প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০৭ আগষ্ট : লাইফ জ্যাকেট না পরে মদ্যপ অবস্থায় নৌকা চড়াই কাল হল । ছাড়িগঙ্গায় নৌকা উল্টে গভীর জলে তলিয়ে গিয়ে মৃত্যু হল পাখিরালয় ভ্রমণে আসা দুই পর্যটকের । বরাত জোরে প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন একই পর্যটক দলের অপর দুই সদস্য ও নৌকার মাঝি । ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব বর্ধমানের কালনা মহকুমার পূর্বস্থলী ২ ব্লকে চুপির পাখিরালয় সংলগ্ন ছাড়িগঙ্গায় । পুলিশ জেনেছে মৃতদের নাম সৈকত চট্টোপাধ্যায় ও সৌরভ ভট্টাচার্য ।যাঁরা প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন তারা হলেন, তন্ময় শীল শর্মা,তনয় মাঝি ও নৌকার মাঝি মদন পারুই । নৌকার মাঝি পূর্বস্থলীর চুপি এলাকার বাসিন্দা । বাকি চার পর্যটকের বাড়ি নদীয়ার কৃষ্ণনগরে । কি ভাবে এই নৌকাডুবির ঘটনা ঘটলো তার তদন্ত পুলিশ শুরু করেছে । নৌকার মাঝি মদন পারুই যদিও এই দুর্ঘটনা ঘটার জন্য পর্যটকদেরকেই দায়ী করেছেন ।
কালনা মহকুমায় নৌকা ডুবির কারণে এই প্রথম কারুর মৃত্যু হল এমনটা নয় । ইতি পূর্বে ২০১৬ সালে ভাগীরথীতে নৌকা ডুবির ঘটনা ঘটেছে।তাতে ১৬ জনেরও বেশী নৌকা যাত্রীর মৃত্যু হয় । কিন্তু ছাড়িগঙ্গায় নৌকা ডুবির ঘটনা এই প্রথম ঘটলো।শীতের মরশুমে দূর দূরান্তের বহু পর্যটক চুপির পাখিরালয়ে বেড়াতে আসেন। পাখিরালয়ে বেড়াতে এসে পর্যটকরা নৌকায় চড়ে ছাড়িগঙ্গায় ঘুরে বেড়ান। শনিবার ছাড়িগঙ্গায় নৌকা ডুবিতে দুই পর্যটকের মৃত্যুর ঘটনা চিন্তা বাড়িয়েছে প্রশাসনের ।
পুলিশ প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে,শনিবার নদীয়ার কৃষ্ণনগর থেকে চার বন্ধু সৈকত চট্টোপাধ্যায়, সৌরভ ভট্টাচার্য,.তন্ময় শীল শর্মা ও তনয় মাঝি পূর্বস্থলীর চুপির পাখিরালয়ে বেড়াতে আসেন। তাঁদের বয়স ৩৫ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে হবে। সৈকত বিদ্যুৎ দফতরের কালনা ডিভিশনে সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার পদে কর্মরত ছিলেন । সৌরভ মেডিকেল রিপ্রেজেনটেটিভের কাজ করতেন । তন্ময় হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক । আর তনয় হাইস্কুলে শিক্ষকতা করেন । ইপাখিরালয় ঘুরতে এসে সন্ধ্যা নাগাদ বাড়ি ফেরার জন্য ওই পর্যটকরা নৌকায় চেপে ছাড়িগঙ্গার উপর দিয়ে যাচ্ছিলেন। ওই সময়েই নৌকাটি পাল্টি খায়।নৌকায় থাকা মাঝি মদন পারুই ও চার পর্যটক ছাড়িগঙ্গার জলে পড়ে গিয়ে হাবুডুবু খেতে থাকেন। এই ঘটনা নজরে আসতেই স্থানীয় মানুষজন চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করেন ।তা শুনে ঘটনাস্থলের আশপাশের বাসিন্দারা জলে নেমে মদন পারুই সহ তন্ময় শীল শর্মা,তনয় মাঝিকে উদ্ধার করে।এরই মধ্যে দুর্ঘটনার খবর পেয়েই পূর্বস্থলী থানার পুলিশ ও এলাকার বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায় ঘটনাস্থলে পৌছান।উদ্ধার হওয়া
দুই পর্যটক ও নৌকার মাঝিকে পূর্বস্থলীর ব্লক
হাসপাতালে পাঠানো হয়।পরে তাঁদের স্থানান্তর
করা হয় নদীয়ার প্রতাপনগর স্টেট জেনারেল
হাসপাতালে।তলিয়ে যাওয়া বাকি দু’জনের খোঁজ পেতে ছাড়িগঙ্গায় ডুবুরি নামিয়ে তল্লাশি চালানো শুরু হয়। রাতে সৌরভ ভট্টাচার্যর মৃতদেহ উদ্ধার হয় ।এরপর রবিবার দুপুরে ছাড়িগঙ্গা থেকে উদ্ধার হয় সৈকত চট্টোপাধ্যায়ের মৃতদেহ ।
নৌকার মাঝি মদন পারুই উদ্ধারকারীদের জানান, নৌকায় চড়ে বসা পর্যটকরা মদ্যপ অবস্থ্যায় ছিল । মদের বোতল হাতে নিয়ে নৌকার উপরেই তাঁরা দাপাদাপি হুল্লোড় শুরু করে।।সেই কারণে নৌকা দুলছিল।দাপাদাপি বন্ধ করার কথা পর্যটকদের বলা হলেও তাঁরা কোন কথা শোনেন না। নৌকা একদিকে কাত হয়ে গিয়ে ছাড়িগঙ্গায় পাল্টি খেয়ে যায় । মদন পারুই জানান,নৌকা পাল্টি খেলে তিনি সহ সকল পর্যটকরা জলে পড়ে যান ।
এলাকার বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায় জানান, কৃষ্ণনগরের কয়েকজন চুপির পাখিরালয়ে বেড়াতে আসেন।এরপর নৌকা করে যাওয়ার সময় নৌকা উল্টে গেলে তাঁরা ছড়িগঙ্গার গভীর জলে তলিয়ে যায় । রাত পর্যন্ত মাঝি সহ চারজনকে উদ্ধার করা সম্ভব হয় ।তাদের মধ্যে একজন মৃত অবস্থায় ছিলেন।এদিন বিকালে আরো এক পর্যটকের মৃতদেহ উদ্ধার হয় ।’এসডিপিও ( কালনা) সপ্তর্ষি ভট্টাচার্য্য বলেন,’ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে ।’
এদিকে ছাড়িগঙ্গায় নৌকাডুবির ঘটনা ঘটনার পর বেশ কিছু গাফিলতির বিষয়গুলি সামনে এসেছে ।এলাকাবাসী ও উদ্ধারকারীদের কথায় জানা গিয়েছে, নৌকা আরোহী পর্যটকদের কেউ লাইফ জ্যাকেট ব্যবহার করেন নি । বিকাল ৪ টের পর নৌকায় চড়ে কোন পর্যটকদের ছাড়িগঙ্গায় ঘোরার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে । তার পরেও নদীয়ার
কৃষ্ণনগরের এই পর্যটকরা কি ভাবে সন্ধ্যার পরে মদ্যপ অবস্থায় ছাড়িগঙ্গায় চৌকা চড়ে ঘুরলেন সেই বিষয়টি প্রশাসনকেও ভাবাচ্ছে ।।