শারদোৎসব ২০২৪,০৮ অক্টোবর : আজ নবরাত্রির ষষ্ঠ দিন, মহাষষ্ঠী । আজ মা কাত্যায়নীকে উদযাপন করা হয়, দেবী ভয়ঙ্কর শক্তি ও সাহসের প্রতীক এবং মহিষাসুর মর্দিনী । তিনি ঋষি কাত্যায়নের কন্যা হিসাবে পরিচিত, তাই তাঁর নাম কাত্যায়নী। আমরা দেবী কাত্যায়নীর সম্পর্কে আরও জানব, হিন্দু পৌরাণিক কাহিনীতে দেবীর উৎস, তাৎপর্য এবং প্রতীকবাদ সম্পর্কে বুঝতে পারব।
মা কাত্যায়নীর উৎপত্তি
কাত্যায়ন নামক এক মহর্ষি ছিলেন। তিনি বহু বছর ধরে মহামায়া কে কন্যা রূপে প্রাপ্তির জন্য কঠিন তপস্যা করেন। মহামায়া তার মনস্কামনা পূর্ণ করলেন ঋষি কাত্যায়নের তপস্যায় মা তার ঘরে আসেন, তাই তার নাম কাত্যায়িনী। মহিষাসুরকে বধের জন্য এই দেবীর আবির্ভাব। দানর রাজ মহিষাসুরের অত্যাচার চরম সীমা অতিক্রম করলে দেবতাদের ও ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশের তেজে এক দেবীর আবির্ভাব হল। এই দেবীকে প্রথম কাত্যায়ন ঋষি পূজা করেন। তাই দেবীর আর এক নাম কাত্যায়নী। এই দেবী যুদ্ধে সেনা মন্ত্রী সমেত মহিষাসুরকে বধ করেন। তাই দেবীকে মহিষমর্দিনী নামেও ডাকা হয়। শাক্তধর্ম মতে, তিনি মহাশক্তির একটি ভীষণা রূপ এবং ভদ্রকালী বা চণ্ডীর মতো যুদ্ধদেবী রূপে পূজিতা। লোকবিশ্বাস অনুযায়ী, তাঁর গাত্রবর্ণ দুর্গার মতোই লাল। খ্রিষ্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দীতে রচিত পতঞ্জলির মহাভাষ্য গ্রন্থে তাঁকে মহাশক্তির আদিরূপ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কৃষ্ণ যজুর্বেদের অন্তর্গত তৈত্তিরীয় আরণ্যকে দেবী কাত্যায়নীর প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায়। স্কন্দ, বামন ও কালিকা পুরাণ অনুযায়ী, মহিষাসুর বধের নিমিত্ত দেবগণের ক্রোধতেজ থেকে তাঁর জন্ম। ভারতের অধিকাংশ অঞ্চলে এই পৌরাণিক ঘটনাটির প্রেক্ষাপটেই বাৎসরিক দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।
দেবী কাত্যায়নীর প্রতিমা
মা কাত্যায়নী দশ ভুজা আবার চতুর্ভুজাও । দেবীর বাহন সিংহ। দশভুজা দেবীর হাতে ত্রিশূল, ধনুক, বাণ, বজ্র, শঙ্খ, চক্র, পাশ, গদা, খজ্ঞা,ঢাল আদি অস্ত্র থাকে। চতুর্ভুজা দেবীর ওপরের দক্ষিণ হস্তে অভয় মুদ্রা ও বাম হস্তে পদ্ম থাকে, নীচের দক্ষিণ হস্তে বর মুদ্রা ও তরোয়াল থাকে। ইনি স্বর্ণের মতো উজ্জ্বল।
কাত্যায়নী মাতার জন্য মন্ত্র
ওঁ দেবী কাত্যায়নায় নমঃ
চন্দ্রহসজ্জ্বলকার, শারদুলভরা বাহন।
কাত্যায়নী শুভম, দাদ্যা দেবী দানব ঘাটিনী।।
ইয়া দেবী সর্বভূতেষু মা কাত্যায়নী রূপেন সংস্থিতা ।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ।।
নবরাত্রির সময় দেবী কাত্যায়নীর পূজা কীভাবে করবেন ?
মা কাত্যায়নীর পূজা করার জন্য এখানে কয়েকটি আচার-অনুষ্ঠান রয়েছে যা আপনি অনুসরণ করতে পারেন : খুব ভোরে উঠুন এবং যেখানে আপনি আচার অনুষ্ঠান করবেন সেই স্থানটি পরিষ্কার করুন।স্নান করুন এবং পরিষ্কার জামাকাপড় পরুন, বিশেষত লাল রঙের কিছু কারণ এটি মা কাত্যায়নীর সাথে যুক্ত রঙ। একটি ঘি দিয়া (মাটির প্রদীপ) জ্বালান এবং চারপাশকে শুদ্ধ করার জন্য ধূপকাঠি জ্বালান। মা কাত্যায়নীকে ফুল/মালা, কুমকুম (সিঁদুর) এবং ভোগ প্রসাদ অর্পণ করুন। অতঃপর, দেবীকে আবাহন করার জন্য দুর্গা সপ্তশতী পাঠ এবং দুর্গা চালিসা পাঠ করুন। আপনি মা কাত্যায়নী মন্ত্রগুলিও জপ করতে পারেন। শেষে, দুর্গা আরতি করুন এবং কাত্যায়নী মাতার আশীর্বাদ নিন।
খ্রিষ্টীয় পঞ্চম-ষষ্ঠ শতাব্দী নাগাদ রচিত মার্কণ্ডেয় পুরাণের অন্তর্গত দেবীমাহাত্ম্যম্ ও একাদশ-দ্বাদশ শতাব্দীতে রচিত দেবীভাগবত পুরাণ গ্রন্থে কাত্যায়নীর দিব্যলীলা বর্ণিত হয়েছে। খ্রিষ্টীয় দশম শতাব্দীতে রচিত কালিকা পুরাণে, উজ্জীয়ন (ওড়িশা) দেবী কাত্যায়নী ও জগন্নাথের ক্ষেত্রের কথা উল্লেখ আছে । দেবী কাত্যায়নী পূজা অতি প্রাচীন কাল থেকেই প্রচলিত।
মা কাত্যায়নীর পূজা করে গোপিনী গন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কে পতি রূপে পেয়েছিলেন। দেবীকে ব্রজ গোপী মণ্ডলের দেবী বলা হয়। ইনি ভক্ত দের চতুর্বিধ ফল দেন । রোগ, শোক, দুর্গতি, বিপদ থেকে রক্ষা করেন। এঁনার কৃপায় পাপ রাশি ধ্বংস হয়। ইনি পরম পদ, অলৌকিক তেজ প্রদান করেন। যোগশাস্ত্র ও তন্ত্র মতে, কাত্যায়নী আজ্ঞা চক্রের অধিষ্ঠাত্রী দেবী এবং এই বিন্দুতে মনোনিবেশ করতে পারলে তাঁর আশীর্বাদ পাওয়া যায়।
মা কাত্যায়নী সিংহবাহন। এবং চতুর্ভুজা। ইনি ভগবানের পথে মানুষকে মতি দেন। বৃন্দাবনে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ব্রজবালাদের কাত্যায়নী ব্রত করতে বলেছেন। দুর্গাপুজার ষষ্ঠ দিনে কাত্যায়নী পুজা করা হয়।।