ক্যাপ্টেন পাঙ্কুল নাগ : একজন “বীরের সাহসিকতা” কে নীরবে চাপা দিয়ে দেওয়ার কারন কি ? একমাত্র কারণ হল “ক্যাপ্টেন পাঙ্কুল নাগ” একজন হিন্দু । তিনি প্রায় ২০০ জন মুসলিমের জীবন বাঁচিয়েছিলেন। এটা খুব পুরনো ঘটনা নয়, মাত্র ৪ দিন আগে হয়েছে…কিন্তু আপনারা কি কোথাও তার নাম শুনেছেন ? পাঙ্কুল নাগকে নিয়ে তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ নেতানেত্রীদের কোনো টুইট আপনাদের কারোর নজরে কি পড়েছে ?
কিন্তু যদি পাইলট মুসলিম হতেন এবং যাত্রীরাও অমুসলিম হতেন, তাহলে এখন পর্যন্ত প্রতি ঘন্টায় মিডিয়ায় ব্রেকিং নিউজ আসত। মন্ত্রীরা একের পর এক টুইট করতেন, সংবাদপত্রগুলি প্রথম পৃষ্ঠায় তার ছবি প্রকাশ করত, এবং প্রতিটি সংবাদ চ্যানেল তাকে ‘দেশের নায়ক’ বলে সম্বোধন করত ।
ইন্ডিগোর ক্যাপ্টেন পাঙ্কুল নাগ নিজের জীবনের পরোয়া না করেই ২২৭ জন যাত্রীর জীবন বাঁচিয়েছিলেন, যাদের বেশিরভাগই কাশ্মীরি মুসলিম এবং বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্যও । কেউ কেউ মন্তব্য করবেন,তাতে কী হয়েছে ? এটা তার কর্তব্য ছিল এবং আর সে নিজের কর্তব্য পালন করেছে ।
গত ২১ মে, দিল্লি থেকে শ্রীনগরগামী ফ্লাইট ৬ই২১৪২ তীব্র শিলাবৃষ্টির কবলে পড়ে। বিমানের সামনের অংশ ভেঙে যায়, প্রবল বেগে নিচে নামতে থাকে, পাইলট জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন – এবং তারপর এক অলৌকিক ঘটনা ঘটল। বিমানটি শ্রীনগর বিমানবন্দরে নিরাপদে অবতরণ করে। একটি প্রাণও হারায়নি । কোনও হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু এই দেশে মানুষ তার উদ্দেশ্য নয়, তার জাত এবং ধর্ম দেখে।
কিন্তু যদি ক্যাপ্টেন পাঙ্কুল নাগের সাহসিকতা একজন মুসলিম পাইলট দেখিয়ে দিতেন, তাহলে লুটিয়েন্স মিডিয়া থেকে শুরু করে সমস্ত সংবাদপত্র সকলেই তার গল্পকে বীরত্বপূর্ণ করে তুলত। কিন্তু আজ সবাই নীরব-কারণ ত্রাণকর্তা একজন হিন্দু।
পহেলগাম আক্রমণের কথা মনে আছে? যেখানে সন্ত্রাসীরা হিন্দু পর্যটকদের নাম এবং ধর্ম জিজ্ঞাসা করার পর হত্যা করেছিল। ভুল করে একজন মুসলিমও মারা গিয়েছিল -তাই সমগ্র সরকারি যন্ত্রপাতি এবং উদারপন্থী গণমাধ্যম তার জন্য আবেগঘন কভারেজ করতে নেমে পড়ে। সংবাদপত্রে সাক্ষাৎকার, মিডিয়া স্টুডিওতে চোখের জল, এমনকি সরকারের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ…।
এখন ক্যাপ্টেন পাঙ্কুল নাগ, যিনি কেবল একজনের জীবন নয়, পুরো বিমানের জীবন বাঁচিয়েছিলেন – তার নাম পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে না । বিরোধী দলের কোনো নেতা টুইট করেনি । এমনকি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী পর্যন্ত করেনি । সরকার টুইট করেনি,মন্ত্রীরা নীরব, এমনকি বিমান সংস্থাটিও নাম গোপন করেছে। মিডিয়ার কথা ভুলে যান, মনে হচ্ছিল যেন কিছুই ঘটেনি।
কারণ ক্যাপ্টেন নাগ একজন হিন্দু—আর মনে হচ্ছে এই দেশে একজন হিন্দুকে প্রশংসা পাওয়ার আগে দশবার ভাবতে হয়, পাছে মুসলিমরা রেগে যায়। এই দেশটি কি সেই দেশ যে তার সেনাবাহিনী, তার পাইলট, তার সাহসী সৈন্যদের স্যালুট করে? তাহলে কেন এর মিডিয়া, এর বিরোধী দল এবং এই দেশের কিছু সরকার এত নির্মম? হিন্দুরা কি সত্যিই দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক?
আর সবচেয়ে বড় প্রশ্ন-এই দেশের একজন হিন্দুর সাহস কি এখন নীরবতার অন্ধকারে হারিয়ে যাবে, কারণ মিডিয়া এবং ব্যবস্থা ভয় পাচ্ছে যে ‘ধর্মনিরপেক্ষ কাঠামো’ ভেঙে পড়তে পারে? ক্যাপ্টেন নাগ ধর্ম বা নাম জিজ্ঞাসা করেননি – তিনি কেবল তার কর্তব্য পালন করেছিলেন, তাও এমন এক সময়ে যখন কাশ্মীরে মুসলিম পর্যটকদের উপর হুমকি অনেক বড় হতে পারত। কিন্তু এই দেশের ব্যবস্থা কী করেছে ? তার নীরবতার মধ্যে লজ্জা আছে, এবং এতে বৈষম্যের গন্ধ আছে।
এখানে সন্ত্রাসীদের ধর্ম প্রকাশ করা হয় না, কিন্তু রক্ষকের ধর্মই ভয়ের কারণ? ভারতকে এখন তার হিন্দু সন্তানদের চিনতে হবে এবং তাদের সম্মান দিতে হবে। অন্যথায় এমন একদিন আসবে যখন সাহসীরাও ধর্মের দিকে তাকাবে। এমনকি যদি আপনি সরকারের সমর্থকও হন..! তাই নিজের জন্য নিজেকেই আওয়াজ
তুলতে হবে..!
বিমান অবতারণের অনুমোদন দেয়নি পাকিস্তান
দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যে পড়ে ইন্ডিগোর ওই বিমানটি প্রথমে নর্দার্ন কন্ট্রোলের (ভারতীয় বিমান বাহিনীর অধীনে) কাছে আন্তর্জাতিক সীমান্ত ঘেঁষে বাঁদিকে মোড় নেওয়ার অনুমতি চেয়েছিল। তবে সেই অনুমোদন পাওয়া যায়নি। এরপর লাহোর ট্রাফিক কন্ট্রোলের আকাশসীমায় প্রবেশের অনুমতি চাওয়া হয়, তবে লাহোরও সেই অনুমতি দেয়নি ।
পাশাপাশি যেটা জানা গেছে যে দিল্লি থেকে শ্রীনগরগামী ইন্ডিগোর যে উড়ানটি প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়েছিল, সেই উড়ানের দুই পাইলটকে ভারতের বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রক সংস্থা ডিজিসিএ আপাতত ‘গ্রাউন্ড’ করেছে । এদিকে অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রী রামমোহন নাইডু পরিস্থিতির গুরুত্ব স্বীকার করেছেন। পাশাপাশি ইন্ডিগোর দুই পাইলটের প্রশংসাও করেছেন। কিন্তু তিনি তাদের নাম প্রকাশ্যে আনেননি ।।