শ্যামসুন্দর ঘোষ,বর্ধমান,০৬ আগস্ট : চার সাংগঠনিক জেলার দলীয় সভাপতিদের নাম ঘোষণা করলেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য ৷ তার মধ্যে দার্জিলিং সাংগঠনিক জেলায় সঞ্জীব তামাং, ব্যারাকপুর সাংগঠনিক জেলায় তাপস ঘোষ, বনগাঁ সাংগঠনিক জেলায় বিকাশ ঘোষ এবং ঘাটাল সাংগঠনিক জেলায় তন্ময় দাসকে সভাপতি নির্বাচিত করা হয়েছে । আজ বুধবার শমীক ভট্টাচার্য স্বাক্ষরিত দলের লেটার প্যাডে ওই চারজনের নাম ঘোষণা করে বলা হয়েছে, ‘নিম্নলিখিত ব্যক্তিদের পশ্চিমবঙ্গের ভারতীয় জনতা পার্টির সংশ্লিষ্ট সাংগঠনিক জেলার জেলা সভাপতি পদে তাৎক্ষণিকভাবে নিযুক্ত করা হচ্ছে।’
কিন্তু এবারেও পূর্ব বর্ধমান সদর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বদল নিয়ে কোনো উচ্চবাচ্চ করা হয়নি । প্রসঙ্গত,পূর্ব বর্ধমান জেলা সদর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি অভিজিৎ তাকে নিয়ে বিজেপির অভ্যন্তরে অসন্তোষের সূত্রপাত বিগত লোকসভা ভোটের ফল ঘোষণার পর থেকেই । এই সাংগঠনিক জেলার অন্তর্গত বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপির হেভিওয়েট প্রার্থী দিলীপ ঘোষ তৃণমূলের কাছে শোচনীয় পরাজয়ের পর দলের ভিতর থেকেই অন্তর্ঘাতের অভিযোগ উঠেছিল । দিলীপের পরাজয়ে সরাসরি অভিযোগের আঙুল তোলা হয় জেলা সভাপতির দিকে । তখন থেকেই জেলা সভাপতি বদলের দাবি উঠছিল । এমনকি ভাতার বিধানসভায় ২০২১ সালের বিজেপি প্রার্থী মহেন্দ্রনাথ কোঁয়ার প্রকাশ্যে অভিজিৎ তায়ের বিরুদ্ধে মুখ খোলেন । দিলীপের পরাজয়ের জন্য জেলা সভাপতিকে দায়ি করে তাকে অপসারণের দাবিও জানান তিনি । কিন্তু রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় বিজেপির সাংগঠনিক পদে রদবদল হলেও পূর্ব বর্ধমান সদর সাংগঠনিক জেলা সভাপতির বদল হয়নি৷ এনিয়ে বিজেপির মধ্যে চাপা ক্ষোভও আছে৷
আর সেই ক্ষোভের প্রতিফলন দেখা গেছে গতকাল, মঙ্গলবার । বিক্ষুব্ধরা ‘সাংগঠনিক জেলা বাঁচানোর’ ডাক দিয়ে বর্ধমান শহরের বিভিন্ন প্রান্তে অভিজিৎ তায়ের বিরুদ্ধে ব্যানার লাগায় । বর্তমান জেলা সভাপতির বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর অভিযোগ যে তিনি কাগজে কলমে জেলা সভাপতি । সাংগঠনিক কাজে সারা বছর তার কোনো ভূমিকাতেই দেখা যায়না । ফলশ্রুতিতে বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রে পরাজয়ের মুখ দেখতে হয়েছিল দলকে । এছাড়া পঞ্চায়েত বা জেলা পরিষদের একটা আসনেও দলকে তিনি জেতাতে পারেননি ।
উল্লেখ্য, ২০২৬ সালের বিধানসভার ভোটের আগে অনেকটাই ব্যাকফুটে আছে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস । প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি, আরজি করের অভয়ার ধর্ষণ- খুনের ন্যায়বিচার, বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা মুসলিমদের অনুপ্রবেশ করিয়ে ভোটার বানিয়ে দেওয়া প্রভৃতি একরাশ ইস্যুতে বিপাকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির দল । রাজ্য জুড়ে বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে যে প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়া প্রবল, সেটা খোদ তৃণমূলও অনুভব করছে হাড়েহাড়ে । আর এই পরিস্থিতি থেকে উতরবার পথ খুঁজছে তারা । সেই উদ্দেশ্যে শুভেন্দু- দিলীপের লড়াইয়ে ইন্ধন যোগানোর অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূলের বিরুদ্ধে । এমতবস্থায় পূর্ব বর্ধমান জেলার বিজেপি সভাপতিকে দলের একাংশের ক্ষোভকে যে মমতা ব্যানার্জির দল কাজে লাগাবে সেটা দিনের আলোর মত পরিষ্কার ।।

