এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,২১ অক্টোবর : শিলিগুড়ির বিজেপি বিধায়ক এবং বিরোধী চিফ হুইপ শঙ্কর ঘোষ গত ১৯ অক্টোবর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে একটি চিঠি পাঠিয়ে অভিযোগ করেছেন যে “পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিংয়ের খড়িবাড়ি গ্রামীণ হাসপাতাল কর্তৃক জাল জন্ম ও মৃত্যু সনদ” ইস্যু করা হচ্ছে । রাজ্য বিজেপির সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যের অভিযোগ, ওই ভূয়ো জন্ম ও মৃত্যু সনদ দিয়ে ভারতীয় নাগরিক বনে যাচ্ছে বাংলাদেশিরা । বিষয়টি তিনি “ভারতের সার্বভৌমত্বের জন্যও সরাসরি হুমকি” বলে মন্তব্য করেছেন ।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে পাঠানো চিঠিটি বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, শমীক ভট্টাচার্য ও দার্জিলিং-এর বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্তকে ফরোয়ার্ড করেছেন শঙ্কর ঘোষ । চিঠিটি নিজের এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করেছেন শমীক ভট্টাচার্য । শঙ্কর ঘোষ চিঠিতে লিখেছেন,গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, আগস্ট থেকে অক্টোবরের মধ্যে ৮৫০টিরও বেশি জাল জন্ম ও মৃত্যু শংসাপত্র জারি করা হয়েছে, যেখানে জন্ম ও মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা (১,০০০-এরও বেশি) ইস্যু করা শংসাপত্রের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম (১৭০)।
সার্টিফিকেটগুলি বেশিরভাগই পুরনো তারিখের ছিল এবং অভিযোগ থেকে জানা যায় যে প্রতিবেশী জেলা, রাজ্য এবং দেশের লোকেরা এই সার্টিফিকেটগুলি পেয়েছে। প্রাথমিক তদন্তের ফলে একজন অস্থায়ী ডেটা এন্ট্রি অপারেটরকে বরখাস্ত করা হয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে, কিন্তু তিনি এখনও গ্রেফতার নন। উল্লেখযোগ্যভাবে, এই সার্টিফিকেটগুলি অনুমোদনকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
তিনি আরও লিখেছেন,পশ্চিমবঙ্গে আসন্ন ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (SIR) এর পরিপ্রেক্ষিতে, উদ্বেগ দেখা দিচ্ছে যে এই জাল শংসাপত্রগুলি অনুপ্রবেশকারীদের ভোটার তালিকায় ভোটার এবং ভারতীয় নাগরিক হিসেবে থাকতে সাহায্য করতে পারে যা সম্পূর্ণ অবৈধ। বৃহৎ আকারের আর্থিক লেনদেন এবং স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার অভিযোগ পরিস্থিতিকে আরও বাড়িয়ে তোলে। এই ঘটনাটি ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে এবং এই ধরনের অপকর্ম প্রতিরোধে রাজ্যের ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানিয়েছেন, ১). বিষয়টির পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করুন, জড়িতদের চিহ্নিত করুন এবং বিচার করুন। ২). অন্যান্য গ্রামীণ হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে অনুরূপ ঘটনা রোধ করতে রাজ্যব্যাপী তদন্ত সম্প্রসারণ করুন। ৩). জবাবদিহিতা এবং সরকারি নিয়ম মেনে চলা নিশ্চিত করার জন্য অস্থায়ী পদ স্থায়ী করার কথা বিবেচনা করুন। জাল আধার কার্ডের মতো ঘটনার কারণে পশ্চিমবঙ্গের সুনাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জাল জন্ম সনদের কেন্দ্রস্থলে পরিণত হওয়া থেকে এটিকে রোধ করা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই গুরুতর সমস্যা সমাধানের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ নিশ্চিত করে আমি এই বিষয়ে আপনার দ্রুত মনোযোগ কামনা করছি।
শমীক ভট্টাচার্য লিখেছেন,দার্জিলিং জেলার খারিবাড়ি, যা সীমান্তবর্তী এলাকা এবং উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ, সেখানে জন্ম ও মৃত্যু শংসাপত্র জালভাবে জারি হওয়ার খবর উদ্বেগজনক । ভুয়ো শংসাপত্রের মাধ্যমে বিদেশীরা ভারতীয় নাগরিকত্বের কাগজ পাচ্ছে—এটি শুধু আইন ভঙ্গ নয়, ভারতের সার্বভৌমত্বের জন্যও সরাসরি হুমকি।
রাজ্য সরকারের প্রশাসনিক উদাসীনতা এবং দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যবস্থাপনার কারণে সীমান্তে এমন ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে এখনই কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা (CBI/NIA)-কে সম্পূর্ণ অনুসন্ধান চালানোর দাবী রাখছি।এই তথ্য প্রথম প্রকাশ করেছেন বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ, যিনি রাজ্যের প্রশাসনিক উদাসীনতা এবং সীমান্ত নিরাপত্তার ঝুঁকি সামনে এনেছেন।’।