতে খারিজ করে দেওয়া হয়। চুক্তিতে, উভয়েই একসাথে থাকার এবং একে অপরকে অভিযোগ করার সুযোগ না দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
২০০৮ সালে, স্বামী আবার দারুল কাজা কাজিয়াত আদালতে বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা দায়ের করেন। একই বছর, শাহজাহান ফৌজদারি কার্যবিধির ১২৫ ধারার অধীনে ভরণপোষণের জন্য পারিবারিক আদালতে আবেদন করেন। ২০০৯ সালে, দারুল কাজা আদালত বিবাহবিচ্ছেদ অনুমোদন করে এবং তালাকনামা জারি করা হয়। কিন্তু পারিবারিক আদালত শাহজাহানের ভরণপোষণের দাবি খারিজ করে দেয়। আদালত বলেছে যে স্বামী শাহজাহানকে ছেড়ে যাননি, কিন্তু তার স্বভাব ও আচরণের কারণে বিরোধ দেখা দেয় এবং তিনি নিজেই বাড়ি ছেড়ে চলে যান। পারিবারিক আদালতের এই যুক্তি সুপ্রিম কোর্ট খারিজ করে দিয়েছে। আদালত বলেছে যে পারিবারিক আদালত ধরে নিয়েছে যে যেহেতু এটি তাদের দুজনেরই দ্বিতীয় বিয়ে, তাই যৌতুক দাবির কোনও সম্ভাবনা নেই। বিচারপতি আমানউল্লাহ বলেন, ‘পারিবারিক আদালতের এই যুক্তি আইনের নীতির বাইরে এবং কেবল অনুমানের উপর ভিত্তি করে। আদালতের এটা ধরে নেওয়া ভুল যে দ্বিতীয় বিয়েতে যৌতুক দাবি করা যাবে না।’
সুপ্রিম কোর্ট আরও স্পষ্ট করে বলেছে যে শাহজাহান ২০০৫ সালের নিষ্পত্তি পত্রে তার দোষ স্বীকার করেননি, যেমনটি পারিবারিক আদালতের রায়ে বলা হয়েছিল। চুক্তিপত্রে কেবল এটি লেখা ছিল যে উভয় পক্ষ একসাথে থাকবে এবং একে অপরকে হয়রানি করবে না। আদালত বলেছে যে এই ভিত্তিতে শাহজাহানকে ভরণপোষণ থেকে বঞ্চিত করা ভুল।সুপ্রিম কোর্ট স্বামীকে শাহজাহানকে প্রতি মাসে ৪,০০০ টাকা ভরণপোষণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে এবং এই পরিমাণ শাহজাহান পারিবারিক আদালতে আবেদন দাখিলের তারিখ থেকে কার্যকর হবে। আদালত আরও বলেছে যে, সন্তানদের জন্য প্রদত্ত ভরণপোষণের পরিমাণ আবেদনের তারিখ থেকে প্রযোজ্য হবে, তবে মেয়ের ক্ষেত্রে এটি কেবল নাবালক হওয়া পর্যন্ত প্রযোজ্য হবে। স্বামীকে চার মাসের মধ্যে পারিবারিক আদালতে এই পরিমাণ জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্ট আরও যোগ করেছে যে ধারা ১২৫ হল একটি কল্যাণমূলক আইন যার লক্ষ্য স্ত্রী এবং সন্তানদের নিঃস্ব হওয়া থেকে রক্ষা করা। আদালত বলেছে যে বিচারিক প্রক্রিয়ায় বিলম্বের কারণে আবেদনকারীর কষ্ট পাওয়া উচিত নয়। এই সিদ্ধান্ত কেবল শরিয়া আদালতের আইনি অবস্থা স্পষ্ট করেনি বরং নারীর অধিকার রক্ষার জন্য একটি শক্তিশালী বার্তাও দিয়েছে।।