এইদিন ওয়েবডেস্ক,ভাতার(পূর্ব বর্ধমান),০৪ নভেম্বর : পশ্চিমবঙ্গে নারী নির্যাতনের ঘটনার পাশাপাশি মন্দিরে চুরির ঘটনা কার্যত নিয়মিত হয়ে পড়েছে । কালীপূজার আবহে পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রাম ও আউশগ্রামে একের পর এক চুরির ঘটনা ঘটে । এবারে আউশগ্রামের পার্শ্ববর্তী ব্লক ভাতারের একের পর এক মন্দিরে দুঃসাহসিক চুরির ঘটনা ঘটেছে । রবিবার ভাইফোঁটার রাতে ভাতারের আমারুন বাজারের একটা শিবমন্দিরে এবং এওড়া গ্রামের নারায়ণ মন্দির ও রঘুনাথ মন্দিরে চুরির ঘটনা ঘটেছে । দুষ্কৃতীরা দুই মন্দিরের একাধিক তালা ভেঙে দেবদেবীর সোনারূপার যাবতীয় অলঙ্কার ও কাঁসা পিতলের বাসনপত্র নিয়ে চম্পট দেয় । আজ সোমবার সকালে চুরির ঘটনা নজরে পড়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের । একই রাতে একের পর এক গ্রামের মন্দিরে দুঃসাহসিক চুরির ঘটনায় স্বভাবতই নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এলাকার বাসিন্দারা ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আমারুন স্টেশনে ঐক্যতান পাঠাগার সংঘ ‘ নামে ক্লাবের সর্বজনীন শিবমন্দিরে চুরির ঘটনা ঘটেছে রবিবার ও সোমবারের মধ্যরাতে । ওইদিন ক্লাবের দেবী কালীর নিরঞ্জন ছিল । সেই উপলক্ষে গনভোগেরও ব্যবস্থা করা হয় । প্রতিমা বিসর্জনের পর খাওয়াদাওয়া পর্ব রাত্রি প্রায় ১২ টা নাগাদ সম্পন্ন হয় । এরপর পূজো উদ্যোক্তারা মন্দিরে তালা লাগিয়ে যে যার বাড়ি চলে যান । আজ সকালে এসে তারা দেখেন মন্দিরের দরজার সব তালা ভাঙা । ভিতরে ঢুকতেই ভগবান শিব ও লোকনাথ বাবার মূর্তিতে পরানো যাবতীয় সোনারূপার গহনা উধাও হয়ে গেছে । পাশাপাশি মন্দিরের প্রণামী বাক্স ভেঙে নগদ টাকাপয়সা নিয়েও চম্পট দিয়েছে দুষ্কৃতীরা৷ গহনা ও নগদ মিলে লক্ষাধিক টাকার চুরি হয়ে গেছে বলে দাবি মন্দির কর্তৃপক্ষের ।
পাশাপাশি একই রাতে ভাতার থানার এওড়া গ্রামের মাজিপাড়ার রঘুনাথ মন্দিরে এবং ঘোষ পাড়ার নারায়ণ মন্দিরে দুঃসাহসিক চুরির ঘটনা ঘটেছে । তবে মন্দিরে তেমন কিছু দামি সামগ্রী ছিল না বলে জানা গেছে । দুই মন্দির থেকে তিনটি রূপোর পৈতে চুরি গেছে বলে জানিয়েছেন সেবাইত পরিবারের সদস্য গৌরিশঙ্কর মাজি। খবর পেয়ে দু’জায়গাতেই তদন্তে যায় ভাতার থানার পুলিশ । তবে আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত পুলিশ চুরির কোনো কিনারা করতে পারেনি বলে জানা গেছে ।
প্রসঙ্গত,এর আগে আউশগ্রামের দেয়াশা গ্রামের দাস পরিবারের কালীমন্দিরে দুঃসাহসিক চুরির ঘটনা ঘটে । মন্দিরের দুটি গেটের একাধিক তালা ভেঙে লক্ষাধিক টাকার দেবদেবীর অলঙ্কার চুরি যায়। ওই ঘটনার পরের দিনেই আউশগ্রামের ব্রজপুর গ্রামে একটি কালীমন্দিরে তালা ভেঙে দেবীর অলঙ্কার নিয়ে চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা । তার আগে দুর্গাপুজোয় নবমীর রাতে কেতুগ্রামের পাচুন্দি গ্রামে চট্টোপাধ্যায় পরিবারের দুর্গামন্দিরের তালা ভেঙে ৩০ লক্ষাধিক টাকা মূল্যের দেবদেবীর সোনা ও রুপোর অলঙ্কার চুরি হয় । ওদিন রাতে গামছায় মুখ ঢাকা এক দুস্কৃতীর চুরি করার ওই দৃশ্য ধরা পড়েছিল মন্দিরের ভিতরে লাগানো সিসিটিভি ক্যামেরায় । যদিও এখনো পুলিশ ওই দুষ্কৃতীর নাগাল করতে পারেনি বলে জানা গেছে ।
ভাতারের চুরির ঘটনা গুলিতে যাযাবরদের একটা দল জড়িয়ে থাকতে পারে বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছে স্থানীয় বাসিন্দারা । স্থানীয়রা জানান,দেয়াশা গ্রামে চুরির আগের দিন তাদের গ্রামে এসেছিল যাযাবরদের একটা দল । এমনকি যে দাস পরিবারের কালীমন্দিরে চুরির ঘটনা ঘটে, তাদের বাড়িতে ২ জন গিয়ে খাবার চাইতে গিয়েছিল বলে জানান তারা । পাশাপাশি এওড়া গ্রামের মাজিপাড়ার বাসিন্দারা জানিয়েছেন রবিবার সকাল সাড়ে এগারোটা নাগাদ যাযাবরদের ৫-৬ জনের একটা দল গ্রামে ঘোরাঘুরি করছিল । তাদের সন্দেহ এলাকায় রেইকি করতে এসেছিল ওই দলটি । পুলিশ জানিয়েছে,বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে ।।