এইদিন ওয়েবডেস্ক,নাগপুর,১৯ মার্চ : নাগপুরে বেছে বেছে হিন্দুদের দোকানে হামলা চালিয়েছিল আওরঙ্গজেবের অমুসারীরা! টাইমস অ্যালজেবরার খবর অনুযায়ী,নাগপুরের একজন হিন্দু দোকান মালিক ক্যামেরার সামনে কেঁদে ফেলেন ৷ তিনি বলেন, ‘আমি হিন্দু বলেই তারা আমার দোকান ধ্বংস করে দিয়েছে ওরা । তারা অন্য দোকানের কাঁচ পর্যন্ত ভাঙেনি । কেন তারা আমার দোকান ধ্বংস করল ? কেন কেবল আমার দোকানকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল? এটা কেবল টাকার ব্যাপার নয়। এটা আমার আত্মসম্মানের ব্যাপার ।’ এরপর তিনি ডুকরে কেঁদে ওঠেন । এদিকে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশ নাগপুরের সাম্প্রদায়িক হিংসাকে ‘সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র’ বলে অবিহিত করেছেন৷
মহারাষ্ট্র বিধানসভায় বক্তৃতা দিতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশ বলেন যে নাগপুরের সহিংসতা সুপরিকল্পিত ছিল এবং এটি ঘটানোর জন্য আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশ জানিয়েছেন যে হিংসায় ৩৩ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন, যার মধ্যে তিনজন ডিসিপিও রয়েছেন। একজন ডিসিপিকে এমনকি কুড়াল দিয়ে আক্রমণ করা হয়েছিল, যা এর ভয়াবহতা প্রমান করে । পাঁচজন বেসামরিক নাগরিকও আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে তিনজনকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে কিন্তু একজন এখনও আইসিইউতে রয়েছেন। তিনি জানান যে হিংসার স্থান থেকে পাথর ভর্তি একটি ট্রলি উদ্ধার করা হয়েছে এবং ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। কিছু নির্দিষ্ট (হিন্দু) বাড়ি এবং দোকান লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল, যা স্পষ্ট করে যে এই সমস্ত আগে থেকেই পরিকল্পনা করা হয়েছিল।
মুখ্যমন্ত্রী ফড়নবিশ কঠোর সুরে বলেন যে পুলিশের উপর আক্রমণ সহ্য করা হবে না এবং অপরাধীদের রেহাই দেওয়া হবে না। এ পর্যন্ত পাঁচটি এফআইআর নথিভুক্ত করা হয়েছে এবং ৫০ জনকে আটক করা হয়েছে। নাগপুরের ১১টি থানা এলাকায় কারফিউ জারি করা হয়েছে। তিনি এই সাম্প্রদায়িক হিংসার জন্য আওরঙ্গজেবের সমাধি সম্পর্কে ছড়িয়ে পড়া একটি গুজবকে দায়ী করেন, যেখানে বলা হয়েছিল যে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এবং বজরং দল ইসলামের ধর্মগ্রন্থ পুড়িয়ে দিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন,ছাভা ছবিটি আওরঙ্গজেবের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উস্কে দিয়েছে, কিন্তু শান্তি বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। তিনি জনগণকে আইন নিজের হাতে না তুলে পুলিশকে সমর্থন করার আহ্বান জানান। এই ষড়যন্ত্র সম্পূর্ণরূপে উন্মোচিত করার জন্য তদন্ত চলছে বলে তিনি জানান ।
এই বিষয়ে বিজেপি বিধায়ক প্রবীণ দাটকে একটা চাঞ্চল্যকর দাবি করেছেন। তিনি বলেন, নাগপুরের হিন্দুদের লক্ষ্য করে এই হিংসার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। হংসপুরী এলাকার কথা উল্লেখ করে দাটকে বলেন যে হিন্দু এবং মুসলিমরা সবসময় সেখানে তাদের গাড়ি পার্কিং লটে পার্ক করত, কিন্তু ১৭ মার্চ, ২০২৫ তারিখে, সেখানে একজনও মুসলিমের গাড়ি ছিল না। তারপর সেই পার্কিং লটে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। তিনি বলেন,যেসব যানবাহন, দোকান এবং ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, সেগুলো সবই হিন্দুদের। মুসলমানদের কোনও ক্ষতি হয়নি। দাটকে এটিকে একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র বলে অভিহিত করেছেন এবং বলেছেন যে বহিরাগতরা এসে প্রমাণ নষ্ট করার জন্য সিসিটিভি ক্যামেরা ভেঙে ফেলেছে। তাদের দাবি, এটি হিন্দুদের বিরুদ্ধে একটি পরিকল্পিত আক্রমণ।
উল্লেখ্য,সোমবার (১৭ মার্চ ২০২৫) নাগপুরের কিছু এলাকায় মুসলিমরা হিন্দুদের উপর আক্রমণ করে। হিন্দুদের বাড়িঘরে পাথর ছোঁড়া হয়েছিল। তরবারি হামলার ঘটনা ঘটেছে, পেট্রোল বোমার সাহায্যে যানবাহন পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে এবং যানবাহন ভাঙচুর করা হয়েছে। এই সময় পুলিশের উপর হামলা হয়, যার পরে প্রশাসন পুরো এলাকায় কারফিউ জারি করে। এলাকায় কিছু সময়ের জন্য ইন্টারনেট পরিষেবাও বন্ধ ছিল, যদিও কয়েক ঘন্টার মধ্যেই চালু করে দেওয়া হয় ।।