হঠাৎ প্রাপ্তির মতই হিমাংশু যেমন জীবনে এসেছিল, তেমনি একদিন অকস্মাৎ এতদিনের জোড়াল সম্পর্কটাও এক লহমায় ছিন্ন হয়েছিল এক অপ্রত্যাশিত আগন্তুকের জন্য। তবে হিমাংশুর থেকেও তিয়াসার বেশি রাগ, ক্ষোভ ওই ঋত্বিকার উপর। একজন মেয়ে হয়ে অন্য একজনের সংসার কী করে ভাঙতে পারে, সেটা ভেবেই অবাক লাগে। এই সকল নিম্নরুচি মানসিকতার মহিলাদের জন্যই আজকে সকল নারীদের গায়ে কলঙ্ক লাগে। চোখ বুজে নারীদের ভরসা করতে পারে না সমাজ।
ভাবতে ভাবতে আবার তিক্ততায় ভরে গেল তিয়াসার মন। হিমাংশুকে মন থেকে মুছে দিতে পারেনি আজও। তার মন জুড়ে শুধু একটি মাত্রই পুরুষ এখনও – সে হ’ল হিমাংশু। তাই সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার পরও হিমাংশুর এই আসা-যাওয়াকে মন থেকে আটকাতে পারে না তিয়াসা। অনেকবার ভেবেছে ওকে আসতে বারণ করবে। কিন্তু হিমাংশু কাছে এলেই অদ্ভুত একটা সম্মোহনে তার কণ্ঠে সাজানো প্রতিবাদী শব্দগুলো কোথায় যে হারিয়ে যায়, বুঝতে পারে না তিয়াসা।
কয়েকজন লোক এসে বাইরের লনটা সুন্দর করে সাজিয়ে দিয়েছে। সন্ধ্যের আকাশের তারারা আজ মেঘের আড়ালে লুকিয়ে থাকলেও সমস্ত বাড়িটা ফুল এবং নানা রঙের আলো দিয়ে সজ্জিত হয়েছে। একফালি চাঁদ মেঘের সঙ্গে লুকোচুরি খেলছে। ঘন কালো মেঘের আস্তরণ তাকে ঢেকে রাখার আপ্রাণ চেষ্টায় মাঝে মাঝে ব্যর্থ হচ্ছে। লনের একপ্রান্তে শেড এর নিচে কয়েকজন ক্যাটারিংএর লোক নানা ধরনের খাবারের সামনে গেস্টদের প্রতীক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে।
চারিদিকে চেয়ার এবং ছোট ছোট রাউন্ড টেবিল দিয়ে সাজানো।
একটা পেঁয়াজি রঙের বেনারসি এবং একগুচ্ছ লাল গোলাপের তোড়া হাতে নিয়ে হিমাংশু তিয়াসার বেডরুমের দরজায় পর্দার এপারে দাঁড়িয়ে মৃদুস্বরে ডাকল,
— টিয়া! একটু বাইরে এস প্লিজ!
টিয়া হাল্কা প্রসাধনে নিজেকে একটু সাজিয়ে নিচ্ছিল, কারণ কিছুক্ষণের মধ্যেই গেস্টরা চলে আসবে। বাইরে হিমাংশুর আওয়াজ শুনে বলল,
— ভিতরে চলে এসো অংশু!
তিয়াসার ডাকে পর্দা সরিয়ে ঘরের ভিতরে ঢুকে দেখল, ড্রেসিং।টেবিলের আয়নার সামনে বসে খোঁপা বাঁধছে তিয়াসা। তিয়াসার ঘন লম্বা চুল হিমাংশুর খুব পছন্দের ছিল। আজ আবার মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে দেখল,একটা সাধারণ খোঁপাতেও কী সুন্দর লাগছে তিয়াসাকে!
— আরে বল, কী বলবে!
তিয়াসার কথায় সম্বিৎ ফিরে হিমাংশু বলল,
— Happy Anniversary তিয়াসা! এই শাড়িটা আজ তুমি পরলে আমি ধন্য হ’ব।
হাত বাড়িয়ে ফুলের তোড়া এবং শাড়িটা নিয়ে তিয়াসা বলল,
— thank you so much!
তবে শাড়িটা খুব ভারী তো! তুমি তো জান এমন ভারী শাড়ি আমার পরতে ভালো লাগে না!
— আজ কিছুক্ষণের জন্য পর। পরে চেঞ্জ করে নিও।
— বেশ, ঠিক আছে।
- আমি বাইরে আছি, তুমি রেডি হয়ে তাড়াতাড়ি চলে এস। সবাই আসার আগে আমাদের ওখানে থাকা উচিৎ।
— ঠিক আছে, আমি দশ মিনিটেই আসছি।
বেরিয়ে গেল হিমাংশু। একপলকে তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল তিয়াসা। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।
এইটুকু বা কম কী! মুহূর্তটা যেন এক একটু সুখের ছোঁয়ায় মনের আঁধার ঘরে মিটমিট করে জ্বলে থাকা প্রদীপে একটু তেল ঢেলে দিয়ে গেল। (ক্রমশঃ)